আব্দুল্লাহ আল আমীন, ময়মনসিংহ
জুন ২৩, ২০২৫, ০২:০৩ পিএম
ময়মনসিংহের সড়কে যেন এক অনবরত মৃত্যুর মিছিল চলছে। প্রতিদিনই জেলার কোথাও না কোথাও ঘটছে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা। প্রাণ হারাচ্ছেন পথচারী, শিক্ষার্থী, দিনমজুর, গৃহবধূ ও শ্রমজীবী সাধারণ মানুষ।
সাম্প্রতিক দুর্ঘটনাগুলো জনমনে সৃষ্টি করেছে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ।
গতকাল তারাকান্দা উপজেলার বাগুন্দা এলাকায় যাত্রীবাহী বাস ও সিএনজি চালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই দুইজন নিহত হন। আহত হয়েছেন অন্তত তিনজন। এর আগের সপ্তাহে ফুলপুর উপজেলায় দ্রুতগতির ট্রাকের ধাক্কায় একটি মোটরসাইকেল দুমড়ে-মুচড়ে গেলে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান কলেজপড়ুয়া দুই বন্ধু।
পূর্ববর্তী মাসগুলোতে শহরের ব্রহ্মপুত্র সেতু এলাকা, ত্রিশাল উপজেলার ধানক্ষেত সড়ক এবং ভালুকার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে একাধিক প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটেছে। বেপরোয়া গতির যানবাহন, লাইসেন্সবিহীন চালক, ফুটপাত দখল, অপ্রতুল ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং সড়কের করুণ অবস্থা এসব মৃত্যুর মূল কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
নগরবাসীরা বলছেন, “প্রতিদিনই দুর্ঘটনার খবর শুনি। এখন সড়কে নামলেই আতঙ্ক লাগে।”
সড়ক দুর্ঘটনায় পরিবারের সদস্য হারানো আফসার উদ্দিন বলেন, “আমার ছোট ভাই গত মাসে স্কুল থেকে ফেরার পথে দুর্ঘটনায় মারা গেছে। আজও বিশ্বাস করতে পারি না। আমাদের মতো আরও কত পরিবার যে এমন বেদনার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে!”
জেলা ট্রাফিক পুলিশের তথ্যমতে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ময়মনসিংহ জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৬০টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৭৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন শতাধিক। তবে বেসরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. মোখতার আহমেদ বলেন, “সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সড়ক সংস্কার, ট্রাফিক ব্যবস্থার আধুনিকায়ন এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে আমরা কাজ করছি। পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনেরও দায়িত্ব রয়েছে। খুব শিগগিরই একটি কার্যকর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, সড়ক নিরাপত্তায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল, প্রশিক্ষণহীন চালক এবং অনিয়ন্ত্রিত যানবাহনের চলাচল নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। দুর্ঘটনা রোধে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, চালকদের বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ, সড়ক মানোন্নয়ন ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বর্তমান বাস্তবতায় প্রশ্ন উঠছে—আর কত প্রাণ ঝরলে সজাগ হবে কর্তৃপক্ষ? সড়ক যেন আর কারও জন্য মৃত্যুফাঁদ না হয়ে ওঠে, সেই প্রত্যাশাই এখন ময়মনসিংহবাসীর।
ইএইচ