Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

যুগ্মসচিব পদে চলতি সপ্তাহেই পদোন্নতি

বেলাল হোসেন

অক্টোবর ২৩, ২০২২, ১২:৩০ এএম


যুগ্মসচিব পদে চলতি সপ্তাহেই পদোন্নতি

প্রশাসনে আসছে যুগ্মসচিব পদে বড় পদোন্নতি। চলতি সপ্তাহে এ পদোন্নতি হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) সর্বশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই বৈঠক শেষে পদোন্নতির তালিকাও চূড়ান্ত করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২১তম ব্যাচ পর্যন্ত পদোন্নতির জন্য কর্মকর্তাদের বিবেচনা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কর্মকর্তাদের গোপনীয় প্রতিবেদন সংগ্রহ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

জেলা প্রশাসকরা গত ৯ মে যোগ্য কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেয়। এবার প্রশাসন ক্যাডারের পাশাপাশি অন্যান্য ক্যাডার থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হবে। যোগত্যা থাকা সত্ত্ব্বেও আগে পদোন্নতিবঞ্চিত বিভিন্ন ব্যাচের কিছু কর্মকর্তাকে পদোন্নতির জন্য বিবেচনায় রাখা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

এদিকে উপসচিব থেকে যুগ্মসচিবে পদোন্নতি দেয়ার জন্য ইতোমধ্যে কয়েকটি বৈঠক করে এসএসবি। বৈঠকে প্রত্যেকের কর্মজীবনের সমস্ত নথিপত্র পর্যালোচনা করা হয়। বিশেষ করে প্রয়োজনীয় নম্বর, চাকরিজীবনের শৃঙ্খলা, দুর্নীতির বিষয়সহ সামগ্রিক বিষয় পর্যালোচনায় এসেছে।

চলতি বছরের গত ২৯ জুন ৮৪ জন উপসচিবকে যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি দেয় সরকার। ফলে বর্তমানে ৩৩০টি অনুমোদিত যুগ্ম সচিব পদের বিপরীতে ৭১৬ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। তারপরও বিসিএস ২১তম ব্যাচের ১৮১ জন কর্মকর্তার মধ্যে ১৫৩ জন পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করে অপেক্ষায় রয়েছেন।

এছাড়া সদ্য বিলুপ্ত ইকোনমিক ক্যাডারের ৯ জন কর্মকর্তাও পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করেছেন। এর বাইরে বিভিন্ন সময়ে পদোন্নতিবঞ্চিত (লেফট আউট) একশর মতো কর্মকর্তা এবং অন্যান্য ক্যাডারের দেড়শ কর্মকর্তাকেও বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এপিডি অনুবিভাগের একজন কর্মকর্তা আমার সংবাকে জানায়, চূড়ান্ত তালিকা হয়েছে। খুব শিগগিরই যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

পদান্নতিকে সামনে রেখে সচিবালয়ে প্রায় গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। যারা রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী তারা মোটামুটি নির্ভার আছে। আর যারা রাজনৈতিকভাবে তেমন প্রভাবের মধ্যে নেই কিন্তু মেধাবী তারা একটু চিন্তিত। অনেকেই ক্ষমতাসীন দলের নেতা, এমপি, মন্ত্রীদের দিয়ে তদবির করাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ যোগাযোগ রাখছেন এসএসবি সদ্যস্যদের সাথে। প্রশাসন ক্যাডারের ২০ ব্যাচের কর্মকর্তা বাবর আলী মীর বর্তমানে তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা (উপসচিব)। তার পদোন্নতির বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর কাছে আধা সরকারিপত্র দিয়ে অনুরোধ করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

পত্রে তিনি বলেছেন, এ কর্মকর্তাকে যুগ্মসচিব পদে পদায়ন করা হলে তার কর্মস্পৃতা বৃদ্ধি পাবে এবং দক্ষতার মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন সরকারি কাজে অবদান রাখতে পারবেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেবা ও সুরক্ষা বিভাগের অধীন ১১টি মর্ডান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শহীদ আতাহার হোসেন। যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতির জন্য তার পক্ষে ডিও দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।

ডিও লেটারে তিনি লিখেছেন, আতাহার হোসেন একজন দক্ষ, সৎ, দায়িত্বশীল ও নির্ভরযোগ্য কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত কর্মকর্তা হিসেবে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড আন্তরিকতার সাথে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। তার পরিবার স্বাধীনতা সপক্ষের সব কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত।

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পদে কর্মরত আছেন কাজী মোখলেছুর রহমান। তার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মা রত্নগর্ভা পুরস্কারপ্রাপ্ত। পদোন্নতির জন্যও সুপারিশ করে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর নিকট আধাসরকারী পত্র দিয়েছেন নওগাঁ-৫ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জন। যদিও ১৯৭৯ সালের সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী কোনো সরকারি কর্মচারী তার চাকরিসংক্রান্ত কোনো বিষয়ে প্রভাব খাটাতে পারেন না।

‘সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা-১৯৭৯’-এর ৩০ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো সরকারি কর্মচারী তাহার চাকরি-সংক্রান্ত কোনো দাবির সমর্থনে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে সরকার বা কোনো সরকারি কর্মচারীর ওপর রাজনৈতিক বা অন্য কোনো বহিঃপ্রভাব খাটাইতে বা খাটাইবার চেষ্টা করিতে পারিবেন না।’ একই আইনে তদবির করার জন্য সংসদ সদস্যদের কাছে যাওয়ার ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।

আইনটির ২০ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো সরকারি কর্মচারী কোনো ব্যাপারে তাহার পক্ষে হস্তক্ষেপ করার জন্য সংসদ সদস্য বা অন্য কোনো বেসরকারি ব্যক্তিকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অনুরোধ জানাইতে পারিবেন না।’

১৯৫৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি জারি করা এক স্মারকেও কোনো সরকারি কর্মচারী তার চাকরি-সংক্রান্ত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য কোনো মন্ত্রী বা সংসদ সদস্যের কাছে তদবির করতে পারবেন না বলে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গবেষক ও সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার আমার সংবাদকে বলেন, পদোন্নতির জন্য সুপারিশ করে মন্ত্রী-এমপিরা যদি ডিও দেন তা বেআইনি। তিনি বলেন, মুখে বলা নিষেধ তবুও মুখে হয়তো হালকাভাবে কেউ বলে। তবে লিখিতভাবে দেয়া আচরণবিধির পরিপন্থি। এটি একটি খারাপ দৃষ্টান্ত।

আবদুল আউয়াল বলেন, সুপারিশ করার কোনো সুযোগ নেই। এর জন্য বিভাগীয় মামলা হতে পারে। তিনি বলেন, এখনকার বাস্তবতা যে, কে কোন দলের, কে কার সাপোর্টার সত্য-মিথ্যাভাবে এই সব ধোয়া তোলা হয়। অনেক কেই মিথ্যাভাবে ফাঁসানো হয়। এই রকম একটা অসুস্থ পরিবেশে কেউ যদি বাঁচার জন্য সুপারিশ নেই সেখানে এটিকে পুরাপুরি বেঠিক বলা যায় না বলে জানান সাবেক এ সচিব।  

Link copied!