Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

নানান প্রতিবন্ধকতায় ব্যবহার অযোগ্য বাংলাবাজার পদচারী-সেতু

আবু ছালেহ আতিফ

আবু ছালেহ আতিফ

জানুয়ারি ৩১, ২০২৩, ০৭:৫৬ পিএম


নানান প্রতিবন্ধকতায় ব্যবহার অযোগ্য  বাংলাবাজার পদচারী-সেতু
  • দুর্গন্ধে ব্রিজে উঠার কোনো অবস্থা নেই। 
  • সন্ধ্যা হলেই সিড়িতে বসে গাঁজার আসর।
  • পথচারীদের অভিযোগ, প্রশাসনের অবহেলা আছে।
  • মেয়র থেকে ভেঙে ফেলার মৌখিক আদেশ।

 

রাজধানীর বাংলাবাজার চৌরাস্তার মোড় পদচারী সেতু ব্যাবহারে  কোনো আগ্রহ নেই পথচারীদের । জানা যায়, জনসন রোড, বাংলাবাজার, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ও ইসলামপুর রোডের সংযোগস্থলে পথচারীদের পারাপারে ১৯৯৭ সালে পদচারী-সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা আর সেতুতে মাদকসেবী ভবঘুরেদের বসবাসের ফলে চতুর্মুখী সেতুতে ওঠার প্রতিটি পথেই প্রতিবন্ধকতা। এতে পথচারীরা ব্যবহার  করতে চান না সেতুটি।

মঙ্গলবার (৩১)জানুয়ারি ৯:০০ ঘটিকা থেকে দুপুর ১:০০ টা পর্যন্ত  ও সোমবার সন্ধ্যার পরে সরেজমিনে দেখা যায়, মাদক,নেশাখোরদের অবাধে আড্ডা, অব্যবস্হাপনা ও তারাহুরো যাতায়াত সেতু ব্যবহারের মূল প্রতিবন্ধকতা।

পদচারী-সেতুর আশপাশে আছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়,সদরঘাট, নৌ- টার্মিনাল, ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল, হিড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, বাংলাবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন হাজার মানুষের যাতায়াত এই পথে। কিন্তু রাস্তা পারাপারে কেউ পদচারী-সেতু ব্যবহারে আগ্রহী নয়। গত বৃহস্পতিবার  সরেজমিনে দেখা যায়, পদচারী-সেতুর চারটি প্রবেশপথেই রয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা। এর মধ্যে সেতুর দক্ষিণ-পূর্ব প্রবেশপথে গড়ে উঠেছে পুরোনো বইয়ের সড়ক দিয়েই পার হয়। বাজার। উত্তর-পূর্ব প্রবেশপথে ফলের দোকান। দক্ষিণ- পশ্চিম প্রবেশপথে চা-নাশতার টং দোকান। পাশেই ঘোড়ার গাড়ি ও লেগুনাতের কারণে সড়কে লেগে থাকে তীব্র যানজট। আর উত্তর-পশ্চিম প্রবেশপথে জুতা, স্যান্ডেল, রকমারি জিনিসপত্রের হকারদের পসরা। পাশের সড়কে রাখা ময়লার কনটেইনারের আবর্জনা চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে। এসব দোকানের মাল রাখা হয় পদচারী-সেতুর সিঁড়িতে।

এছাড়া বিভিন্ন সময়ে দেখা যায়,দিন-দুপুরে সেতুতে চলে অবাধে মাদক গ্রহণ। রাতে ভবঘুরেদের অবস্থান। আশপাশের অনেক দোকানের কর্মচারী আবার সেতুটি টয়লেট হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন।

সেতুর নিচেই পুলিশ বক্সে সার্বক্ষণিক সদরঘাট নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি ও ট্রাফিক পুলিশ অবস্থান করলেও ব্যবস্থা নেয় না কেউ। সকাল ৯:০০ টা থেকে দুপুর ১ টা  পর্যন্ত অপেক্ষা করেও পদচারী-সেতু ব্যবহারে একজন  মানুষও পাওয়া যায়নি।

