সিলেট ব্যুরো
মে ৫, ২০২৫, ০৭:০৮ পিএম
সিলেট ব্যুরো
মে ৫, ২০২৫, ০৭:০৮ পিএম
প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের আন্দোলনে সারাদেশের ন্যায় সিলেটেও ক্লাস ফেলে কর্মবিরতিতে নামেন উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের ব্যানারে সোমবার (৫ মে) সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ১ঘন্টা কর্মবিরতি পালন করেন তারা।
জানা যায়, ১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণসহ তিন দফা দাবিতে সারাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা টানা কর্মবিরতি পালন করার ঘোষণা দেন। কেন্দ্রীয় ঘোষিত কর্মসূচি মোতাবেক ‘৫মে থেকে ১৫মে’ পর্যন্ত ১ঘন্টা, ‘১৬মে থেকে ২৫মে’ পর্যন্ত ২ঘন্টা, ২৬মে থেকে পূর্ণ দিবস। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মবিরতি কর্মসূচি চলবে।
সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবিগুলো হচ্ছে- সরকার গঠিত কনসালটেশন কমিটির সুপারিশের যৌক্তিক সংস্কার করে সহকারী শিক্ষক পদে এন্ট্রি পদ ধরে ১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ। ১০ বছর ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা নিরসন। প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতিসহ দ্রুত পদোন্নতি প্রদান।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট জেলা কমিটির সভাপতি প্রমথেশ দত্ত বলেন, ‘বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা উচ্চ শিক্ষা নিয়ে যুক্ত হয়েছেন। কিন্তু সরকার শিক্ষকদের প্রাপ্য মর্যাদা দিচ্ছে না। আমাদের দাবি ১০ম গ্রেড ছিল। দেশের সার্বিক দিক বিবেচনা করে আমরা ১১তম গ্রেড দাবি করছি। ২০০৯ সালে সহকারী শিক্ষকরা পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। ১৬বছরের মধ্যে আর কোনো পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। দেশের মোট বিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধেক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদশূন্য থাকার পরও পদোন্নতি দিচ্ছেন না। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা করা হচ্ছে। একজন শিক্ষক ২৫/৩০ বছর চাকুরি করার পরও পদোন্নতি পাচ্ছেন না। একই পদে থেকে অবসরে যাচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, ‘অন্যদিকে ২০১৫ সালের জাতীয় পে-স্কেলের নীতিমালা অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে একজন সরকারি চাকুরিজীবী ১০বছর ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার কথা। কিন্তু শিক্ষকদেরকে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এভাবে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন করা কোন ভাবেই সম্ভব হবে না। প্রধান উপদেষ্টার নিকট এই দাবিগুলো বাস্তবায়ন করার জন্য জোর দাবি জানাই।’
সহকারী শিক্ষক সমিতির সিলেট জেলা সিনিয়র সহ-সভাপতি শেখ নুরুল ইসলাম বলেন, ‘ন্যায্য দাবি আদায়ে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি পালনে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। আজ ১ ঘণ্টা কর্মবিরতি সিলেট জেলা তথা আমাদের গোলাপগঞ্জে যথাযথ ভাবে পালন করা হয়েছে। সে জন্য সিলেট জেলার সহকারী শিক্ষকবৃন্দকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই এবং আগামী দিনগুলোতে কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানাই।’
সহকারী শিক্ষক সমিতির সিলেট মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ নেওয়াজ বলেন, ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক ঐক্য পরিষদের উত্থাপিত দাবি শুধু শিক্ষকদের অধিকার নয়, এটি দেশের শিক্ষার ভিত্তিকে সুদৃঢ় করার প্রশ্ন। সহকারী শিক্ষকরা আজও ১১তম গ্রেডের নিচে বেতন পেয়ে থাকেন, যেখানে তাঁদের কাজের পরিধি ও দায়দায়িত্ব মূল শিক্ষকদের সমতুল্য। যোগদানের দুই যুগ পার হলেও অধিকাংশ শিক্ষক আজও পদোন্নতির সুযোগ পাননি। এতে পেশাগত উৎকর্ষ ব্যাহত হচ্ছে, শিক্ষার মান উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘ঐক্য পরিষদ থেকে আমরা যে দাবিগুলো তুলেছি—যেমন: ১১তম গ্রেডে বেতন স্কেল, উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তিতে জটিলতা নিরসন ও প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ দ্রুত পদোন্নতি। এই চাওয়া কোনো বিলাসিতা নয়, বরং ন্যায্য অধিকার। সরকারের উচিত অবিলম্বে এই যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নের মাধ্যমে শিক্ষকদের মধ্যে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করা এবং প্রাথমিক শিক্ষার ভিতকে আরও শক্তিশালী করা।’
আরএস