Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

সংস্কারের আড়ালে দখল

মো. নাঈমুল হক

অক্টোবর ৩, ২০২২, ০২:১৯ এএম


সংস্কারের আড়ালে দখল

পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া এলাকার ঐতিহ্যবাহী ধূপখোলা মাঠে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে ফুটবল স্টেডিয়াম, বিনোদন কর্নার, বাস্কেটবল, ব্যাডমিন্টন কোর্ট, ওয়াকওয়েসহ আরো বিভিন্ন জোন তৈরি করছে। স্থানীয় মানুষদের জন্য এটি যুগান্তরকারী পদক্ষেপ বলে মনে করে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনার এটিকে স্টেডিয়াম বলতে নারাজ।

এ ব্যাপারে স্থানীয় মানুষ দুভাগে বিভক্ত। শিক্ষার্থীদের খেলার ব্যাপারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সাথে দক্ষিণ সিটির সমঝোতা হয়েছে।  মাঠের ০.৬২ একরের উপর মার্কেট তৈরির বিরুদ্ধে বেলাসহ সাতটি পরিবেশবাদী সংগঠনের আইনি নোটিস পাঠানোর পরও যথাযথ জবাব না পাওয়া মামলা করার কথা জানিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম তৈরি হবে জানিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১ নং প্যানেল মেয়র শহিদুল্লাহ মিনু বলেন, ‘ধূপখোলা মাঠ মূলত খেলাধুলার জন্য। সে জন্য আন্তর্জাতিক মানের ফুটবল স্টেডিয়াম তৈরি হচ্ছে। স্টেডিয়াম হলে গেন্ডারিয়ার পারিপার্শ্বিক অবস্থার পরিবর্তন হবে। এখানকার মানুষের জীবনযাত্রায় আরো উন্নত হবে।

মাঠে ফুটবল খেলার সব আয়োজনের পাশাপাশি বহুমুখী ভবন, বিনোদন কর্নার, বাস্কেটবল ও ব্যাডমিন্টন কোর্ট, নেট ক্রিকেট, ওয়াকওয়ে, কফি হাউজ, ফুড কোর্ট, গ্রিন জোন, বাগান, ওয়াটার বডি, এলইডি লাইটিং, পার্কিং জোনসহ আরও আধুনিক ব্যবস্থা দেখতে পাবে। ইস্টার্ন ক্লাবের খেলোয়াড়রা স্টেডিয়ামের মাঠে প্রাকটিস করতে পারবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও মাঠে খেলতে পারবে। তবে সিটি কর্পোরেশন থেকে অনুমতি নিতে হবে।’ স্থানীয়দের খেলার ব্যাপারে তিনি কোনো কার্যত উত্তর দিতে পারেননি।

মাঠের জায়গায় মার্কেট হচ্ছে না, জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ধূপখোলা মাঠের চারপাশে আগে থেকেই দোকান ছিল। এখন শুধু পশ্চিম পাশের ছয়তলা মার্কেট হচ্ছে। ধূপখোলা বাজারে একসাথে একটি ভবনের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট কাঠামোতে থাকতে পারে। বরং একসাথে হওয়ায় আগের তুলনায় জায়গা আরো কম লাগছে।  

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মু. ইমদাদুল হক আমার সংবাদকে বলেন, ‘১৯৮৪ সালেই এরশাদ সরকার আমাদের খেলাধুলার জন্য এই মাঠ দিয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় যতদিন এখানে আছে, এই মাঠ কেউ দখল করতে পারবে না। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন মাঠে সংস্কারের কাজ করবে— এ বিষয়ে আমাদের সাথে তাদের কথা হয়েছে। যদি তারা আমাদের খেলতে না দেয়, আমরা ব্যবস্থা নেবো।’

সিটি কর্পোরেশনের কাজ অবৈধ জানিয়ে বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘মাঠের মধ্যে স্টেডিয়াম বানানো, মার্কেট তৈরি সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। রাজউকের কাছ থেকে অনুমোদন না নিয়ে তারা বেআইনিভাবে  মার্কেট নির্মাণ করছেন। এ ব্যাপারে আমরা শিগগিরই মামলা করব।’

সবার জন্য ধূপখোলা মাঠ উন্মুুক্ত থাকবে জানিয়ে ৪৫ নং ওয়ার্ড কমিশনার শামসুজ্জোহা অভিযোগ করে বলেন, ‘ধূপখোলা মাঠ দীর্ঘ দিন ধরে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে ছিল। এখানে জুয়া, মদখোরদের আখড়া ছিল। মাঠের পাশে বিভিন্ন স্থানে এলাকার মানুষের বাড়ির বালু, ইট সারা বছর পড়ে থাকতে দেখা গেছে। সেখান থেকে মেয়রের একান্ত সদিচ্ছায় ধূপখোলা মাঠের সংস্কারকাজ চলছে।

কাজ শেষে আগের তুলনায় মাঠের দৈর্ঘ্য আরো বাড়বে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সাধারণ ছেলেরাও মাঠে খেলতে পারবে। তবে আগের মতো বিশৃঙ্খল খেলা হবে না। আমাদের এলাকার ছেলেদের খেলার মাঠ আমরা জনপ্রতিনিধি হয়ে কেন দখল করব?’ বেলাসহ সাতটি পরিবেশবাদী সংগঠনের আইনি নোটিস তিনি পাননি বলে আমার সংবাদকে জানিয়েছেন।

এলাকাবাসী একাংশের বক্তব্য হচ্ছে, সিটি কর্পোরেশন গায়ের জোরেই মাঠ সংস্কারের নামে মার্কেট তৈরি ও অন্যান্য কাজ করছে। আমরা ছোট থাকতে এই মাঠে খেলেছি। এখান থেকে বাংলাদেশ জাতীয় টিমের কয়েকজন খেলোয়াড় তৈরি হয়েছে। যদিও এলাকার অপর পক্ষ ওয়ার্ড কমিশনারের সুরেই সুর মিলিয়েছে।

তারা বলেছেন, আমরা এই এলাকায় বেড়ে উঠেছি। আমাদের মাঠ সিটি কর্পোরেশন চাইলেই দখল করতে পারবে না। আমরা এটি মেনে নেবো না। মাঠে সংস্কার চলছে। এরপর সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। এলাকার অনেকেই ভুল বুঝে আছেন। মাঠে যদি আমরা খেলতে না পারি তাহলে সবার আগে আমরাই আন্দোলনে নামব।

Link copied!