Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০২৪,

হাশেম রেজাকে নিয়ে অপতৎপরতা পিবিআইকে মামলা তদন্তের নির্দেশ

মো. মাসুম বিল্লাহ

সেপ্টেম্বর ২, ২০২২, ০১:২৯ এএম


হাশেম রেজাকে নিয়ে অপতৎপরতা পিবিআইকে মামলা তদন্তের নির্দেশ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সাথে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য, দৈনিক আমার সংবাদ ও দ্য ডেইলি পোস্টের সম্পাদক ও প্রকাশক হাশেম রেজার বিরুদ্ধে ফের অপতৎপরতা শুরু করেছে সংঘবদ্ধ একটি চক্র। চুয়াডাঙ্গা-২ আসন ঘিরে তার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে বলে মনে করছেন হাশেম রেজা। শুধু অপতৎপরতা নয়, চক্রটি হাশেম রেজাকে হত্যার পরিকল্পনাও করছে, সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি অডিও বার্তা ফাঁস হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে দ্য ডেইলি পোস্ট নামে একটি ইংরেজি পত্রিকা প্রকাশনার অনুমতিপত্র পেয়েছেন হাশেম রেজা। সরকারি নিয়ম ও আইনের সব ধরনের যোগ্যতা বিবেচনা ও তদন্ত শেষে ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় পত্রিকার ডিক্লারেশন দিয়েছে। অথচ চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার জনৈক বাবুর আলী ও আশরাফুল হক জাকির পত্রিকার ডিক্লারেশনের ক্ষেত্রে ভুয়া জাল সার্টিফিকেট ব্যবহার করেছেন-সহ নানা মনগড়া, ভিত্তিহীন তথ্য দিয়ে মহাপরিচালক ডিএফপি, তথ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগে তারা ঢাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাবিয়া আক্তারের সই স্বাক্ষর করেছেন। বিষয়টি জানার পর গত ৩০ আগস্ট বিজ্ঞ সিএমএম আদালত, ঢাকায় একটি জাল-জালিয়াতি মামলা দায়ের করেছেন হাশেম রেজা। সিআর মামলা নং-৬২০/২০২২। তার পক্ষে মামলাটির বাদী হয়েছেন দ্য ডেইলি পোস্টের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আজাদ হোসাইন। বাদীপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করছেন ঢাকা জর্জকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী আব্দুল হামিদ ভূঁইয়া। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশনা দিয়েছেন।

শুধু মনগড়া তথ্যে অভিযোগ নয়, হাশেম রেজাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছেন জনৈক বাবুর আলী চক্রটি। দীর্ঘদিন ধরেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করে আসছে সংঘবদ্ধ ওই চক্র। বিভিন্ন নামসর্বস্ব কথিত অনলাইন নিউজ পোর্টালে মিথ্যা তথ্য প্রচার করেও হাশেম রেজার সামাজিক ও রাজনৈতিক দৃঢ় অবস্থান নষ্ট করতে ব্যর্থ হয়ে এখন সরাসরি হত্যার পরিকল্পনা করছে চক্রটি।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইতোমধ্যে ছকও কষেছে চক্রটি। হত্যার পরিকল্পনায় অংশ নেয়া চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থানার কুড়ুলগাছি গ্রামের নজির আহম্মেদের ছেলে বাবুর আলী ওরফে বাবু ও মৃত নাসির ডাক্তারের ছেলে জাকির হোসেনের কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপ ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন মহলে। ওই অডিওতে তাদের বলতে শোনা যায়— হাশেম রেজাকে হত্যায় সাত মিনিটের মিশন ফিক্সড করেছে তারা।

এ ঘটনায় দর্শনা থানায় করা সাধারণ ডায়েরির ভিত্তিতে আদালতে একটি মিস কেস দায়ের করা হয়েছে। যার নম্বর-১৮৬/২০২২। আদালতের স্মারক নং-৬০১৫। পরিকল্পনায় অংশ নেয়া বাবুর আলী ওরফে বাবু ও জাকির হোসেনের কথোপকথনে শোনা যায়, ‘তার (হাশেম রেজার) বিরুদ্ধে সবকটি মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে তথ্য দেয়া হয়েছে। একেবারে জায়গা মতোই সব পাঠানো হয়েছে। এবার খবর আছে, জেল-জরিমানা হয়ে যাবে। কিছুদিনের মধ্যেই এসব দেখা যাবে। যে লাইনে গেছি টেলিভিশনেও দেখাবে। সব কিছু একদম বিশাল কড়া করে ছেড়েছি।’

