জাজিরা (শরীয়তপুর) প্রতিনিধি:
জুলাই ৯, ২০২৫, ০১:১৮ পিএম
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার মাঝিরঘাট এলাকায় পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধে হঠাৎ ধস নেমেছে। মাত্র একদিনের ব্যবধানে বসতবাড়ি, দোকানপাটসহ অন্তত ২০টি স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
ভাঙন থামেনি—বরং ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশের এলাকায়। স্থানীয়দের আশঙ্কা, দ্রুত প্রতিরোধ না করলে হাটবাজার ও রাস্তাঘাটসহ শতাধিক স্থাপনা পদ্মায় বিলীন হয়ে যেতে পারে।
সোমবার বিকেলে পদ্মা সেতু রক্ষা বাঁধে প্রথম ফাটল দেখা দেয়। কিছু বোঝার আগেই নদীর গর্জনে দোকান ও ঘরবাড়িগুলো একে একে পদ্মায় ধসে পড়ে। ভাঙনের শিকার স্বপন মাদবর বলেন, হঠাৎ পানি থেকে একটা ভাঙার শব্দ পেলাম। দৌড়ে গিয়ে দেখি দোকানগুলো ভেঙে পড়ছে। ঘরের আসবাব টেনে সরানোর আধা ঘণ্টার মধ্যেই সব নদীতে। মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও রইল না।
জিয়াউর রহমান নামে এক দোকান মালিক বললেন, দুপুরে খেতে বাড়ি গিয়েছিলাম। ফিরে এসে দেখি দোকান নেই। সর্বস্ব হারালাম। এখন পরিবার নিয়ে কোথায় যাব, কিভাবে চলব—কিছুই বুঝতে পারছি না।
এটাই প্রথম নয়। স্থানীয়দের ভাষ্য, গত নভেম্বর ও চলতি বছরের জুনে বাঁধের আরও দুই দফা ৩০০ মিটার অংশ ভেঙে পড়ে। তবে দ্রুত সংস্কারে পদক্ষেপ না নেওয়াতেই এবারকার ভয়াবহ ভাঙন বলে অভিযোগ তাঁদের।
জানা গেছে, ২০১০-১১ অর্থবছরে পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকার জন্য প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। ব্যয় হয় ১১০ কোটি টাকা। পরে ২০২৩ সালের নভেম্বরে বাঁধের পূর্ব নাওডোবা এলাকায় প্রথম ভাঙন দেখা দেয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সংস্কারের দায়িত্ব নেয় এবং দুই কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে সিসি ব্লক ও জিওব্যাগ ফেলা হয়। কিন্তু চলতি বছরের ৭ জুন উজান ও ভাটির মিলিত চাপে আবারও নতুন করে ২০০ মিটার ভেঙে যায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গত বছরের ভাঙনের পরও যথাসময়ে পূর্ণাঙ্গ সংস্কার হয়নি। এবারও তারা আগাম সতর্কতা পেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
তবে শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান বলেন, ‘বর্তমান ভাঙনের সঙ্গে আগের ভাঙনের কোনো সম্পর্ক নেই। আগের মেরামতকৃত অংশ অক্ষত আছে। পাশাপাশি নতুন জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। আমরা দ্রুততার সঙ্গে কাজ করেছি, তাতে আমরা প্রশংসার দাবিদার।’
তিনি জানান, পুরো এলাকাজুড়ে নদীর তলদেশে মাটি সরে যাচ্ছে। এক কিলোমিটার বাঁধ এখন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। বাঁধ মজবুতকরণে একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে বর্ষার আগেই পূর্ণাঙ্গ সংস্কার সম্ভব নয় বলেও স্বীকার করেন তিনি।
ভাঙনের শিকার হয়েছেন রব শেখ, জিয়াউর রহমান ফকির, সুজন ফকির, জাহাঙ্গীর ফকির, আবুল বাসার মাদবর, খলিল মাদবর, দেলাওয়ার মাদবরসহ অনেকে।
তাঁদের কেউই ঘরবাড়ি বা দোকান সরিয়ে নিতে পারেননি। আরও অন্তত ৩০টি ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিজেরাই সরিয়ে নিচ্ছেন স্থানীয়রা।
ভাঙনের খবর পেয়ে জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী রায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, বাঁধের একাধিক অংশ পদ্মায় বিলীন হয়েছে। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। সরকারিভাবে তাঁদের সহায়তা দেওয়া হবে।
বিআরইউ