ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা রবিবার, ০৩ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad
ঋণ জালিয়াতির অভিনব কৌশল

লবিস্ট থাকলে জামানত লাগে না

রেদওয়ানুল হক

সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২, ০১:১৮ এএম

লবিস্ট থাকলে জামানত লাগে না

পর্যাপ্ত জামানত না থাকলেও লবিস্ট নিয়োগ করে ব্যাংক থেকে শতকোটি টাকা ঋণ নিচ্ছে এলিট পেইন্ট অ্যান্ড ক্যামিকেল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। কমিশনবাণিজ্যের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে একটি কনসালটেন্সি ফার্মকে নিয়োগ দিয়েছে এলিট।

ইতোমধ্যে দুই কোটি টাকা কমিশনে ব্যাংক এশিয়া থেকে ১৪০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করিয়ে দিয়েছে লবিস্ট ফার্মটি।

জানা গেছে, ইনস্পিরিজেন্স সার্ভিসেস লিমিটেড (আইএসএল) নামের একটি পরামর্শ প্রতিষ্ঠানের সাথে দেড় থেকে দুই শতাংশ কমিশনের শর্তে ঋণ পাইয়ে দেয়ার একটি চুক্তি করেছে এলিট পেইন্ট। ১০০ টাকার সরকারি স্ট্যাম্পে করা ওই চুক্তিটি আমার সংবাদের হাতে এসেছে।    

এতে দেখা যায়, প্রথম ৫০ কোটিতে দুই শতাংশ হারে কমিশন এবং এর বেশি পরিমাণের ক্ষেত্রে দেড় শতাংশ হারে কমিশনের শর্তে চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী বিভিন্ন ব্যাংক থেকে এলিটকে ঋণ পাইয়ে দিতে তদবির শুরু করে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি। আপন ভাই ব্যাংক এশিয়ার অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে থাকায় এ সুযোগ কাজে লাগান আইএসএলের এমডি মাহবুবুজ্জামান। দুই কোটি ৯ লাখ টাকা কমিশন ভাগাভাগির মাধ্যমে ছোট ভাইকে দিয়ে ১৪০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করিয়ে নেন। মাহবুবুজ্জামানের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে প্রথম দফায় ৩০ লাখ টাকা ও দ্বিতীয় দফায় ১৫ লাখ টাকা লেনদেন হয়। বাকি এক কোটি ৬৪ লাখ টাকা নগদে লেনদেন হয়েছে বলে জানা গেছে।  

ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ব্যাংক এশিয়ার উত্তরা শাখায় এলিট পেইন্ট অ্যান্ড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি নামে এক প্রতিষ্ঠান লোনের জন্য আবেদন করেছে। এ লোনের পরিমাণ প্রায় ১৪০ কোটি টাকা। তবে প্রতিষ্ঠানটি তাদের যোগ্যতা অনুসারে লোন না পাওয়ায় অসৎ উপায় অবলম্বন করে। তারা নিয়োগ দেয় একটি কনসালটেন্সি ফার্মকে।

অথচ কোনো কনসালটেন্সি ফার্মের মাধ্যমে কমিশনবাণিজ্য করে এমন লোন অনুমোদনের নিয়ম নেই। নিয়ম অনুযায়ী যে কোনো প্রতিষ্ঠান লোনের জন্য আবেদন করতে পারে। পর্যাপ্ত জামানত ও অন্যান্য যোগ্যতা বিবেচনায় লোন অনুমোদন বা বাতিল করে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এ ক্ষেত্রে লোন অনুমোদন হয় তদবিরের মাধ্যমে। কনসালটেন্সি ফার্মটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে আছেন মাহবুবুজ্জামান। তিনি ব্যাংক এশিয়ার অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউজ্জামানের আপন বড় ভাই। অভিযোগ রয়েছে, এ লোনটি পাইয়ে দিতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করেন শফিউজ্জামান। বিনিময়ে নিজের ভাইয়ের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাগিয়ে নেন কমিশন।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ব্যাংক এশিয়ার অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউজ্জামান আমার সংবাদকে বলেন, ‘লোনের বিষয়ে আমরা এলিট পেইন্টের সাথে সরাসরি কাজ করেছি। এলিট পেইন্ট কোনো কনসালটেন্টের কাছে গেছে কি না বা কেন গেছে— তা আমরা জানি না। তবে এলিট পেইন্ট থেকে আমার সাথে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তারা আমাকে এলিটের সিএফওর নম্বরও দিয়েছিল। আমি আমাদের ব্রাঞ্চ ম্যানেজারকে তাদের সিএফওর নম্বর পাঠিয়েছিলাম, এতটুকুই।’

তিনি বলেন, কনসালটেন্সি ফার্মটির মালিক আমার আপন বড় ভাই। এটিকে ইস্যু করে একটি পক্ষ আমাকে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করছে। অনিয়মের মাধ্যমে পাস হওয়া লোনটি বিতরণ করা হবে কি না জানতে ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আদিল চৌধুরীকে একাধিকবার ফোন করা হয়। প্রথমে রিসিভ না করলেও পরে ফোন রিসিভ করে প্রতিবেদকের পরিচয় জানতে চান এবং তিনি নিজেকে এমডির সহকারী দাবি করেন। পরিচয় দেয়ার পর এমডি ব্যস্ত আছেন জানিয়ে ফোন রেখে দেন। পরবর্তীতে আর ফোন রিসিভ করেননি তিনি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কমিশনবাণিজ্যের মাধ্যমে লোন পাস হলে সেটা খেলাপিতে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তাই এ ধরনের ঋণ অনুমোদন বা বিতরণের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক হতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেখানে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে, সেখানে কমিশনবাণিজ্যের মাধ্যমে লোন পাস হলে তা শতভাগ খেলাপি হবে। এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ব্যাংক খাতে, ইমেজ সংকটে পড়বে বেসরকারি খাতের এ ব্যাংকটি। ঝুঁকিপূর্ণ এই ঋণ বিতরণ বন্ধে এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখায় অভিযোগ জমা হয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়,  ‘ইস্পিরিজেন্স সার্ভিসেস লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মাহবুবুজ্জামান, বর্তমান ঠিকানা (অফিস) প্লট #৪০, রোড #২, বনানীর (চেয়ারম্যান বাড়ি) তৃতীয় তলা, ঢাকা ও মাহবুবুজ্জামানের আপন ভাই শফিউজ্জামান (ক্রেডিন ইনচার্জ) এবং অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ব্যাংক এশিয়ার যোগসাজশ ও কারসাজির মাধ্যমে মোট ঋণের ১.৫ শতাংশ কমিশনের ভিত্তিতে এলিট পেইন্ট লিমিটেডের ১৪০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন দেয়া হয়। উক্ত অবৈধ চুক্তির দুই কোটি ৯ লাখ টাকার মধ্যে মাহবুবুজ্জামানের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে গত ৮ আগস্ট প্রথম দফায় ৩০ লাখ টাকা ও দ্বিতীয় দফায় গত ২৮ আগস্ট ১৫ লাখ টাকা লেনদেন হয়। বাকি এক কোটি ৬৪ লাখ টাকা নগদ প্রদান করা হয়। তাই লোনটি বিতরণ বন্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয় এলিট পেইন্ট অ্যান্ড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক সাজির আহমেদের সাথে। তিনি কনসালটেন্ট প্রতিষ্ঠানের সাথে করা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। তবে তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন ও ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে মুরাদ নামের একজন ফোন করে এলিট পেইন্টের বোর্ড সেক্রেটারি পরিচয় দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন। এছাড়া কনসালটেন্সি ফার্মটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুবুজ্জামানকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

Link copied!