মনোহরগঞ্জ (কুমিল্লা) প্রতিনিধি:
সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৪, ০৮:১৯ পিএম
মনোহরগঞ্জ (কুমিল্লা) প্রতিনিধি:
সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৪, ০৮:১৯ পিএম
বন্যার পানি নামছেনা, পানিবন্দি মানুষের হাহাকার! জলাবদ্ধতা নিরসন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং খাল পুনঃখননের দাবিতে কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে এলাকাবাসী।
বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের নাথেরপেটুয়া বাজারে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে এলাকার ছাত্র-শিক্ষক, কৃষক-শ্রমিক, ব্যবসায়ী-রাজনীতিবিদসহ নানা শ্রেণি পেশার শত শত মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধনে বক্তারা উল্লেখ করেন, লাকসামের ফতেপুর থেকে শুরু হয়ে নোয়াখালীর চৌমুহনী পর্যন্ত দীর্ঘ ৬০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বেরুলা খালসহ বিগত দেড় দশকে এ অঞ্চলের প্রায় সবকটি খাল দখল করে বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, পুকুর, রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। দখলবাজি টেন্ডারবাজি করে অনেকেই লাখ লাখ টাকা কামিয়েছেন। আর দুর্ভোগে পড়েছেন এলাকাবাসী। এসব খাল দিয়ে যাতায়াতসহ বর্ষার পানি নিষ্কাশন আর শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদে সেচ কাজ হতো। কিন্তু খালগুলো দখল হয়ে পড়ায় বন্যার পানি সরতে পারছেনা। জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন লাখো মানুষ।
মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, অবৈধভাবে খাল দখল করে কেউ দোকান নির্মাণ করেছেন, কেউ পুকুরের সাথে একীভূত করে দখলে নিয়েছেন। অবৈধ দখলবাজির দিন শেষ।
তিনি বলেন, শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা কর্মসূচির অন্যতম একটি দফা ছিল খাল খনন কর্মসূচি। কিন্তু বিগত দিনে আওয়ামী লীগের লোকেরা দখলবাজি করে সকল খাল দখলে নিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। যারা খাল দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছেন তাদেরকে এসব স্থাপনা নিজ দায়িত্বে সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। এ ব্যাপারে আমরা অন্তর্বর্তীকালের সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
মনোহরগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমির হাফেজ নুরুন্নবী বলেন, বিগত সরকারের সোনার ছেলেরা চর দখলের ন্যায় খালগুলো দখল করে নিয়েছে। দেশের অন্যান্য স্থানে বন্যা হয়, আবার ভাটার সাথে পানি নেমেও যায়। কিন্তু দীর্ঘ এক মাস হতে চলেছে এ অঞ্চলের পানি কমছে না। তিনি খালগুলো দখলমুক্ত করতে আমরা অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারীদের নিজ দায়িত্বে তাদের স্থাপনাগুলো সরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানান। তা না হলে ছাত্র-জনতার রোষানলে এসব অবৈধ স্থাপনা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। এ বিষয়ে তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি চিকিৎসক সাহাবুদ্দিন হায়দার বলেন, সকল বৈষম্য দূর করতে হবে। যারা অবৈধভাবে খাল দখল করে রেখেছেন তাদেরকে নিজ হাতে, নিজ দায়িত্বে স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানান। নতুবা এলাকাবাসী এসব স্থাপনা গুড়িয়ে দিবে।
উত্তর হাওলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জাফর ইকবাল বাচ্চু বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আমরা দুঃশাসন থেকে মুক্তি পেয়েছি। যারা খাল দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছে তারা দেশের শত্রু, জাতির কলঙ্ক। এ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসনে অবিলম্বে এ খাল দখলমুক্ত করতে হবে।
নাথেরপেটুয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুবকর বলেন, এ খাল দিয়ে আমরা পালতোলা নৌকা নিয়ে যাতায়াত করতাম, মালামাল পরিবহণ করতাম। এখান থেকে লাকসাম এবং চৌমুহনী অনায়াসে যাতায়াত করা যেত। এ খালে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু খালটি দখল হয়ে যাওয়ায় প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপর্যয়সহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। চলমান বন্যায় প্রায় একমাস এলাকার মানুষ পানিবন্দি। পানি সরতে পারছে না। খালটি অবিলম্বে মুক্ত করা হোক।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আরিফুর রহমান বলেন, যেখানে সেখানে খালে বাঁধ দিয়ে, স্থাপনা নির্মাণ করে পানি প্রবাহ বন্ধ করা হয়েছে। অন্যান্য স্থানে পানি কমে গেছে কিন্তু আমাদের এলাকার পানি কমছে না, কৃত্রিম এ জলাবদ্ধতা নিরসনে খালটি দখল মুক্ত করতে হবে।
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন, ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী, ইউনিয়ন জামায়াতের আমির আব্দুল গোফরান ভুঁইয়া, ছাত্রনেতা সাইফুদ্দিন মাহমুদ লিটন, মিজানুর রহমান সবুজ, ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন, আরিফুল ইসলাম পরশ, আব্দুল মতিন মেম্বার, মো. কামাল হোসেন, ইমরান হোসেন মুন্না, রবিউল হোসেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সমন্বয়ক নাইমুর রহমান, হাফেজ শরাফত করীম প্রমুখ।
বিআরইউ