ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা রবিবার, ০৩ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

তের বছরে টাকার মান কমেছে ৫২ শতাংশ

রেদওয়ানুল হক

নভেম্বর ৬, ২০২২, ০১:০৮ এএম

তের বছরে টাকার মান কমেছে ৫২ শতাংশ

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনজীবনে উঠছে নাভিশ্বাস। পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটে চলছে সব ধরনের পণ্যমূল্য। জীবনযুদ্ধে টিকে থাকতে নাজেহাল অবস্থা। গত এক যুগে প্রায় প্রতিটি পণ্যের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির নেপথ্য কারণ হিসেবে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে মার্কিন ডলারের বিপরীতে দেশীয় মুদ্রা টাকার অবনমন। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধি, দফায় দফায় জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি ও যুদ্ধ পরিস্থিতি পণ্যের দাম বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে।

বাজার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ডলারের দামের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ায় পণ্য ও কাঁচামালের আমদানি খরচ বাড়ছে। এর প্রভাব পড়ছে বাজারমূল্যে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে এক ডলারে পাওয়া যেত ৬৯ টাকা।

গতকাল আন্তঃব্যাংক রেট ছিল ১০৪ টাকা। সে হিসাবে গত ১৩ বছরে আন্তঃব্যাংক লেনদেনে টাকার মান কমেছে ৫২ শতাংশের বেশি। খোলাবাজারে এই দাম ৭৪ শতাংশ পর্যন্ত নেমেছে। অর্থাৎ আগে যে পণ্য আমদানি করতে খরচ হতো ১০০ টাকা এখন একই পণ্য আমদানিতে খরচ হচ্ছে ১৫২ টাকা। ক্ষেত্র বিশেষে এই দাম ১৭৪ টাকার বেশি পড়ছে।

তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত এক বছরে টাকার মান উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। কোনোভাবেই এটি নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। এক বছর আগে যেখানে আমদানিতে প্রতি ডলারের দর ছিল ৮৬ টাকা, এখন খরচ হচ্ছে ১০৬ টাকার মতো। অর্থাৎ আমদানি পর্যায়ে ডলারের দর ২৩ শতাংশের বেশি বেড়েছে। সরাসরি এর প্রভাব পড়ছে পণ্য বাজারে।

বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে গত মে মাসের তুলনায় এখন প্রতি লিটার সয়াবিন তেলে ৩০, পাম তেলে ২০, প্রতি কেজি মসুর ডালে ১৮, চালে সাত ও গমে আট টাকা বাড়তি ব্যয় হচ্ছে। অন্যদিকে বিশ্ববাজারেও পণ্যের দাম চড়া। ফলে মানুষকে একসঙ্গে দুটি ধাক্কার মুখে পড়তে হয়েছে। মূল্যস্ফীতির হার উঠে গেছে ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে। ভোজ্যতেল, গম, চিনি, চাল, ডাল ও গুঁড়া দুধ গত মাসে বেসরকারি খাতে এ ছয় পণ্য আমদানি হয়েছে ৯ লাখ টনের কিছু বেশি। আমদানি মূল্য প্রায় সাড়ে ৬৪ কোটি ডলার।

গত মে মাস ও সেপ্টেম্বর মাসে ডলারের দামের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ খাতে শুধু এক মাসে বাড়তি ব্যয় হয়েছে প্রায় এক হাজার ১৩৬ কোটি টাকা। অন্যদিকে গত এক যুগের বাজার পর্যালোচনা করে দেখা যায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম ২৬-২৬০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্যের ভিত্তিতে ১ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ সময়ের ঢাকার খুচরা বাজারের দাম পর্যালোচনা করে দেখা যায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় চাল, ডাল, তেল, আটা, মাংস, লবণ, পেঁয়াজ ও কাঁচামরিচের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। আমদানিকৃত মসুর ডাল কেজি ছিল ৭৬ টাকা, এখন ১০৩ টাকা। বেড়েছে ২৭ টাকা। প্যাকেটজাত আটা ২৬ টাকা থেকে ৩০ টাকা বেড়ে ৫৬ টাকা হয়েছে। মোটা চাল কেজিতে বেড়েছে ২২ টাকা। ছিল ২৬ টাকা, এখন ৪৮ টাকা। সরু চাল ৩৭ টাকা থেকে ৩৫ টাকা বেড়ে ৭২ টাকা হয়েছে। খোলা সয়াবিন তেল কেজিতে ১০০ টাকা বেড়েছে। আগে ছিল ৬৮ টাকা এখন ১৬৮ টাকা। পাম তেল ৭৭ টাকা বেড়ে ১২৯ টাকা হয়েছে। আগে ছিল ৫২ টাকা। চিনি বেড়েছে কেজিপ্রতি ৫৬ টাকা। ৩৩ টাকা থেকে বেড়ে এখন ৮৯ টাকা। লবণের এককেজি প্যাকেটের দাম আগে ছিল ১৭ টাকা এখন ২৯ টাকা। বেড়েছে ১২ টাকা। আমদানি করা পেঁয়াজের দাম আগে ছিল ২৬ টাকা। ব্যাপক উঠানামা করলেও এখন দাম ৩৩ টাকা। কাঁচামরিচের দামও অনেক বেড়েছিল তবে এখন ৯০ টাকা। ২০০৯ সালে ছিল ২৫ টাকা। সে হিসাবে বেড়েছে ৬৫ টাকা। আলোচিত সময়ে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে গরুর মাংসের দাম। ২২১ শতাংশ বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৬৯০ টাকায়। আগে এর দাম ছিল ২১৫ টাকা।

