ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ঘুরে দাঁড়াতে চান নেত্রকোনার শীতল পাটির শিল্পীরা

নেত্রকোনা প্রতিনিধি

নেত্রকোনা প্রতিনিধি

জুলাই ২৩, ২০২২, ০৪:২৭ পিএম

পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ঘুরে দাঁড়াতে চান নেত্রকোনার শীতল পাটির শিল্পীরা

করোনার থাবা আর বন্যার ক্ষতির মুখে ঝিমিয়ে পড়েছেন নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের শীতল পাটির শিল্পীরা। পাটি তৈরির কাঁচা মাল মুর্তার দাম বৃদ্ধি, স্থানীয়ভাবে পাটির দাম ও ক্রেতা কমে যাওয়া সহ নানাবিধ প্রতিবন্ধকতায় তারা শীতল পাটি তৈরিতে আগ্রহ হারিয়েছেন। এতে করে এ শিল্পের ওপর নির্ভরশীল অনেক পরিবার নিতান্তকষ্টে দিন যাপন করছে।

তবে সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন বলে জানিয়েছেন এখানকার শীতল পাটির শিল্পীরা।

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের ডিঙাপোতা হাওরপাড়ের জৈনপুর, হাতনী, জৈনপুর, কেন্দুয়া, ভাটাপাড়া, নোয়াগাও, হরিপুর  ও তাহেরপুরের গ্রামে যুগ যুগ ধরে এই শীতল পাটি তৈরি করে জীবন জীবিকা চালাচ্ছেন এখানকার অনেক মানুষ। তবে প্রচার নেই বলে স্থানীয় বাজারে কম দামে শীতল পাটি বিক্রি করতে হয় তাদের। বর্তমানে বাজারে প্লাস্টিকের পাটির দাপটে মুর্তার তৈরি শীতল পাটি অনেকটাই জৌলুস হারিয়েছে। এক সময় প্রয়োজনে ব্যবহার করলেও এখন শুধু সখের বসেই মানুষ শীতল পাটি ব্যবহার করেন।

শীতল পাটির কারিগরদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মুর্তা নামে এক ধরনের বর্ষজীবী উদ্ভিদের কাÐ থেকে পাটি বেত তৈরি করা হয়। পরিপক্ক মুর্তা গাছ কেটে পানিতে ভিজিয়ে তারপর পাটির বেত তোলা হয়। এরপর ভাতের মাড় ও পানি মিশিয়ে বেতি জ্বাল দেওয়া হয়। এর ফলে বেত হয়ে ওঠে মসৃণ ও সাদাটে। বেতের উপরের খোলস থেকে শীতলপাটি, পরের অংশ তুলে বুকার পাটি এবং অবশিষ্ট অংশ চিকন দড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

সরেজমিনে ওইসব গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় বাড়িতেই নারী-পুরুষ শীতল পাটি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পুরুষদের তুলনায় নারীরাই এই কাজে বেশি দক্ষ। সাংসারিক কাজ শেষ করে বাকি সময়টা তারা পাটি তৈরির কাজ করেন।

স্থানীয়ভাবে পাটি তৈরির কাঁচামাল মুর্তার চাষ হলেও তা যতেষ্ট না হওয়ায় পুরুষরা জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে ঘুরে মুক্তা সংগ্রহ করেন।

মুর্তা সংগ্রহকারী হাতনী গ্রামের মানিক দত্ত ও শ্যামল চন্দ্র সরকার জানান, বর্ষা মৌসুমে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় অধিকাংশ মুর্তা বর্ষা মৌসুমেই সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। তাছাড়া শুস্ক মৌসুমেও মোহনগঞ্জ, বারহাট্টা, কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, ঝারিয়াসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে মুর্তা সংগ্রহ করে স্থানীয় পাটির কারিগরদের কাছে বিক্রি করি।

হাতনী গ্রামের লক্ষী রানী, প্রমিলা রানী ঘোষ, সুগন্ধা দত্ত, সন্ধ্যা রানী, রেখা রানী, জৈনপুর গ্রামের কমলা বনিক, ফুলন তালুকদার, তার কলেজ পড়ুয়া মেয়ে দৃষ্টি তালুকদার ও মিনতি তালুকদার জানায়, শীতল পাটি তৈরি করেই তারা জীবিকা নির্বাহ করেন। একটি সাধারণ পাটি তৈরিতে তাদের সময় লাগে কমপক্ষে ৩ দিন। প্রতিটি পাটির কাঁচামাল ক্রয় করতে ব্যয় হয় প্রায় ২’শ থেকে ৩’শ টাকা। বিক্রি হয় ৫’শ থেকে ৬’শ টাকায়। তৈরিকৃত পাটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকাররা এসে বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। আবার স্থানীয় জৈনপুর বাজারে সপ্তাহে সোমবার ও শুক্রবার পাটির হাট বসে। এখানেও বিক্রি হয়।

