Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

গ্রাহকের ৬৫ লাখ টাকা আত্মসাত

টেকনাফ ইসলামী ব্যাংকের তিন কর্তা কারাগারে

রাশেদুল ইসলাম, কক্সবাজার

রাশেদুল ইসলাম, কক্সবাজার

নভেম্বর ১৮, ২০২৩, ০৬:৫৭ পিএম


টেকনাফ ইসলামী ব্যাংকের তিন কর্তা কারাগারে

পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে দুদক উপপরিচালক

বিভিন্ন সময়ে একাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে ইসলামী ব্যাংক কক্সবাজারের টেকনাফ শাখার তিন কর্মকর্তা লোপাট করেছেন অন্তত ৬৫ লাখ টাকা। কিন্তু সেই টাকা মেরে খেয়ে হজম করতে পারেননি তারা। অবশেষে মামলা খেয়ে কারাগারে গিয়েছেন তিন জনই।

পরবর্তী দুদক আইনে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার দুদক কার্যালয়ের উপপরিচালক মনিরুল ইসলাম৷ শনিবার (১৮ নভেম্বর) সন্ধ্যার দিকে কক্সবাজার দুদক কার্যালয়ের উপপরিচালক দৈনিক আমার সংবাদকে এসব কথা জানান৷

গ্রেপ্তার তিনজন হলেন- ইসলামী ব্যাংক টেকনাফ শাখার অফিসার ইমান হোসেন, জুনিয়র অফিসার আজিজ আহমেদ জাবেদ এবং মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম। তাদের মধ্যে ইমান হোসেন টেকনাফের হৃলার দমদমিয়া এলাকার টান্ডা মিয়ার পুত্র, আজিজ আহমেদ জাবেদ চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার জঙ্গলখাইনের ইউনিয়ের উজিরপুর গ্রামের মীর আহমেদের পুত্র এবং মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম একই উপজেলার হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নের চরকানাই এলাকার শেখ আমিনুল হকের পুত্র।

দুদক কার্যালয়ের উপপরিচালক মনিরুল ইসলাম জানান, গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য টেকনাফ থানা থেকে আমাদের কাছে দায়েরকৃত জাহারটি ফরোয়ার্ডিং করেছে৷

আইনানুগ ব্যবস্থার জন্য দুদক হেড অফিসে অনুমতির অবাদেন করা হয়েছে৷ অনুমতি আসলে গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আমরা কার্যক্রম শুরু করব৷

এর আগে বুধবার (১৫ নভেম্বর) গ্রেফতারকৃতদের টেকনাফ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তুললে আদালত কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

ইসলামী ব্যাংক টেকনাফ শাখার ব্যবস্থাপক মুহাম্মদ আলতাফ হোসেন টাকা আত্মসাতের অভিযোগে টেকনাফ থানায় একটি মামলা দায়ের করলে পুলিশ ওই অভিযুক্ত ৩ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ৬ নভেম্বর ইসলামী ব্যাংক টেকনাফ শাখায় একজন গ্রাহক তার হিসাবের স্থিতিতে গরমিল পাওয়ায় ব্যবস্থাপক মুহাম্মদ আলতাফ হোসেন এর কাছে মৌখিক অভিযোগ করেন। উক্ত মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে তার হিসাবের স্থিতির গরমিলের ব্যাপারে যাচাই-বাছাই করে সত্যতা পান ব্যবস্থাপক। একইভাবে ১২ নভেম্বর অন্য এক গ্রাহক তার হিসাবের স্থিতির ব্যাপারেও একই অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগেরও শাখা ব্যবস্থাপক যাচাই-বাছাই করে সত্যতা পান।

অভিযোগ যাচাই-বাছাইকালে শাখা ব্যবস্থাপক ওই শাখার অফিসার ইমান হোসেন, জুনিয়র অফিসার আজিজ আহমেদ জাবেদ এবং মোহাম্মদ শহিদুল ইসলামের সম্পৃক্ততা পান। তারা ব্যাংক প্রদত্ত নিজ নিজ আইডি ব্যবহার করে পরস্পর চেক জালিয়াতির মাধ্যমে ইস্যু করে এবং চেকগুলো ব্যবহার করে নগদ ও স্থানান্তরের মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রাহকের হিসাব থেকে অবৈধভাবে টাকা উত্তোলন করেন।

