নাগরপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
জুলাই ২৭, ২০২৫, ০২:৪৪ পিএম
টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার দপ্তিয়র ইউনিয়নের ধুনাইল গ্রাম হয়ে টাঙ্গাইল-আরিচা মহাসড়কের সংযোগস্থল পর্যন্ত বিস্তৃত একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এবং এর মধ্যবর্তী নদীর ওপর এখনো কোনো পাকা সেতু নেই। ফলে দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের পুল ও কাঁচা রাস্তা ব্যবহার করে চলাচল করতে হচ্ছে আশপাশের আট গ্রামের ৮-১০ হাজার মানুষকে।
ব্রিজটি ভাদ্রা বাজার হতে পশ্চিমে ধুনাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন স্থানে অবস্থিত।
প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ, বিশেষ করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, কৃষক, ব্যবসায়ী এবং মসজিদগামী মুসল্লিরা এই পথ ব্যবহার করেন। নামাজের সময় শত শত মুসল্লিকে কাঠের পুল পার হয়ে স্থানীয় জামে মসজিদে যেতে হয়, ফলে ধর্মীয় কর্মকাণ্ডেও দুর্ভোগ পোহাতে হয় এলাকাবাসীকে।
সরেজমিনে জানা গেছে, সারুটিয়াগাজী, পাঁচআড়রা, চাষাভাদ্রা, ধুনাইল ও তিরছাসহ আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারা প্রতিদিন এই কাঁচা সড়ক ও ঝুঁকিপূর্ণ পুল ব্যবহার করে স্কুল, কলেজ, বাজার ও জরুরি প্রয়োজনে যাতায়াত করেন।
নদী পারাপারের জন্য এক সময় নৌকার ওপর নির্ভর করতেন এলাকাবাসী। পরে তারা নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ১০০ ফুট দীর্ঘ একটি কাঠের পুল নির্মাণ করেন। বর্তমানে সেই পুলটিই শিশু, নারী, বৃদ্ধসহ সব বয়সী মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা, যদিও তা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং যেকোনো সময় ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এছাড়া প্রায় ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি এখনো কাঁচা। বর্ষা মৌসুমে এখানে হাঁটু পানি জমে যায়, আর কাদায় চলাচল হয়ে পড়ে অত্যন্ত কষ্টসাধ্য।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তারা একটি লিখিত প্রতিবেদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে দাখিল করেছেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে—রোড কোড ৩৯৩৭৬৫০১৫ অনুযায়ী সড়কটি পাকাকরণ এবং নদীর ওপর একটি পাকা সেতু নির্মাণ সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।
ধুনাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী লাবনী আক্তার বলেন, “বৃষ্টির দিনে স্কুলে যাওয়া যায় না। কাঠের পুল কাঁপে, রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে পড়ে। কয়েকদিন আগে একজন পুল থেকে পড়ে গিয়েছিলেন। প্রতিদিন ভয় নিয়ে যাতায়াত করতে হয়।”
স্থানীয় বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম বাবু বলেন, “জনগণের টাকায় কাঠের পুল হয়েছে। কতদিন আর এতে আটকে থাকব? সরকারের উচিত দ্রুত পাকা সেতু ও রাস্তা নির্মাণ করা।”
এ বিষয়ে দপ্তিয়র ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম. ফিরোজ সিদ্দিকী বলেন, “আমাদের ইউনিয়নের আর্থিক সামর্থ্য সীমিত। বিষয়টি এলজিইডিকে জানিয়েছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে পরিদর্শন ও তদন্ত সম্পন্ন করেছে। আশা করছি, দ্রুত নির্মাণকাজ শুরু হবে।”
এলজিইডির নাগরপুর উপজেলা প্রকৌশলী মো. তোরাপ আলী বলেন, “ব্রিজ ও রাস্তাটির বিষয়ে একটি প্রতিবেদন পেয়েছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। উন্নয়ন কাজ শিগগিরই শুরু হবে বলে আমরা আশাবাদী।”
এলাকাবাসীর এখন একটাই প্রত্যাশা—বেহাল কাঠের পুল নয়, হোক একটি স্থায়ী ও নিরাপদ সেতু; কাঁচা রাস্তা নয়, হোক পাকা, মজবুত চলাচলের পথ। উন্নয়ন যেন শহর ছাড়িয়ে পৌঁছে যায় প্রত্যন্ত গ্রামেও—এই দাবিই এখন মুখ্য।
ইএইচ