বরিশাল ব্যুরো:
সেপ্টেম্বর ১, ২০২৪, ০৬:১০ পিএম
বরিশাল ব্যুরো:
সেপ্টেম্বর ১, ২০২৪, ০৬:১০ পিএম
বরিশাল নগরীর দর্শনীয় ও বিনোদনের স্থানগুলোতে চলছে ভাসমান দোকান বসানোর প্রতিযোগিতা। গড়ে তুলছে রকমারি খাবার ও মনোহারী দোকান বাণিজ্যিক। দোকানগুলোতে গত ১০ বছর ধরে চলছে নিরবচ্ছিন্ন অবৈধ বিদ্যুৎ সরবরাহ।
এ বিষয়ে, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি. (ওজোপাডিকো) নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক হোসেন অবৈধ ভাসমান দোকানিদের পক্ষে কথা বলেন।
৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর স্থানীয় বাসিন্দা, তরুণ ও যুবকরা ক্ষমতার প্রভাবে বরিশালের স্বাধীনতা পার্ক, চৌমাথা, বেলস পার্ক ও কাঞ্চন পার্ককে ঘিরে গড়ে তুলছে এসব ভাসমান দোকান।
সরেজমিনে, ৩১ আগস্ট বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ১৩ নং ওয়ার্ড স্বাধীনতা পার্ক, ২১ ও ২২ নং ওয়ার্ডের চৌমাথা লেক এলাকা ঘুরে দেখা গিয়েছে এই চিত্র।
চা, ফুচকা, চটপটি, হালিম, ঝালমুড়ি, মেয়েদের অলংকার ইত্যাদি নানা রকম বাণিজ্যিক দোকানগুলো এই দর্শনীয় এলাকা ঘিরে ফেলেছে। দৃষ্টি সীমানার আড়ালে চলে গেছে চৌমাথা লেক ও স্বাধীনতা পার্কের সৌন্দর্য।
এটি পুনরুদ্ধার ও সংস্কারের দাবি স্থানীয় বাসিন্দাসহ নগর চিন্তাবিদদের।
তাদের অভিযোগ, এসব দোকানগুলোতে সন্ধ্যা হলেই আলোকোজ্জ্বল হয়ে উঠে। প্রতিটি দোকানে রয়েছে তিন থেকে চারটি পাওয়ার বাল্ব।
নগর চিন্তাবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক কাজী মিজানুর রহমান বলেন, এগুলো নিয়ে আর কথা বলতে ইচ্ছে হয় না। বরিশালের ইতিহাস ঐতিহ্যের সাক্ষী এরকম অনেক সৌন্দর্য এবং স্থাপনা নষ্ট হয়ে পড়ে আছে দীর্ঘদিন। চৌমাথা লেক, স্বাধীনতা পার্ক, মুক্তিযোদ্ধা পার্ক ও বেলস পার্কগুলো জনগণের বিনোদনের স্থানে কি এখন আর কোনো জনগণ যাতায়াত করতে পারে? সব এখন হকার আর বখাটেদের দখলে।
তিনি বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ইতিহাস ঐতিহ্যের সাক্ষী দর্শনীয় ও বিনোদন স্থানগুলো দ্রুত সংস্কার ও সংরক্ষণ করুন। বিশেষ করে বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘর ও দর্শনীয় স্থানগুলো নিরাপদ রাখা, পর্যটকদের সুবিধা নিশ্চিত করা খুবই জরুরি বলে জানান তিনি।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিগত ১৫ বছরে নগরীর চৌমাথা লেকের পাড়ে গড়ে উঠেছে শতাধিক খাবারের দোকান। এ কারণে প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বরিশাল মহানগরীর সৌন্দর্য বর্ধনকৃত নবগ্রাম রোড চৌমাথা লেকটি নগরবাসীর গলার কাটা হয়ে উঠেছিল। তবে ওইসব অবৈধ স্থাপনা দখলের পেছনে সাবেক নগর পরিষদের দুই-একজন কাউন্সিলরের ভূমিকা ছিল। নগর পরিষদগুলোর বিবেকহীন এ কর্মকাণ্ড নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন সচেতন নাগরিক সমাজ।
লেকটির উত্তর প্রান্তে সড়ক অধিদপ্তরের জমি দখল করে জাতীয় মহাসড়কের ওপর নির্মিত শিশুপার্কটিও ইতোমধ্যে নগরীর অন্যতম দুর্ঘটনাস্থলে পরিণত হয়েছে। এমনকি এ পার্ক নির্মাণের নামে সিটি করপোরেশনের রাজকুমার ঘোষ রোডটির সাথে মহাসড়কের সংযোগ স্থলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে ৩শ পরিবারসহ দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের চলাচলের সহজ পথ বন্ধ করেছে সিটি কর্পোরেশন।
এ পার্কটির বিষয়ে সড়ক অধিদপ্তর ও নগর ভবনের মধ্যে এখন ঠেলাঠেলি শুরু হলেও প্রকৃত কোন সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি। লেকটির পাড় থেকে অবৈধ পথ খাবারের দোকানপাট উচ্ছেদের পরে তা পুনর্বহালে স্থানীয় এলাকাবাসী, মুসল্লী সহ ঐ মহাসড়ক ব্যবহারকারী এবং নগরীর বেশিরভাগ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, নবগ্রাম রোডের চৌমাথা সংলগ্ন এই লেকটিতে প্রতিদিন হাজারো নারী,পুরুষ ও শিশুদের যাতায়াত। কিন্তু লেকের পাড়ে স্বস্তিতে বসার সুযোগ নেই। পুরো লেক পাড় দখল করে রেখেছে হকারা। যতোটুকু জায়গা যাও ফাঁকা রয়েছে, তাও এই ভাসমান দোকান মালিকদের দখলে। বেশিরভাগ দোকান লোক রেখে চালায় স্থানীয় তরুণরা আর পাশেই চলে তাদের আড্ডা। কোনো কাস্টমারের সাথে ঝগড়াবিবাদ দেখলেই হামলা চালায় তারা।
পুলিশ প্রশাসন বলেন, বিষয়টি সিটি কর্পোরেশনের আওতায়। কোনো অভিযোগ না পেলে আমাদের করণীয় কিছু নেই। আর পার্কের আশেপাশে ভাসমান দোকান থাকবে কি থাকবে না এটা সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনর প্রশাসক বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার শওকত আলী বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করে খুব শীঘ্রই একটা পদক্ষেপ নেব। সুশীল সমাজের কেউ যদি আলোচনা ও পরামর্শ নিয়ে আসেন, তাহলে তাকে স্বাগতম। তখন তারা যা পরামর্শ দেবেন সেটাই হবে আমাদের পদক্ষেপ। এ দায়িত্ব সাংবাদিক সমাজও পালন করতে পারেন। পরস্পরের সহযোগিতা নিয়েই সুন্দর ও নিরাপদ বরিশাল গড়তে হবে বলে জানান প্রশাসক।
বিআরইউ