যদিও সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটির তথ্যের তুলনায় খুচরা বাজারে প্রতিটি পণ্যের দাম ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। সরেজমিন পরিদর্শনে এমন চিত্র দেখা গেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির অনুপাতে কাঙ্ক্ষিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি না হওয়া, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয় বাজারমূল্যে প্রভাব ফেললেও ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যের অবনমন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। টাকার এ অবনমনের কারণ হিসেবে দায়ী করা হচ্ছে বৈদেশিক বাণিজ্যে ভারসাম্য রক্ষা করার ব্যর্থতাকে। তারা বলছেন, ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ঘাটতির কারণে ডলার সংকট তৈরি হওয়ায় মান হারাচ্ছে টাকা।

অন্যদিকে টাকার মান ঠিক রাখতে এবং চাহিদার বিপরীতে ডলারের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে নিয়মিত ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ঘাটতি হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের ওপর ভর করে কোনোমতে টিকে থাকার চেষ্টা করলেও সমপ্রতি কমতে শুরু করেছে প্রবাসী ও রপ্তানি আয়।

সামপ্রতিক সময়ে আমদানি পণ্যের এলসির পরিমাণ কমিয়ে আনতে নানা উদ্যোগ নিলেও ফল পাওয়া যাচ্ছে না। আমদানি ব্যয় মেটাতে গিয়ে ডলারের চাহিদা বেড়েছে ব্যাংকে। কিন্তু ডলারের বড় উৎস রপ্তানিতে তুলনামূলক প্রবৃদ্ধি কম থাকায় ডলারের দাম বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্যমতে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ৭৫৫ কোটি ডলার বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে দেশ। অন্যদিকে গত আট মাসের তুলনায় সবচেয়ে কম রেমিট্যান্স এসেছে অক্টোবর মাসে। তাই সংকট উত্তরণে বা টাকার মান ধরে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভুল নীতির কারণে সংকট আরও প্রকট হয়েছে বলে মত অর্থনীবিদদের। তারা বলছেন, বাজার স্বাভাবিক রাখতে টাকার মান ধরে রাখা হয়েছিল। এতে সরবরাহ সংকট তৈরি হয়ে পণ্যমূল্য আরও বেড়ে গেছে।

বিশ্ব ব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন আমার সংবাদকে বলেন, ডলারের বিপরীতে টাকার অবনমন পণ্যবাজারে অনেকটাই প্রভাব ফেলছে। তবে বিষয়টি আমদানি নির্ভরতার ওপর নির্ভরশীল। একইসাথে জিডিপি প্রবৃদ্ধির ওপরও নির্ভর করে।

তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকলেও দেশের বাজারে ডলারের দাম বৃদ্ধি পেলে আমাদানি পণ্যে খরচ বাড়বে। আর ডলার মূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদার পাশাপাশি বাণিজ্য ঘাটতি বড় প্রভাব বিস্তার করে। আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর আমাদের হাত না থাকলেও বৈদেশিক বাণিজ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারলে দেশে ডলারের সংকট তৈরি হবে না। ফলে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে। তবে কোনোভাবেই দাম বেঁধে দেয়ার নীতি গ্রহণীয় নয়। কারণ এতে সরবরাহ সংকট তৈরি হয়ে পণ্যমূল্য বেড়ে যায়। একই সঙ্গে একটা সময় গিয়ে ডলারের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে। যেটা এখন হচ্ছে।

Link copied!