কাজী আনোয়ারুল ইসলাম টুটুল, রাজবাড়ী
জুলাই ৯, ২০২৫, ০৫:৩৬ পিএম
চেক ডিজঅনার, যৌতুক নিরোধ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার ক্ষেত্রে আদালতে সরাসরি মামলা দায়েরের পরিবর্তে লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে আপসের বাধ্যবাধকতা সংক্রান্ত আইন মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত গেজেট বাতিলের দাবিতে রাজবাড়ীতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন আইনজীবীরা।
বুধবার দুপুর ২টায় রাজবাড়ী জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে আদালত প্রাঙ্গণে ঘণ্টাব্যাপী এই মানববন্ধনে সিনিয়র ও তরুণ আইনজীবীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান বাচ্চু এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক ও পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক।
বক্তারা বলেন, গত ১ জুলাই প্রকাশিত গেজেট অনুযায়ী, চেক ডিজঅনার, যৌতুক নিরোধ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, পারিবারিক আদালত আইন ও সম্পত্তি বণ্টনসংক্রান্ত মামলাগুলো আর সরাসরি আদালতে দায়ের করা যাবে না। এসব বিষয়ে প্রথমে স্থানীয় লিগ্যাল এইড কমিটির মাধ্যমে আপসের চেষ্টা করতে হবে, ব্যর্থ হলে তবেই আদালতে মামলা করা যাবে।
বক্তারা অভিযোগ করেন, এই গেজেট বিচারপ্রার্থীদের সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করবে। বিশেষ করে নারী ও শিশু নির্যাতনের মতো স্পর্শকাতর মামলায় আপসের বাধ্যবাধকতা ভুক্তভোগীদের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। এতে বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা, হয়রানি এবং সামাজিক চাপ আরও বাড়বে।
অ্যাডভোকেট কেএ বারী, অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট কামরুল আলম এবং অ্যাডভোকেট সফিকুল ইসলাম সফিক বলেন, “মামলা দায়েরের অধিকার একটি মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার। লিগ্যাল এইড কোনো বিচারিক কর্তৃপক্ষ নয়; তাদের মাধ্যমে আপস বাধ্যতামূলক করা সংবিধানবিরোধী। এটি আদালতে প্রবেশের পথ রুদ্ধ করার সামিল।”
তারা আরও বলেন, “গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা উপেক্ষা করে আপস চাপিয়ে দেওয়া মানে দুর্বল মানুষকে আরও দুর্বল করে তোলা। নারী, শিশু ও পারিবারিক সহিংসতার শিকাররা এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।”
জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট লিয়াকত আলী বাবু বলেন, “চেক ডিজঅনার মামলায় অভিযুক্তরা অনেক সময় সশস্ত্র বা প্রভাবশালী হয়। আপস বাধ্যতামূলক হলে তারা প্রভাব খাটিয়ে অভিযোগ ধামাচাপা দিতে পারে।”
সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট স্বপন কুমার সোম বলেন, “এই গেজেট বিচারব্যবস্থার মেরুদণ্ডে আঘাত। সরকার যদি এটি বাতিল না করে, তাহলে এটি বিচারপ্রার্থী সাধারণ মানুষের জন্য চরম ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।”
জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “গেজেটটি শুধু আইনজীবীদের পেশাকেই দুর্বল করবে না, বরং সাধারণ মানুষকে বিচারপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করবে। সরকারকে অবিলম্বে এটি বাতিল করতে হবে, নতুবা সারাদেশব্যাপী আইনজীবীরা কঠোর আন্দোলনে নামবে।”
সভাপতি অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান বাচ্চু বলেন, “নতুন এই বিধান কার্যকর হলে মানুষ বিভ্রান্ত হবে— কোথায় যাবে, কীভাবে মামলা করবে। এতে মামলা দাখিলে সময়ক্ষেপণ, হয়রানি ও বিচার বিলম্ব বাড়বে। তাই গেজেটটি দ্রুত বাতিল করা প্রয়োজন।”
ইএইচ