Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪,

বালাসীতে ঘাট আছে নদী নেই

বিফলে ১৪৫ কোটি টাকার নৌ টার্মিনাল

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

এপ্রিল ১২, ২০২৩, ০১:১৯ পিএম


বিফলে ১৪৫ কোটি টাকার নৌ টার্মিনাল

উত্তরের আট জেলায় যোগাযোগ সহজ করতে গাইবান্ধার বালাশী থেকে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ নৌরুটে ফেরি সার্ভিসের জন্য নেওয়া হয়েছিল মেগা প্রকল্প। ১৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে দুঘাটে নির্মাণ করা হয় টার্মিনাল। কিন্তু ওই নৌরুট ফেরি চলাচলের অনুপযোগী বলে জানায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডবিøউটিএ)। 

লঞ্চ সার্ভিস চালু করলে সেটিও মুখ থুবড়ে পড়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৩৮ সালে তিস্তামুখ ঘাট ও বাহাদুরাবাদ ঘাট চালু হয়। এ দুঘাটে ফেরি সার্ভিসের মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর রেল যোগাযোগ চালু ছিল। ১৯৯০ সালে নদীর নাব্য সংকটের অজুহাতে তিস্তামুখ ঘাটটি স্থানান্তর করা হয় একই উপজেলার উজানে বালাশীতে। 

নতুন করে সেখানেও ব্যয় করা হয় প্রায় ৩০ কোটি টাকা। নির্মাণ করা হয় ত্রিমোহিনী রেলস্টেশন থেকে বালাশীঘাট পর্যন্ত নতুন প্রায় ৬ কিলোমিটার রেলপথ। সেখানেও কয়েক বছর চলার পর যমুনায় নাব্য হ্রাসের কারণে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যমুনা বহুমুখী সেতু চালু হওয়ার পর ২০০০ সাল থেকে পুরোপুরি এ রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। 

তবে প্রয়োজনের তাগিতে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতেন এ অঞ্চলের মানুষ। এদিকে বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর যানবাহনের চাপ কমাতে বিকল্প পথ তৈরির যুক্তি দেখিয়ে ২০১৪ সালে বালাশী ও বাহাদুরাবাদে ফেরিঘাট চালুর লক্ষ্যে অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়। ২০১৭ সালের অক্টোবরে একনেকের সভায় বালাশী-বাহাদুরাবাদ নৌরুটটি আবারও চালু করতে ফেরিঘাট টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। 

ঐ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১২৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। পরে দুই দফায় প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে দাড়ায় ১৪৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা। ২০২১ সালের মধ্যে বেশ কিছু স্থাপনা নির্মাণ কাজ শেষ হলে হঠাৎ করে বিআইডবিøউটিএর কারিগরি কমিটি নাব্য সংকট ও ২৬ কিলোমিটার বিশাল দ‚রত্বের নৌপথসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরে নৌরুটটি চলাচলের অনুপযোগী বলে ঘোষণা করে।

 

পরবর্তিতে চলতি বছর যাত্রী পারাপারে পরীক্ষাম‚লকভাবে এ নৌরুটে চারটি ছোট লঞ্চ চলাচল শুরু করলেও নাব্য সংকটে এখন তাআর চলছে না। ফলে সরকারের মেগা প্রকল্প থেকে কাঙ্খিত সুফল পাচ্ছেন না এ অঞ্চলের মানুষ। সরেজমিনে বালাশীঘাট টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, সেখানে নির্মান করা হয়েছে বাস টার্মিনাল, টোল আদায় বুথ, পুলিশ ব্যারাক, ফায়ার সার্ভিস, আধুনিক ডিজাইনের মসজিদ, খাবার হোটেল, আনসার ব্যারাকসহ বেশকিছু নান্দনিক স্থাপনা। 

তবে এতকিছুর মাঝে শুধু মাত্র খাবার হোটেল চালু থাকলেও অন্যসব কিছু রয়েছে বন্ধ। তাই সরকারের এতটাকা ব্যায়ে নির্মনাধীন দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামোগুলো এখন জনমানবহীন পড়ে আছে। 

বালাশীঘাট থেকে জামালপুরে যাওয়ার জন্য নৌকার জন্য অপেক্ষারত সিয়াম আমার সংবাদকে বলেন, ‘আমি ময়মনসিংহে চাকরি করি। আমরা আগে নিরাপদে এ নৌরুটে পারাপার হতাম ফেরিতে। বর্তমানে কয়েকটি ছোট লঞ্চ চলাচল করছিল তবে সেগুলোও এখন বন্ধ। এ কারণে আমাদের নৌকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়েই নদী পার হতে হচ্ছে।’ 

কথা হয় স্থানীয় আরো কয়েক জনের সঙ্গে, তারা আমার সংবাদকে জানান,‘বালাশীঘাট থেকে নদীপথে ফেরি সার্ভিস চালু হলে এ এলাকায় বেকারত্বের হার কমে যেত। এ এলাকায় শিল্প-কারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটতো।’ 

অপরদিকে সাঘাটা ফুলছড়ি আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য মাহামুদ হাসান রিপন আমার সংবাদকে বলেন, ‘নৌরুটটি একসময় উত্তরবঙ্গের আট জেলার মানুষ ব্যবহার করতো। প্রতিদিন এ বালাশীঘাটে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটতো। 

স্বল্প সময়ে মানুষ ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা জেলায় যাওয়ার জন্য এ নৌরুটটি ব্যবহার করতো।’তিনি আরও বলেন, এ নৌরুটে পরীক্ষাম‚লকভাবে ছোট কয়েকটি লঞ্চ চলাচল শুরু করলেও নদীতে চর ভেসে ওঠায় লঞ্চগুলো আর চলাচল করতে পারছে না। এ নৌরুটকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে যদি দেখা হতো তাহলে দুপাশের মানুষ দ্রæত তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে।’

এমএইচআর

 

Link copied!