তাদের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন গ্রাহকের হিসাবে সেই টাকাগুলো স্থানান্তর করেন। বিষয়টি ব্যবস্থাপক নিশ্চিত হওয়ার পর দ্রুত আঞ্চলিক প্রধানকে অবহিত করে নিরীক্ষার ব্যবস্থা করেন। তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য অনু্যায়ী, সর্বমোট বিভিন্ন গ্রাহকের হিসাব থেকে সর্বমোট ৫৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা অননুমোদিত উত্তোলন করা হয়। একই ভিত্তিতে ব্যাংকের কর্মকর্তা অভিযুক্ত ইমান হোসেনকে ব্যবস্থাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে লিখিত বক্তব্য প্রদান করেন।

একইসাথে অভিযোগকারী দুইজন গ্রাহকের হিসাবের গরমিলের ১৩ লাখ টাকা ব্যবস্থা করে তাদের অভিযোগ তাৎক্ষণিক নিষ্পত্তি করেন। লিখিত বক্তব্যে তিনি একই পদ্ধতিতে সর্বমোট ৬৫ লাখ টাকা আত্মসাতের কথা স্বীকার করেন।

অভিযুক্ত ইমান হোসেনের লিখিত বক্তব্য অনুযায়ী, তিনি নিজেই ৩০ লাখ টাকা, আজিজ আহমেদ জাবেদ ৩০ লাখ টাকা এবং মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম ৫ লাখ টাকা পারস্পরিক যোগসাজশের মাধ্যমে ভাগ-ভাটোয়ারা করে নিয়েছেন। যদিও অভিযুক্ত আজিজ আহমেদ জাবেদ এবং মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

অডিট টিম সমন্বয়ে পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, অভিযুক্ত ইমান হোসেন ৬৫ লাখ টাকা আত্মসাতের কথা স্বীকার করলেও ব্যবস্থাপক এ পর্যন্ত ৫৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা অননুমোদিত উত্তোলনের প্রমাণ পেয়েছেন। এই অবৈধ উত্তোলনের ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ইমান হোসেন এবং আজিজ আহমেদ জাবেদ যোউথভাবে ব্যাংক কর্তৃক তাদের প্রদেয় আইডি এবং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে ওই লেনদেনগুলো করেছেন। আরও কোনো অবৈধ লেনদেন আছে কিনা- তা জানতে অভ্যন্তরীন নিরীক্ষা চলমান রয়েছে।

এদিকে, শাখা ব্যবস্থাপক অভিযুক্ত এবং তাদের পরিবারের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করে টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করলেও ইমান হোসেনের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী লোপাট করা বাকি ৫২ লাখ টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। এরইমধ্যে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয় থেকে সিদ্ধান্ত মোতাবেক অভিযুক্ত তিন কর্মকর্তাকেই চাকরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করেন।

টেকনাফের একজন সিনিয়র সাংবাদিকসহ একাধিক সচেতন নাগরিকদের নিজস্ব ফেইসবুক ফেইজে এমন সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত আরো তিনজন ব্যক্তির নাম তারা উল্লেখ করেছেন৷

তারা হলেন ইয়াসিন পিতা নুর হোসেন, কোরবান আলী পিতা সৈয়দ হোসন,বরমায়া মোস্তফা পিতা পিরোজ আহমেদ ঠিকানা মধ্যম জালিয়া পাড়া ৮ নম্বর ওয়ার্ড, পৌরসভা, কক্সবাজার৷

তাদের দাবি এ তিনজনের ব্যক্তিগত একাউন্ট চেক করলে হুন্ডিব্যবসাসহ অবৈধ লাখ লাখ টাকার হিসাব পাওয়া যাবে৷

টেকনাফ মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মঞ্জু জানান, এ বিষয়টি দুদকের তফসিলভুক্ত হওয়ায় পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুদক কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক বরাবর ব্যবস্থাপক কর্তৃক দায়েরকৃত এজাহারটি ফরোয়ার্ডিংসহ পাঠানো হয়েছে৷

এআরএস

Link copied!