Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪,

রঙ্গিন ফুলকপিতে চাষে চমক

শরিফুল ইসলাম, কালিহাতী (টাঙ্গাইল)

শরিফুল ইসলাম, কালিহাতী (টাঙ্গাইল)

ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৪, ০২:১২ পিএম


রঙ্গিন ফুলকপিতে চাষে চমক

ফুলকপির রং হলুদ ও বেগুনি। প্রথমে দেখে  মনে হবে, কোন অচেনা ফুল। চলতি বছর প্রথমবারের মতো এই ধরনের ফুলকপির চাষ করেছেন টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার ঝাটিবাড়ী গ্রামের আজিজুল নামের এক কৃষক। ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শে ১৫ শতক জমিতে রঙিন এই ফুলকপি চাষ করে চমক দেখিয়েছেন কৃষক আজিজুল। প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন ও ভালো দাম পেয়ে খুশি ওই কৃষক। তার এমন সফলতা দেখে আগ্রহী হচ্ছেন স্থানীয় অন্যান্য কৃষকরাও।

কৃষি অফিস  বলছে, এ ধরনের ফুলকপির সঙ্গে কৃষকদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে তারা। তাই শুরুতে দাম বেশি দিয়ে কিনতে হবে ভোক্তাদের। চাষাবাদ বাড়ানো গেলে দামও হাতের নাগালে এসে যাবে। প্রতি রঙিন ফুলকপি চাষে কৃষক স্বাভাবিকের চেয়ে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেশি পাবেন। মাটি উপযোগী কি না, পরীক্ষামূলকভাবে তা দেখতে কালিহাতীতে প্রথমবারের মতো রঙিন ফুলকপির চাষ করা হয়েছে।

কৃষক আজিজুল ইসলাম জানান, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে চারা নিয়ে ১৫ শতক জমিতে এ রঙিন জাতের ফুলকপি রোপণ করেন তিনি। ১৫ শতক জমিতে সব মিলে তার খরচ হয়েছে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা।

তিনি জানান, রঙিন ফুলকপি চাষে চারাসহ সবসময় পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে। রঙিন ফুলকপি আর সাধারণ ফুলকপি উৎপাদন খরচ প্রায় একই। তবে রঙিন হওয়ায় এই ফুলকপি অনেকেই আমাকে চাষাবাদে নিরুৎসাহিত করেছে। বলেছে এগুলো বিক্রি করতে পারবো না, মানুষ এগুলো কিনবে না। আরও নানান রকমের কথা বলেছেন। তবে সকল কথার অবসান ঘটিয়ে এই ফুলকপি চাষ করে সাধারণ ফুলকপির চেয়ে দাম দ্বিগুণ পাচ্ছি। তবে বীজের দাম বেশি হওয়ায় সচরাচর বীজ পাওয়া যায়না।

কোন ধরণের কীটনাশক-সার ব্যবহার না করেই শুধু জৈব সার ব্যবহার করেছেন তিনি।

তিনি আরও জানান, মজার বিষয় হলো রঙিন এসব ফুলকপি দেখতে প্রতিদিনই এলাকার কৃষকসহ সাধারণ মানুষ আমার জমিতে এখন ভিড় করছেন। কেউ নিচ্ছেন চাষের পরামর্শ আবার কেউ কেউ তুলছেন ছবি। তাছাড়া বাজারে নেওয়া মাত্রই বিক্রি হয়ে যায় এসব রঙিন কপি।

তিনি আরও বলেন, এখন আমাকে দিয়ে চাষ করিয়েছে কিন্তু আগামীতে সবাই যখন চাষ করতে চাইবে তখন হয়তো আমি চারা বা বীজ পাবোনা। কৃষি অফিসের প্রতি অনুরোধ থাকবে এ বছরের ন্যায় আগামীতেও যাতে রঙিন ফুলকপি চাষে আমি সব ধরনের সহযোগিতা পাই।

রঙিন ফুলকপির ভালো ফলন দেখে আগামী বছর চাষ করতে চান চাষি বাবুল ও খালেকসহ আরও অনেকেই। তারা বলেন, কৃষক আজিজুল যখন রঙিন ফুলকপি চাষ করলেন তার ফলন কেমন হয় তা দেখার অপেক্ষায় ছিলাম। শেষে দেখলাম, ফলন বেশ ভালোই হচ্ছে দামও অন্যান্য কপির তুলনায় বেশি পাচ্ছে। আগামীবার আমরাও অন্যান্য সবজির সঙ্গে রঙিন এই ফুলকপি চাষ করবো।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রীনা রাণী দে জানান, প্রথমে তো কৃষক আজিজুল রঙিন ফুলকপি চাষে রাজি হয়নি। সে বলেছিল লোকসানে পড়বে বিক্রি করতে পারবে না, তিনি এটা চাষ করবেন না। অনেক বুঝানোর পরে বললাম তুমি চাষ করো তোমার লাভই হবে। যদি লোকসান হয় তবে সেটা আমি দেখবোনি। পরে সে রাজি হওয়ায় আমরা চারা দেওয়ার পর রোপন করেছে। এখনতো এলাকায় ব্যাপক সাড়া পড়ে গেছে। আগামীতে সকলেই এটার আবাদ করতে ইচ্ছুক। বাজারে দামও পাচ্ছে বেশি। এখন কৃষক আজিজুলও খুশি, সবাই খুশি। তাছাড়া এই রঙিন ফুলকপিতে পুষ্টিও অনেক বেশি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারহানা মামুন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় নির্দেশনা মোতাবেক প্রতি ইঞ্চি জমি চাষাবাদের আওতায় আনার জন্য এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা কালিহাতী উপজেলায় প্রথমবারের মতো রঙিন ফুলকপি চাষ করিয়েছি কৃষককে দিয়ে। প্রকল্প থেকে এই চারা সরবরাহ করা হয়েছে আমাদের কৃষকদের জন্য। ১৫ শতক জমিতে চারা প্রদান করেছিলাম এবং চারার সাথে জৈব ও রাসায়নিক সারসহ বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছি কৃষককে উদ্বুদ্ধ করার জন্য।

তিনি বলেন, সে এবার ১৫ শতক জমিতে রঙিন ফুলকপি চাষ করে তার কাঙ্ক্ষিত ফলন পেয়েছে এবং এ ফলনে কৃষক অত্যান্ত সন্তুষ্ট। যেহেতু রঙিন ফুলকপি এটা আগে কখনো চাষ হয়নি কালিহাতী উপজেলায়। কাজেই এটি একটি আলাদা মাত্রা যোগ করেছে আমাদের কৃষিতে। বিভিন্ন স্থান থেকে তার মাঠ দেখার জন্য দর্শনার্থীরাও আসছে। দেখতে আকর্ষণীয় হওয়ায় অন্য ফুলকপি থেকে এটা বেশি দাম দিয়ে তারা কিনছে। আমরা আশা করছি এবার একজন কৃষক করেছে আগামীতে আরও বিস্তার ঘটাতে পারবো। আশে পাশের অন্য কৃষকরাও এটা দেখে তারাও আগ্রহী হচ্ছে এই রঙিন ফুলকপি আবাদের। রঙিন ফুলকপি সাধারণ ফুলকপির চেয়ে পুষ্টিগুণও অনেক বেশি।

এআরএস

Link copied!