Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৩ মে, ২০২৫,

১৬৭ কর্মীর বকেয়া বেতন পরিশোধ করছে না নিপা ফার্মা

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

মে ২৩, ২০২৫, ১২:০৬ এএম


১৬৭ কর্মীর বকেয়া বেতন পরিশোধ করছে না নিপা ফার্মা
  • প্রতিষ্ঠানটির মালিক অবস্থান করছেন যুক্তরাষ্ট্রে কাটাচ্ছেন আয়েশি জীবন
  • অভিযোগ উঠেছে, পাওনা টাকার জন্য গেলেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে করা হচ্ছে তালবাহানা

১৬৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা পরিশোধ করছে না ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান নিপা ফার্মাসিউটিক্যালস। বছরের পর বছর অপেক্ষা আর প্রতিষ্ঠানটির কর্তা ব্যক্তিদের দ্বারস্ত হয়েও পাওনা টাকা পাচ্ছেন না সাবেক কর্মকর্তা—কর্মচারীরা। 

যদিও প্রতিষ্ঠানটির ওষুধ উৎপাদন থেকে শুরু করে সার্বিক কার্যক্রমই চলছে স্বাভাবিকভাবে। শুধু তাই নয়, প্রতিষ্ঠানটির মালিক নিজেও অবস্থান করছেন যুক্তরাষ্ট্রে, কাটাচ্ছেন আয়েশি জীবন। অ

ভিযোগ উঠেছে, পাওনা টাকার জন্য গেলেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে করা হচ্ছে তালবাহানা। নানান অজুহাত আর সংকটের গল্প শুনিয়ে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে তাদের। যদিও প্রভাবশালীদের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে ইতোমধ্যেই কয়েকজনের টাকা পরিশোধ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। 

বেতন-ভাতা পাননি এমন একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী বলছেন, করোনাকালে বেতন-ভাতা ঠিক থাকলেও পরবর্তী ২০২২ সাল থেকে মাসের পর মাস বিনা বেতনে কাজ করেও বকেয়া পরিশোধে প্রতিষ্ঠানটির কোনো রকম সদিচ্ছাই দেখেননি। বরং চাকরি ছাড়ার পর নিজেদের খেয়ালখুশি মতো বেতন কেটে রাখছে। ‘বিনা নোটিশে’ চাকরি ছাড়ার অজুহাত দিয়ে বেতন কাটলেও বাকি টাকা পরিশোধে পরোক্ষভাবে অনীহা দেখাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। 

যদিও ভুক্তভোগীরা বলছেন, ৬ মাসের বেতন বকেয়া পড়ার পরই কর্তৃপক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, কেউ চাইলে চাকরি ছেড়ে দিতে পারেন। কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।  

ভুক্তভোগীরা বলছেন, তাদের কেউ কেউ দেড় লাখ, কেউ তিন লাখ, আবার কেউ কেউ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বেতন-ভাতা পাওনা রয়েছেন প্রতিষ্ঠানটিতে। কিন্তু পাওনা টাকার জন্য যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানটির সিইও আবু সায়েদ ও এইচআর বিভাগ থেকে কাউকে ২ হাজার, কাউকে ৩ হাজার আবার কাউকে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা করে দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির কাছে যার দেড় লাখ টাকা পাওনা আছে, তাদের হিসেবে সে টাকা আদায় করতে অন্তত আড়াই বছর সময়ের প্রয়োজন। 

এরপরও তারা বলছেন, যদি কেউ এভাবে টাকা নিতে রাজি হন, তাহলে তাকে অপেক্ষা করতে হবে আরও ৩ মাস। ৩ থেকে ৪ মাস পর ২, ৪, ৫ হাজার করে টাকা পরিশোধ করতে পারবেন তারা। যে কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে ভুক্তভোগীরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা প্রতিষ্ঠানটির মালিকের নির্দেশেই ১৬৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা নিয়ে টালবাহানা করছেন সিইও। যেখানে প্রতিষ্ঠানটি ৪-৫ বছর অপেক্ষার পরও এখন বলছেন আরও ৩ মাস অপেক্ষার পর সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকার বেশি দিতে পারবেন না। তাও আবার সবাইকে নয়, মাসে ২ লাখ টাকা বণ্টন করতে পারবেন তারা। এতে যে কয়জনকে দেয়া যায়। 

নিপা ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে সিইও আবু সায়েদের সঙ্গে কথা হলেও তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতেই হিমশিম খাচ্ছেন তারা। তাই অল্প অল্প করে বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের কথা বলছেন তারা। মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমাধানের জন্য বলা হলে 

তিনি বলেন, মালিক আমেরিকাতে থাকেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ জন্য বলা হলেও তিনি তেমন কোনো সাড়া দেননি। যে কারণে তার সামনে বসেই একাধিকবার ফোন করা হয় মালিককে। তিনি রিসিভ করেননি। সেখানে বসেই ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হলেও গত এক সপ্তাহেও তিনি কোনোরকম সাড়া দেননি। 

এমন পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা। তারা বলছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে দেশে এমন কোনো সেক্টর নেই, যারা দাবি আদায়ের আন্দোলন করেনি। চাইলে আমরাও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামতে পারতাম। যেহেতু তারা আমাদের পাওনা বেতন-ভাতা না দেয়ার পাঁয়তারা করছে, সেহেতু এবার আর বসে থাকবো না আমরা। বকেয়া বেতন আদায়ের দাবিতে আমরা প্রতিষ্ঠানটি ঘেরাও করবো। শ্রম আদালতে যাব। প্রয়োজন হলে মামলা করবো। 

ভুক্তভোগীদের এমন বক্তব্য সিইও আবু সায়েদকে জানালে তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দিতে হবে। আমাদের কিছুই করার নেই। মালিকও দেশে থাকেন না। আমরা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে চলে যাব। এতে যারা এখন প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত রয়েছেন তাদের ক্ষতি হবে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ভুক্তভোগীরা চাইলে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে অভিযোগ করতে পারেন। অভিযোগ ছাড়া আমরা কিছু করতে পারবো না। যদি অভিযোগ আসে তাহলে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর ব্যবস্থা নিতে পারে।

Link copied!