তাদের বলতে শোনা যায়, ‘হাশেম রেজা ঢাকা থেকে বাড়িতে গেলে একটি মাইক্রো আর কয়েকটি মোটরসাইকেল যাবে, সাথে সাথে অ্যাটাক হবে, সাত মিনিটের মধ্যেই শরীরের নিচে থেকে ওপর পর্যন্ত দুই হাত-দুই পা...। এটা পরিকল্পনা হয়ে গেছে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা, হাশেম রেজা কখন আসে। আজকেই মিশন বাস্তবায়ন হয়ে যেত...। প্ল্যান গোছানো হয়ে গেছে, গোছানো শেষ। হত্যার পরিকল্পনা হয়ে গেছে। দেখব ওর কত ক্ষমতা হয়েছে। সাত মিনিটের মধ্যে ওর খেল খতম। নয় তো কুলাই পারব না।’

কথোপকথনে তাদের একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘হাশেম রেজার নামে আরও তিন-চারটি মামলা হচ্ছে। পাশাপাশি পরিকল্পনা অনুযায়ী হামলা হবে অফিসেও। অফিসে না পেলে বাড়িতে অ্যাটাক করব। ধরে নিয়ে আসব। ওরে দেখাব এবং বলব— দেখ ক্ষমতা কাকে বলে (গালমন্দ)...। একা বের হতে পারবে না এমন কাজ করব। আতঙ্কের ওপরে থাকবে। বিদেশি লোক যারাই আসবে তাদেরও বলা হবে, ...(গালমন্দ) যদি হাশেম রেজার বাড়িতে কেউ আসে তাহলে তার ...(গালমন্দ)। এলাকায় সার্কুলার দিয়ে দিব, ওরে বুঝাব যে, ক্ষমতা কাকে বলে ...(গালমন্দ)। সর্বশেষ বলতে শোনা যায়, ‘ওসি-এসপি চাচ্ছে যেকোনোভাবেই এটা করে ফেলতে হবে।’

এদিকে হাশেম রেজাকে হত্যার পরিকল্পনা ফাঁস হওয়ার পর থেকে স্থানীয়দের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। স্থানীয়রা বলছেন, মৃত নাসির ডাক্তারের ছেলে জাকির হোসেন ছাত্রলীগের কর্মী, হত্যামামলার অন্যতম আসামি ও জামায়াতের অন্যতম নেতা। দীর্ঘদিন ধরেই জামায়াতের কার্যক্রমের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত রয়েছে জাকির। ইতোমধ্যে কুড়ুলগাছি গ্রামে অন্তত ১০টি হত্যার ঘটনা ঘটেছে।

যেগুলোর একটিরও বিচার হয়নি। এসব হত্যাকাণ্ডের অধিকাংশের সাথেই জাকিরের সম্পৃক্ততা রয়েছে— বলছেন স্থানীয়রা। অথচ হাশেম রেজা প্রকাশ্যে ও গোপনে এলাকার গরিব-দুঃখী, অসহায় মানুষের সেবা করে আসছেন, সমাজের উন্নয়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। যা জাকির গংদের সহ্য হচ্ছে না বলেই হাশেম রেজাকে শুরুতেই মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে সম্মানহানির চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে এখন হত্যার পরিকল্পনা করছে জাকির ও তা সাঙ্গপাঙ্গরা— এমনটাই বলছেন স্থানীয়রা।

জানতে চাইলে হাশেম রেজা প্রতিবেদককে বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আবারো নানা ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে আওয়ামী লীগে ঘাপটি মেরে থাকা পাকিস্তানি প্রেতাত্মারা। আমাকে ও আমার পরিবারকে জামায়াত-শিবির বানাতে মিথ্যা-বানোয়াট তথ্য ছড়াচ্ছে। অথচ দামুড়হুদা ও জীবননগরে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি ধ্বংস করতে ছাত্রজীবন থেকে অদ্যাবধি মুজিব আদর্শের সৈনিক হিসেবে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে যাচ্ছি। সেই আশির দশক থেকে অদ্যাবধি জামায়াত-শিবিরের দায়িত্বশীল নেতাদের সাথে রাজনৈতিক তো দূরের কথা— সামাজিক কোনো সম্পর্ক নেই আমার পরিবারের। এখন আমাকে হত্যা করার পরিকল্পনাও করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘কোনো হত্যার হুমকি বা ষড়যন্ত্রে আমি ভীত নই। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে তারই কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার কর্মী হিসেবে সোনার বাংলাদেশ গঠনে আমৃত্যু কাজ করে যাবো ইনশাআল্লাহ। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার প্রশ্নে কোনো আপস নেই।’

Link copied!