Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪,

গাজীপুরে ভুল চিকিৎসায় গর্ভের সন্তানের মৃত্যু

এস এম জহিরুল ইসলাম, গাজীপুর

এস এম জহিরুল ইসলাম, গাজীপুর

সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২২, ০৫:৪৩ পিএম


গাজীপুরে ভুল চিকিৎসায় গর্ভের সন্তানের মৃত্যু

গাজীপুর জেলার শ্রীপুরে এক প্রাইভেট হাসপাতালের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

একাধিক ব্যক্তি ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনওর) কাছে বিচারের দাবি জানিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। শ্রীপুর চৌরাস্তায় অবস্থিত জায়েদা মাল্টিকেয়ার নামক হাসপাতাল। হাসপাতালের চিকিৎসক শাকিলা শাহরিন ও তার স্বামী হাসপাতালের পরিচালক রফিকুল ইসলামকে অভিযুক্ত করে ভুক্তভোগী শ্রীপুর গ্রামের বাসিন্দা আরিফ হাসান ও মোঃ রায়হান পৃথক দুটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।

অন্তঃসত্ত্বা নারীকে ভুয়া রিপোর্ট ও ভুল চিকিৎসা দেয়াসহ নানান রকমের অভিযোগ উঠেছে ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে‌‌।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অন্তঃসত্ত্বা সন্দেহে গত ১৪ জুন ঐ হাসপাতালে গেলে চিকিৎসক জানান এখনও অন্তঃসত্ত্বা হয়নি। পরে আবার ০৩ জুলাই গেলে চিকিৎসক পরীক্ষা করে অন্তঃসত্ত্বা জানিয়ে ব্যবস্থা পত্র লিখে দেয়। তার ১৫ দিন পর গেলে ভ্রণটি ভালো অবস্থানে নেই জানিয়ে জরায়ুর ভিতরে থাকা ভ্রণ নষ্ট করে বের করার জন্য ব্যবস্থাপত্র দেয়।

সবশেষে গত ১ আগস্ট হাসপাতালে যাবার পর পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানান ভিতরে কিছু নাই, ঔষধ খাবার পর সবকিছু পরিষ্কার হয়ে বের হয়ে গিয়েছে। এখন সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে। এরপর থেকে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে থাকে। একপর্যায়ে গত ৮ সেপ্টেম্বর ভোর রাত থেকে পেটে প্রচন্ড ব্যথায় কাতরাতে থাকলে সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে সেখানে কর্মরত চিকিৎসক নষ্ট হওয়া ভ্রণ জরায়ু থেকে বের করে।

ভুক্তভোগীর স্বামী জানান, ভুল রিপোর্ট ও ভুল চিকিৎসার জন্য আমার স্ত্রী অনেক দিন যাবৎ অসুস্থতায় ভুগছে। তিনি তদন্তের মাধ্যমে সঠিক বিচারের দাবি করেন।

রায়হান নামে আরেকজন ভুক্তভোগী জায়েদা মাল্টিকেয়ার হাসপাতালের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসায় তার স্ত্রীর গর্ভের সন্তান হত্যার অভিযোগ করেন।

তিনি জানান, তার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা হবার পর থেকেই নিয়মিত ওই হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে থাকেন। গত ৪ জুলাই চিকিৎসকের কাছে গেলে তিনি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ১৮ জুলাই সন্তানের সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের কথা জানিয়ে যেতে বলেন। চিকিৎসকের কথা অনুযায়ী তারা ১৮ তারিখের অপেক্ষায় থাকেন। এরই মধ্যে ১৫ জুলাই তার স্ত্রী লক্ষ্য করেন গর্ভের সন্তান নাড়াচাড়া বন্ধ করে দিয়েছে। রায়হান হাসপাতালের পরিচালককে ফোন দিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ চাইলে তিনি চিকিৎসকের সাথে কথা না বলতে দিয়ে তিনি নিজেই হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে গ্যাস দেওয়ার কথা বলেন। রায়হান সাথে সাথে তার স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসক কাওকে না পেয়ে বাড়িতে ফিরে যান। পরদিন হাসপাতালে গেলে চিকিৎসক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানান তার স্ত্রীর গর্ভের সন্তান মারা গেছে। সুস্থ স্বাভাবিক সন্তান কিভাবে মারা গেলো জানতে চাইলে কোন আশানুরূপ উত্তর দিতে পারেনি এবং তাদের সহযোগিতা চাইলেও তারা তালবাহানা শুরু করে কোন চিকিৎসা ও সহযোগিতা করেনি। বাধ্য হয়ে ওই হাসপাতাল থেকে বের হয়ে অপর একটি হাসপাতালে চিকিৎসা করান। তার স্ত্রী মৃত সন্তান প্রসব করেন।

অপর হাসপাতালের চিকিৎসকগন জানান, গত ৪ জুলাই সন্তান প্রসবের সঠিক সময় ছিলো, দেরিতে হওয়ায় সন্তানটি মারা যেতে পারে। তিনি অভিযোগে আরও উল্লেখ করেন চিকিৎসক কখনও সনোলজিষ্ট কখনও প্যাথলজিষ্ট হিসাবে বিভিন্ন রিপোর্টে সাক্ষর করেন। হাসপাতালের পরিচালক রফিকুল  চিকিৎসক না হয়েও হাসপাতালের রোগীদের চিকিৎসক সেজে ভুল চিকিৎসা ও পরামর্শ দিয়ে বিভ্রান্ত করেন। এছাড়াও হাসপাতালের নার্স ও স্টাফরা রোগীদের সাথে খারাপ আচরণ করে থাকেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত চিকিৎসক ও হাসপাতালের পরিচালক অভিযোগ অস্বীকার করেন।

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার অফিসার তরিকুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কেএস 
 

Link copied!