Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪,

কথার কথায় হাসো, অনেক দিন একসাথে বাঁচো

রাজু আহমেদ (প্রাবন্ধিক):

রাজু আহমেদ (প্রাবন্ধিক):

এপ্রিল ২৩, ২০২৪, ১১:২৬ এএম


কথার কথায় হাসো, অনেক দিন একসাথে বাঁচো

কারো সাথে আপনার যেটুকু দূরত্ব তা কথার কারণে হয়েছে। আপনাকে দুবেলা খাওয়াতে ব্যর্থ হয়েছে আর আপনি তাকে ছেড়ে এসেছেন-এমনটা সাধারণত ঘটে না। কিন্তু কেউ আপনাকে বাঁকানো কথা বলেছে, খোঁটা দিয়েছে কিংবা নিন্দা করেছে আর সেটা জেনে আপনি তাকে মনে ঠাঁই দিবেন-এমনটা খুব কম ঘটে। বাধ্য হয়ে আমাদের কোথাও কোথাও শারীরিকভাবে আটকে থাকে হয়, তাল মিলিয়ে পা ফেলতে হয় কিংবা হাসতে বাধ্য হতেও হয় কিন্তু যে কথা দ্বারা আঘাত দিয়েছে তারে ভালোবেসে থাকা মুশকিল! যে শরীরে আঘাত করে সেটা দিনশেষে মন থেকে হারিয়ে যেতে পারে কিন্তু যে বকা দিয়েছে, কণ্ঠের আঘাতে করেছে অশ্রুসজল তারে ভুলে যাওয়া কিংবা ক্ষমা করা সহজ নয়! হয়তো মহামানবেরা তাদের সহজে ক্ষমা করতে পারে! সবাই তো আর মহামানব হয় না!

অযোগ্য মানুষ অন্যকে কথার আঘাতে জর্জরিত করে, খোঁচা দিয়ে খুব মজা পায়! যারা উপকার করে সেটা বারবার বলে বেড়ায়, দুর্বলতায় আঘাত করে তর্কে জিততে চায় কিংবা সামর্থ্যহীনতায় সুঁই দিয়ে খোঁচায় তারা অমানুষের কাতারবদ্ধ!
কে, কবে আপনাকে মেরেছিল চড় হয়ত ভুলে গেছেন কিন্তু চোখ বন্ধ করলেই ভেসে উঠবে সারাজীবনে শোনা সব কটু কথা! স্থান-কাল-পাত্র সমেত! অকথ্য ভাষায় কু-কথা কান শুনে মনকে মনে রাখতে বলেছে! কাজেই আঘাতপ্রাপ্তের মনে আঘাতদাতার আর সম্মান-সারল্যের স্থান-অবস্থান থাকে না। ঘৃণা জেগে অস্তিত্ব মুছে যায়। তখন প্রতিশ্রুতি প্রতারণায় বদলে যায়।

কারো কোন উপকার করতে না পারলেও যদি হাসিমুখে দু’টো সান্ত্বনার কথা শোনাতে পারেন তবে সেই মানুষ দেবতা হয়ে ওঠে। সবাই তাকে সম্মান করতে শুরু করে! অথচ অনেক ভরণ-পোষণ দিয়ে যদি উঠতে-বসতে কথা শোনান, উপকারের
অযাচিত খোঁটা দেন আর খাটো করার কথা বলেন, তবে কেউ তাকে পছন্দ করবে সে আশা বেকুবের! ভয় এবং সম্মান সমান্তরালে চলে না। কাউকে দমিয়ে রাখতে ক্ষমতা যথেষ্ট কিন্তু কারো থেকে সম্মান পেতে হলে তাকে ভালোবাসতে হয় এবং সম্মান দিতে হয়। যারা ভালো কথা বলে তাদের সুবিন্যস্ত সুচিন্তায় চিত্ত আলোড়িত হয়।

যার মুখের ভাষা খারাপ তার অন্য অনেক কিছুই ভালো-সেটা বিশ্বাসযোগ্য নয়! মুখের বুলি অন্তরে পোষণ করা ছায়াই প্রতিফলিত করে। কার মধ্যে কী আছে তা বর্ধিষ্ণু বচন বের করে আনে! এই যে অচেনা মানুষে বন্ধুত্ব হয়, একজন আরেকজনের বিয়োগে মর্মন্তুদ ব্যথা অনুভব করে কিংবা বিরহে শূন্যতার সৃষ্টি হয় তা ওই কথার কারণেই। রূপ দিয়ে সাময়িক সময়ের জন্য আকৃষ্ট করে রাখা যায়, বিত্ত-বৈভব দিয়ে ভোগের বয়স পর্যন্ত মোহাবিষ্ট করা যায় কিন্তু মানুষে-
মানুষে বিনে সুতার যে মধুর সম্পর্ক তৈরি হয় তা কথায়! কথা থেকেই বিশ্বাস- ভরসার সূচনা। মন্দ কথকের জীবন ভুক্তভোগীর গোপন ভৎসনায় ভরাডুবি হয়।

সম্মান কামাইয়ের জীবনের সাথে যোগসূত্র তৈরি করে সুবচন! সেই সুবচন নির্বাসনে গেলে আমলযোগ্য আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না!

সুন্দর কথা নিজস্ব মূল্য আছে। হাসিমুখের কথা চিত্তাকর্ষক আঙিনা তৈরি করতে পারে! যেখানে সৌন্দর্য-মাধুর্য থৈ থৈ করতে থাকে। অনেক অপূর্ণতার মাঝেও সারাজীবন তৃপ্তি-তুষ্টির সাথে অতিবাহিত করা যায়। জীবনের নামে কোনো অভিযোগ না দিয়েও হেসে-খেলে একটা জীবন কাটানো যায়। যে মানুষ প্রিয় মানুষ হয়ে উঠেছে, যে মানুষের অস্তিত্ব মন ধরে রেখেছে সে মানুষ কু-কথা বলে না! যে কু-কথা বলে না সে কুকর্ম করতে পারে না। কুচিন্তার মচ্ছবও সেথা ধরে না! তাঁর কথা হাসিমুখের সাথে সমানুপাতিক হয়!

যারা আত্মজন, যারা শ্রদ্ধাভাজন -তাদের কথাই তাদেরকে সে আসনে সমাসীন করেছে! মানুষ কথার প্রেমে বাঁচে, কথার রসেই থাকে। দেহ সাময়িকের জন্য দেহ ধরে রাখতে পারে, বাকি সবের ব্যাপারেও অনুরূপ বিচার চলে তবে মনের ঠাঁই, সেথা উচ্চাসন-নিম্নাসন সে কথাতেই রচে। কথার সাথে হাসি রাখলে সে ভুবনজয়ী হবে। তুমিও সে সম্ভাবনা থেকে দূরে থেকো না! কথার কথায় হাসো, অনেক দিন একসাথে বাঁচো।

বিআরইউ

Link copied!