তবে,দায়িত্বরত (পুলিশ বক্সে)নাম জানাতে অনিচ্ছুক এক পুলিশ সদস্য বলেন, মানুষ ব্যবহার করেনা এজন্য ব্রিজটর অবস্থা এমন। তবে সিটি কর্পোরেশনেরও কিছু করনীয় রয়েছে।

কলেজিয়েট স্কুলের এক অভিভাবক দুই ছেলেকে হাত ধরে সড়ক পার করাচ্ছিলেন। তাঁর কাছে জানতে চাইলে বলেন, ‍‍`মূল সড়ক দিয়ে পার হলে সময় কম লাগে। রাস্তা পারাপারে কখনো কেউ বাধা দেন না। কিন্তু  ছেলেদের বলে দিয়েছি একা যেন রাজা পার না হয়। সেতু ব্যবহার করে যেন পার হয়। কিন্তু এটার (ব্রিজ) যে অবস্থা তাতে উঠার কোনো অবস্থা নেই।মারাত্মক গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসে আবার ব্রিজের উপরে সব বাজে মাসুষের আড্ডা। এজন্য বাচ্চারা ভয়ে আর পার  হয় না।

বরিশালের উদ্দেশ্য ব্রীজের নিচ দিয়ে হাত দেখিয়ে গাদাগাদি করে  স্ত্রী -সন্তান  নিয়ে  সদরঘাটের দিকে  যাচ্চ্ছিলেন পথচারী আলাউদ্দিন । থাকেন মিরপুর । এক ট্রাফিক পুলিশ তাকে ইশারা দিলেও সে কর্ণপাত না করে চলে যান। তাকে জিজ্ঞেস করা হলে তারাহুরো করে বলেন ‌‘লঞ্চ ছাইররা দেলে জামুয়ানে ক্যামনে! লঞ্চ ধরতে অইবে ভাই।’

কলেজিয়েট স্কুলের অফিস সহকারী সৈয়দ মোঃবেলাল হোসেন বলেন,এ ব্রিজটি সুন্দর হওয়ার পরেও এটা যতসব খারাপ মানুষদের আড্ডা। সন্ধ্যার পরে অসামাজিক কার্যকলাপ হয়,দিনের বেলায় নেশাখোররা গাঁজা ইয়াবা খায় এবং টোকাইরা গিয়ে ওখানে মূত্র ত্যাগ করে ভরে রাখে এজন্য একটা ভালো মানুষ স্কুলের শিক্ষার্থী এখানে ওঠে না। যদিও শিক্ষার্থীদের নির্দেশ দেওয়া আছে তারা যেন পদচারী-সেতু ব্যবহার করে।ব্রিজটি ব্যবহার না করার কারণ জানতে চাইলে সে বলে,যে এমন কোনো ব্যবস্থা নেই যেমন ফার্মগেটে গ্রীল দেওয়া আছে আশপাশে না উঠে উপায় নেই। কিন্তু এখানে এমন কোনো ব্যবস্থা নেই।

এত ব্যস্ততম একটা জায়গায় ফুটওভার ব্রিজটির এ করুণ অবস্থা এবং ব্যবহার অযোগ্যতার কারণ জানতে চাইলে, ৩৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর অব্দুর রহমান মিয়াজী বলেন, এটা নিয়ে আমি নিজেই কয়েকবার অভিযোগ দিয়েছি সিটি কর্পোরেশনে। তবে মেয়র মহোদয় মৌখিক ভাবে এটাকে (ফুটওভার) কে ভেঙে ফেলতে বলেছেন। এখন সেই কথার উপরেই আছে।

কোতোয়ালি থানার সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি)শাহিনুর ইসলাম আমার সংবাদকে  বলেন, এটাতো সিটি কর্পোরেশনের ব্যপার, এটা তারা  দেখে।

এএস/ এবি

Link copied!