Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪,

গাইবান্ধায় সেচ অনিশ্চয়তায় ৩০০ বিঘা জমির চাষাবাদ

মাসুম বিল্লাহ, গাইবান্ধা

মাসুম বিল্লাহ, গাইবান্ধা

ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৩, ০৫:২১ পিএম


গাইবান্ধায় সেচ অনিশ্চয়তায় ৩০০ বিঘা জমির চাষাবাদ

ইরি-বোরো চাষের উৎকৃষ্ট সময় পার হলেও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) পানি সরবরাহে কার্যকরি পদক্ষেপ না নেওয়ায় গাইবান্ধায় সেচ অনিশ্চয়তায় পড়েছে ৩০০ বিঘা জমির চাষাবাদ। জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন, এমনকি পানি সরবরাহে কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও গাইবান্ধা-৩ আসনের সাংসদ উম্মে কুলসুম স্মৃতির পত্র প্রেরণ করেও মিলছেনা সমাধান। চাহিদামত ঘুষ না দেওয়ায় বসানো হচ্ছেনা মেশিন অভিযোগ স্থানীয় কৃষকদের। এ অবস্থায় নদী ভাঙন ও অবহেলিত এই এলাকার অন্তত দুইশ কৃষক পরিবারের অপূরণীয় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় সচেতন মহল। যার প্রভাব পড়বে জাতীয় অর্থনীতিতেও।

কৃষকদের লিখিত আবেদন ও তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, স্বাধীনতা পরবর্তীকালে (১৯৭৪) গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ৩ নং দামোদরপুর ইউনিয়নের উত্তর দামোদরপুর এলাকার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নুরন্নবী সরকারের নিজস্ব জমিতে স্থাপন করা হয় বিএডিসির ডিজেল ইঞ্জিন চালিত একটি গভীর নলকূপ (সেচ পাম্প)। পরবর্তীতে একটি দূর্ঘটনায় ইঞ্জিনটি নষ্ট হয়ে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বন্ধ থাকলে, বাধ্য হয়ে দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধোগতির বাজারে শ্যালো মেশিনে অনেক কষ্টে চাষাবাদ করে আসছে কৃষকরা। এসময়ের মধ্যে বাংলাদেশের কৃষিতে ব্যাপক আধুনিকায়ন হয়ে কৃষি চাষাবাদ ব্যবস্থাপনার আমুল পরিবর্তন হয়েছে।

পরে গভীর নলকূপটি (সেচ পাম্প) পূনরায় চালু করতে দফায় দফায় গাইবান্ধার বিএডিসি কার্যালয়ে যোগাযোগ করলেও কোনও কর্ণপাত করেন না বিএডিসি কর্তৃপক্ষ। পরে বাধ্য হয়ে চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে কৃষকদের স্বার্থে বন্ধ থাকা গভীর নলকূপটি, বিদ্যুতের সাহায্যে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন (বিএমডিএ) মাধ্যমে চালু করতে জেলা প্রশাসকের কাছে কৃষকদের পক্ষে লিখিত আবেদন করেন ওই এলাকার সাবেক চেয়ারম্যান ও কৃষক নুরুন্নবী সরকার।

এছাড়া বিষয়াদী অবগত হয়ে কৃষকদের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পত্র দেন সাদুল্লাপুর-পলাশবাড়ি আসনের এমপি উম্মে কুলসুম স্মৃতিও। আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১৯ জানুয়ারি বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গাইবান্ধার নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারি কমিশনার জান্নাতুল ফেরদৌসি উর্মি স্বাক্ষরিত একটি পত্রে নির্দেশ করা হয়। কিন্তু নলকূপটি বিএমডিএ চালু করার কথা জানতে পেরে বিএডিসি নলকূপটি তাদের দাবি করে এবং তারাই নতুন করে চালু করবে বলে জানায়। পরে আবেদনকারী, বিএমডিএ ও বিএডিসিকে নিয়ে জরুরী বৈঠক করে তিন দিনের মধ্যে বিএডিসিকে নলকূপ চালু করতে নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক। অথচ তার নির্দেশের তিন সপ্তাহ পার হলেও বিএডিসি পানি সরবরাহে কার্যকরি কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ করেন কৃষকরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই এলাকার অন্তত শতধিক বিঘা জমি পানির অভাবে এখনও অনাবাদি পড়ে আছে। বয়স হওয়ায় পঁচে-নষ্ট হচ্ছে চারাগাছ (বেছন)। স্বচ্ছল পরিবারগুলোর কেউ কেউ চাষের মৌসুম পার হওয়া আর চারাগাছ নষ্টের হাত থেকে রক্ষায় শ্যালো মেশিন থেকে বেশি দামে ঘণ্টা হিসেবে পানি নিয়ে চাষাবাদ করছেন। কেউ কেউ পানি দিচ্ছেন নালা থেকে।

