দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি:
জুলাই ২২, ২০২৫, ০১:৩৫ পিএম
একটি মা, একটিমাত্র সকাল, আর একটি চিরচেনা পথ। মেয়েকে স্কুল থেকে আনতে গিয়েছিলেন রজনী খাতুন। কিন্তু সেই পথই হয়ে ওঠে তাঁর জীবনের শেষ গন্তব্য।
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ এলাকায় সোমবারের বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন রজনী ইসলাম (৪৫)। মঙ্গলবার সকালে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের সাদিপুর গ্রামে তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
সকাল ৯টায় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। অংশ নেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল হাই সিদ্দিকী, ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম চৌধুরীসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও শত শত শোকাহত মানুষ। শিশুসন্তানদের বুকফাটা কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে আকাশ-বাতাস।
রজনী ছিলেন, সাদিপুরের জহুরুল ইসলামের স্ত্রী। রাজধানীর উত্তরায় দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে বসবাস করতেন। সোমবার সকালে ছোট মেয়ে ঝুমঝুমকে (পঞ্চম শ্রেণি) আনতে স্কুলে যান। সে সময় একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে স্কুল চত্বরে। প্রাণ হারান রজনী।
ভাগ্যক্রমে রক্ষা পায় মেয়ে ঝুমঝুম, কারণ সে সময় সে ছিল স্কুল ক্যান্টিনে।
রজনীর বড় ছেলে এস এম রুবাই এইচএসসি পরীক্ষার্থী, ছোট ছেলে রোহান (ষষ্ঠ শ্রেণি) সেদিন অসুস্থ থাকায় স্কুলে যায়নি। দুর্ঘটনার সময় জহুরুল ছিলেন চট্টগ্রামে ব্যবসায়িক সফরে। স্ত্রীর মৃত্যুর খবর শুনে দ্রুত ঢাকায় ফিরে সামরিক হাসপাতালে মরদেহ শনাক্ত করেন।
রাতে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তরের পর সাদিপুরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু হয়। পথে মেহেরপুরের গাংনির বাওট গ্রামে রজনীর বাবার বাড়িতে কিছুক্ষণ লাশ রাখা হয়। ভোরে পৌঁছায় নিজ গ্রামে, আর সকাল ১০টায় পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
রজনীর স্বামী জহুরুল ইসলাম বলেন, মেয়েকে আনতে গিয়ে রজনী আর ফিরবে না—এটা কখনো ভাবিনি। শরীরে আগুনে পোড়ার দাগ ছিল না, মাথার পেছনে প্রচণ্ড আঘাত ছিল। সম্ভবত বিমানের কোনো অংশ আঘাত করেছিল। মেয়েটা অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছে—আল্লাহর অশেষ রহমত।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল হাই সিদ্দিকী বলেন, একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা শুধু একজন মা নয়, ছিন্ন করে দিয়েছে একটি গোটা পরিবারকে। শিশুদের ভবিষ্যৎ আলোকিত হোক—আমরা সেই প্রার্থনাই করি।
বিআরইউ