স্থানীয় ব্যবসায়ী কুসু মহন কর, নিপেন্দ্র বনিক ও প্রদীপ দেবনাথ শুক্রবার ও সোমবার জৈনপুর বাজার থেকে পাটি ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন। তারা জানান, এক সময় এই এলাকায় অনেক শীতল পাটি তৈরি হতো। এখন কমে গেছে, প্রতি বাজারে এখন ২-৩শ পাটি উঠে।

পাটি তৈরির কারিগরেরা জানান, পাটি তৈরির কাঁচামাল মুর্তা মূলত বর্ষা মৌসুমেই বেশি সংগ্রহ করা হয়। কারণ এই সময়ে নৌকায় কম খরচে পরিবহন করা যায়। নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল না হওয়ায় দাদন ব্যবসায়ীদের থেকে সুদে টাকা নিয়ে মুর্তা ক্রয় করি। বছর শেষে দাদন ব্যবসায়ীদের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে দিশেহারা হতে হয়। অনেক সময় দেকা যায় এক দাদন ব্যবসায়ীর ঋণের টাকা পরিশোধ করতে অন্য দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ঋণ নিতে হয়।

শীতল পাটির কারিগর প্রমিলা রানী ঘোষ জানান, শীতল পাটি তৈরিতে অনেক সময় ও শ্রম দিতে হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে  খরচও আগের চেয়ে বেশি লাগে। এদিকে বিক্রি করতে গিয়ে দাম আগের মতোই। ফলে কারিগরদের মধ্যে শীতল পাটি তৈরির আগ্রহ কমে যাচ্ছে। শুধু খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার তাগিদে আর বংশপরম্পরায় চলে আসা ঐতিহ্য হিসেবে এ কাজে ঠিকে আছি। এরই মধ্যে অনেকেই পেশা বদলেছেন।

শীতল পাটি তৈরির কারিগররা আরও জানান, অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান না হওয়ায় অনেকে এ পেশা থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে। শীতল পাটির কারিগর দিন দিন কমে যাচ্ছে। আগে শীতল পাটির উপকরণ মুর্তা কেনা লাগতো না। এগুলো আগাছার মতো যেখানে সেখানে জন্মাত। কারিগররা সেগুলো সংগ্রহ করে পাটি বুনত। শুধু সময় ও পরিশ্রমের দাম হিসেবে এগুলোর মূল্য নির্ধারিত হতো। কিন্তু আজকের পরিবর্তিত সময়ে সবার মাঝে আর্থিক সচেতনতা এসে গেছে। তাছাড়া বর্তমানে মুর্তা ক্রমশ কমে যাচ্ছে। তাই বছরের নির্দিষ্ট সময়ে সারাবছরের পাটি তৈরির জন্য মুর্তা কিনে রাখতে হয়। ফলে মুর্তা কেনার টাকার জন্য দাদন কারবারিদের দারস্থ হতে হয়।

সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করে কারিগরেরা বলেন, বাংলাদেশের অন্যান্য হস্তশিল্পের মতোই এ শিল্পের শিল্পীরা দরিদ্র ও অবহেলিত। সরকারের এ শিল্পের দিকে একটু নজর দেয়া উচিত। বিশ্বের দরবারে সম্মান সূচক মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়েছে এ শিল্প। সারাবিশ্বে এ শীতল পাটি শিল্পের শিল্পীদের কাজে পারদর্শিতার নৈপুণ্য ও শিল্পসত্তার ভুয়সী প্রশংসা অর্জন করেছে। যদিও আমরা এখানে পিছিয়ে আছি।

শীতল পাটি তৈরির কারীগর মিনতি রানী তালুকদার বলেন, প্রায় ৪০ বছর ধরে  এ পেশায় জড়িত। আমার দুই মেয়েও পাটি বুনন শিখে গেছে। এক সময় পাটি তৈরি করে ভাল আয় হতো। এখন আর সেই সুদিন নেই। করোনা মহামারী সংকটের কারণে শীতল পাটি বিক্রি করে তেমন পারিশ্রমিক আসেনাই। শিল্পটি রক্ষায় সরকারি পৃষ্টপোষকতা পেলে আবার ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। পাশাপাাশি কোন মাধ্যম ছাড়া আমারা কারিগরেরা যেন সরাসরি রাজধানীর ব্যবসায়ী বা ক্রেতাদের কাছে ন্যায্য দামে বিক্রি করতে পারি সেই ব্যবস্থা করে দেওয়া। এর জন্যে প্রচার প্রসার বাড়ানো। এতে স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থানের হবে।

উল্লেখ্য- শীতল পাটি বাংলার সুপ্রাচীন এক কুটির শিল্পের নাম। শীতল পাটি আমাদের সভ্যতা, কৃষ্টি ও ঐতিহ্যের অংশ। এছাড়া বাংলাদেশের শীতল পাটি এখন বিশ্ব ঐতিহ্যেরও অংশ। জাতিসংঘের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো শীতল পাটিকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে।

কেএস 
 

Link copied!