এছাড়া আশেপাশের সবকটি এলাকাঘুরে দেখা যায় কৃষকরা চড়া দামে ডিজেল ক্রয় করে, শ্যালো ম্যাশিন দিয়ে জমিতে সেচ দিচ্ছেন। তবে, বিদ্যুৎ চালিত গভীর নলকূপটি চালু করা হলে ওই এলাকার অন্তত ৩০০ থেকে ৪০০ বিঘা জমিতে পানি সরবরাহ করে ২০০ থেকে ২৫০টি কৃষক পরিবারের চাষাবাদের খরচ অর্ধেকে কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন স্থানীয় সচেতন মহল।

স্থানীয় কৃষকসহ আবেদনকারী কৃষক নুরুন্নবী আকন্দের অভিযোগ, বিএডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী বিদ্যুতের নলকূপ বসাতে প্রথমে দেড় লাখ ও পরে একলাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। কর্মকর্তার চাহিদামত টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় এলাকায় মেশিন নিয়ে আসার পরেও বসানো হচ্ছে না। উপরন্তু বিভিন্ন তালবাহানায় মেশিনসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ফেরত নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল, তাতে আমরা বাঁধা দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, এই এলাকার চাষাবাদের বড় মৌসুম ইরি-বোরো। আর সেই সময়ে চাষাবাদ না করতে পারলে না খেয়ে থাকতে হবে কৃষকদের। অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যুত চালিত গভীর নলকূপটি চালু করে কৃষকদের অপৃরণীয় ক্ষতির হাত থেকে রক্ষার দাবি তাদের।

দামোদর ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বন্ধ থাকা নলকূপটি চালু করতে এলাকার কৃষকরা অনেকবার বিএডিসির দারস্ত হয়েছে। তাতে কোনো সাড়া না পাওয়ায় আমাদের এলাকার এমপি মহোদয় ও ডিসি মহোদয়ের কাছে গেছেন সচেতন কৃষকরা। কৃষকদের স্বার্থে নলকূপটি চালু করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তার পরেও বিএডিসির নির্বাহী প্রকৌশলীর গাফিলতির কারণে ৩০০ থেকে ৪০০ বিঘা জমি ডাবল খরচ করে ইরিগেশন করতে হচ্ছে। এখনও প্রায় ১০০ বিঘা জমি অনাবাদি পড়ে আছে। আর জন্য বিএডিসির নির্বাহী প্রকৌশলীকে দায়ি করে, দ্রুত পানি সরবাহের ব্যবস্থা করে প্রান্তিক কৃষকদের রক্ষা করার দাবি করেন তিনি।

জানতে চাইলে গাইবান্ধা কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি সেচ) নির্বাহী প্রকৌশলী চিত্তরঞ্জন রায় আমার সংবাদকে বলেন, তারা চাচ্ছে বিদ্যুৎ চালিত গভীর নলকূপ। বিদ্যুতের বিষয়টিতে কয়েকটি দপ্তর সংশ্লিষ্ট রয়েছে, সেটি প্রক্রিয়াধীন, তাতে সময় লাগবে।

এছাড়া তিনি বলেন, কেউ চাইলেই গভীর নলকূপ বসানো সম্ভব নয়। ওখানে নলকূপটি ছিল ২৫ বছর আগে, এই ব্যবধানে নিয়ম-কাকুন, অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। তবে, জেলা প্রশাসনের নির্দেশ পাওয়ার পরেই সেখানে ডিজেল চালিত মেশিন চালু করে পানির ব্যবস্থা করা হয়েছিল কিন্তু কৃষকরা তাতে রাজি নন বলে দাবি নির্বাহী প্রকৌশীর। এসময় দেড় লাখ টাকা ঘুষ চাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।

কেএস

Link copied!