নিজস্ব প্রতিবেদক
মে ২৩, ২০২৫, ১২:০২ এএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
মে ২৩, ২০২৫, ১২:০২ এএম
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে উচ্চ আদালতে দায়ের করা রিট খারিজ করে আদেশ দিয়েছেন আদালত। ফলে ইশরাকের মেয়র হিসেবে শপথ নিতে বাধা নেই বলে জানিয়েছে হাইকোর্ট।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১১টায় বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রিটের আদেশ দিয়েছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ইশরাকের আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন জানান, এ আদেশের ফলে মেয়র পদে ইশরাকের শপথে বাধা নেই। এ সময় আগামী ২৬ মে’র মধ্যে ইশরাককে শপথ না পড়ালে আদালত অবমাননা হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এর আগে ইশরাক হোসেনকে মেয়র পদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত টানা আট দিন আন্দোলন করেন তার সমর্থকরা। গত বুধবার যমুনার পাশাপাশি মৎস্য ভবন ও নগর ভবনের সামনেও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারীরা।
তবে গতকাল আন্দোলনে অবস্থানকালে ইশরাক হোসেন জানান, মেয়র পদে রায় পক্ষে এলেও উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পদত্যাগ চান তিনি। সেই সঙ্গে পদত্যাগ চান আরেক উপদেষ্টা মাহফুজ আলমেরও। অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা ফিরিয়ে আনতে দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে, দ্বিতীয় আরেকজন মাহফুজ আলম, তথ্য উপদেষ্টা, তাকেও পদত্যাগ করতে হবে।’
এর আগে আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ইশরাক হোসেনকে ডিএসসিসির মেয়র ঘোষণা করে গত ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে এর প্রায় দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনো শপথ আয়োজন না করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় উল্টো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন আন্দোলনকারীরা।
উচ্চ আদালতের রায়ে জনগণের বিজয় হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ব্যাংককে চিকিৎসাধীন বিএনপি মহাসচিব বলেন, আশা করি সরকার ইশরাক হোসেনকে শপথ দেয়ার ব্যবস্থা নেবে। সেই সঙ্গে এ বিষয়ে তিনি আর সড়ক অবরোধ না করে জনগণের স্বস্তির জন্য নেতাকর্মীদের রাস্তা থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ জানান। আদালতের আদেশ আর দলের মহাসচিবের নির্দেশের পর নগর ভবন অবরোধ ও চলমান কর্মসূচির ফলে সৃষ্ট জনদুর্ভোগের জন্য নগরবাসীর কাছে ক্ষমা চান ইশরাক হোসেন। গতকাল বিকালে রাজধানীর কাকরাইলে আন্দোলনকারীদের কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে তিনি অনুশোচনা প্রকাশ করেন।
ইশরাক হোসেন বলেন, আপনারা জানেন, আমাদের আন্দোলনের কারণে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। জনগণ ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় আটকে ছিল, নাগরিক সেবা ব্যাহত হয়েছে। এই অজান্তে সৃষ্ট দুর্ভোগের জন্য আমাদের নেতা, আমি ও আমরা নগরবাসীর কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। একই সঙ্গে এটাও বলতে চাই, এই ধরনের কর্মসূচি আমাদের পূর্বপরিকল্পিত ছিল না। বর্তমান সরকার আমাদের সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করায় আমরা বাধ্য হয়ে এই আন্দোলনে নামি।
এখন শপথ না দিলে আদালত অবমাননা হবে: ব্যারিস্টার খোকন
হাইকোর্টের আদেশের পর বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে শপথ না দিলে আদালত অবমাননা হবে বলে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন। আদেশের পর গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
এর আগে ইশরাক হোসেনকে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া গেজেটের বৈধতা নিয়ে এবং শপথ পড়ানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা চেয়ে করা রিট খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, হাইকোর্ট ডিভিশন বলেছে এ মামলাটা এসেছে ট্রাইব্যুনাল (নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল) থেকে। কেউ যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন (ট্রাইব্যুনালে মামলার বিবাদী হিসেবে), তিনি অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালে যেতে পারেন। ট্রাইব্যুনালের সেই রায় কেউ চ্যালেঞ্জ করেনি। আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গেজেট করেছে। গেজেট অনুসারে শপথ হবে।
তিনি বলেন, চ্যালেঞ্জ করতে হলে আপিল ট্রাইব্যুনালে যেতে হবে। সেখানে কেউ যাননি। তার (রিটকারী) মামলা করার অধিকার নেই, তা নিয়ে (আদালত) বড় অবজারভেশন দিয়েছেন। জনস্বার্থে যে কেউ মামলা করতে পারেন। তবে সেটা ভিন্ন। যেমন পরিবেশ, মানবাধিকার, মৌলিক অধিকার নিয়ে মামলা করতে পারে। এগুলো জনস্বার্থের মামলা। এটা (রিট) জনস্বার্থের মামলা না। তিনি (রিটকারী) ঢাকা সিটির ভোটার হিসেবে সমাজসেবা দেখাতে পারেনি বা তিনি যে ভোটার হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সেটাও দেখাতে পারেননি।
মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, আদালত অবজারভেশন দিয়ে রিট খারিজ করেছেন। ফলে ইশরাকের শপথ নিতে আর কোনো বাধা নেই। আগামী ২৬ মে’র মধ্যে শপথ দিতে হবে। একটা মহল শপথ নিতে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেছিল। সেটা ব্যর্থ হয়েছে। যদি শপথ না দেয়া হয়, সেটা আদালত অবমাননা হবে। ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে আন্দোলন করছেন তার সমর্থকেরা। টানা নগর ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে পরে গত বুধবার থেকে মৎস্যভবন, কাকরাইল ও যমুনার সামনের রাস্তায় অবস্থান করছিলেন তারা।