Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪,

শেরপুরে সারের কৃত্রিম সংকটে সিন্ডিকেট

শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি

শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি

সেপ্টেম্বর ৭, ২০২২, ০৫:৪৮ পিএম


শেরপুরে সারের কৃত্রিম সংকটে সিন্ডিকেট

বগুড়ার শেরপুরে এখন চলছে রোপা আমনের ভরা মৌসুম। মাঠে মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক। আমন আবাদের এ মৌসুমে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে সম্প্রতি হঠাৎ করে ইউরিয়া সারের দাম বৃদ্ধি, বিভিন্ন জায়গায় সারের সংকট, চাহিদা অনুযায়ী না পাওয়ায় সার সংকটকে পুঁজি করে এক শ্রেণির অসাধু সার ডিলাররা ১১শ টাকার সার ১৪শ টাকায় বিক্রি করছে।

তবে এই মুহুর্তে সারের চরম সংকট না থাকলেও শেরপুরের প্রত্যন্ত কৃষকদের সার কিনতে হচ্ছে অতিরিক্ত দামে। ক্যাশ মেমোর মাধ্যমে চাষিদের কাছে সার বিক্রির নিয়ম থাকলেও বেশি দামে বিক্রির কারণে ডিলার ও খুরচা বিক্রেতারা তা মানছেন না । সার নিয়ে এমন হযবরল পরিস্থিতি সামপ্রতিক সময়ে আর দেখা যায়নি।

প্রতিটি ইউনিয়নে ২-৩ জন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিযুক্ত আছেন চাষিদের সেবায়। সার নিয়ে এমন নানা রকম কারসাজি চালালেও উপজেলা কৃষি অফিসের কোনো তদারকি নেই বললেই চলে।

আমার সংবাদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে সারের কৃত্রিম সংকটের নানা তথ্য।

সংশ্নিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই অসাধু কর্মকর্তা, পরিবহন ঠিকাদার, ডিলার ও সাব-ডিলাররা সারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে আসছে। এসব চক্রের লাগাম টানা না গেলে সংকট আরও গভীর থেকে গভীরে ডুব দিতে পারে। তবে সার সংকটের কারণ খুঁজতে গোয়েন্দা সংস্থার একটি দল মাঠে কাজ করছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।

"সংশ্লিষ্ট সূত্রে" জানা যায়, পৌরসভা বাদে  এই উপজেলার ১০ ইউনিয়নে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২১ হাজার ৮৬০ হেক্টর জমিতে। চলতি মৌসুমে ইউরিয়া সার ও ডিজেলের বাড়তি দামের কারনে ফসল লাগানো থেকে ঘরে ওঠা পর্যন্ত প্রতি একরে গত বছরের চেয়ে ১১ হাজার টাকা ব্যয় বাড়বে। এবার প্রতি একরে কমপক্ষে ব্যয় হবে ৩৬ হাজার টাকা।

গত আমন মৌসুমে ব্যয় হয়েছিল ২৫ হাজার টাকা।উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকরা জানান, প্রতি হেক্টরে আমন চাষ করতে গড়ে ইউরিয়া লাগে ১৮০ কেজি। এ হিসাবে শেরপুরে ২১ হাজার ৮৬০ হেক্টরে আমন চাষে ইউরিয়া লাগবে ৩৯ লাখ ৩৪ হাজার ৮০০ কেজি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এ উপজেলায় বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) অনুমোদিত ১২ জন ডিলার তারা নাম মাত্র সার বিক্রি করলেও মাত্র ৩-৪ জন সার তুলে বিতরণের ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। তাঁরা অন্য ডিলারদের নামে বরাদ্দ দেওয়া সার কৌশলে তুলে নিজেদের গুদামে রাখছেন।

এমনকি এক উপজেলার নামে বরাদ্দ করা সার অবৈধভাবে অন্য উপজেলায় রাখা হয় আবার অন্যা উপজেলার সার রাখা হয় এ উপজেলায়। ফলে কোথাও কোথাও কৃষকরা সার পাচ্ছেন না, আবার অনেক স্থানে সার মিললেও দাম আকাশচুম্বী।

চাষিদের অভিযোগ, সার ডিলারদের কাছে সরকারি দরে ক্যাশ মেমোসহ সার কিনতে গেলে সার নেই বলে জানিয়ে দেয়। আর বেশি দামে নিলেই পাওয়া যায় পর্যাপ্ত সার। তাই ডিলাররা সারের ১-৫ বস্তার মেমো না করে বিভিন্ন খুরচা বিক্রেতাদের নামে শত শত বস্তার মেমো করে সার বিক্রি করে থাকেন। আর সাধারণ চাষিদের কাছে মেমো ছাড়া বেশি দামে বিক্রি করেন।

কুসুম্বী ইউনিয়নের বেলঘরিয়া বাজারের ৬নং ওয়ার্ডের খুচরা সার বিক্রেতা মো: কামাল জানান, ডিলারের কাছ থেকে ১০-১২ বস্তা ইউরিয়া পেয়েছি। সারের চাহিদা বাড়তে থাকায় নন্দীগ্রাম থেকে অতিরিক্ত দামে ব্লাকে সার নিয়ে এসে বিক্রি করতে হচ্ছে।

এছারাও ওই বাজারে একাধিক কার্ডবিহীন খুচরা ব্যবসায়ী রয়েছে।খুচরা ব্যবসায়ীদের একজন মো: আবু রায়হান বলেন, শেরপুর থেকে ভুটভুটি ও ভ্যানওয়ালার মাধ্যমে সার বেশি দামে সংগ্রহ করতে হয়।আর ডিলাররা এদের মাধ্যমেই সার বেশি দামে বিক্রি করে থাকেন। তাই আমরাও অবৈধভাবে সার কিনেই বিক্রি করছি।

এ বিষয়ে কুসুম্বী ইউনিয়নের বিসিআইসির ডিলার মো: শফিকুল ইসলাম শিরু বলেন, সারের কোনো সংকট নাই। সারের কৃত্তিম সংকট তৈরী করছে কৃষকরাই।

ইউনিয়নে সহায়ক বিতরণ কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের ইউনিয়নে বিতরণ কেন্দ্র আছে কিন্তু কৃষকদের জন্য শহর থেকে সার সংগ্রহ করাই সুবিধাজনক হয়। এখানে কোনো সিরিয়াল দিতে হয় না। বরং ইউনিয়নে সার বিতরণ করতে গেলেই সমস্যায় পরতে হয়।

শেরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা: সারমিন আক্তার জানান, উপজেলায় সারের কোনো সংকট নেই, খুচরা বিক্রেতাদের নিয়মিত সার দেওয়ার ব্যপারে ডিলারদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে কেউ সার বিক্রি করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এআই 

Link copied!