Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪,

স্বস্তির পরিবেশে ফের শঙ্কা!

মাহমুদুল হাসান

ডিসেম্বর ২৭, ২০২২, ১২:৫৫ এএম


স্বস্তির পরিবেশে ফের শঙ্কা!
  • চীন ও ভারতে ওমিক্রন বিএফ.৭ নতুন উপধরনের সংক্রমণ
  • ভৌগোলিক ও বাণিজ্যিক কারণে সংক্রমণের ঝুঁকিতে দেশ
  • আক্রান্তের তথ্য প্রকাশ বন্ধ করেছে চীনের স্বাস্থ্য কমিশন
  • বেশি ঝুঁকিতে যারা এখনো কমপ্লিট করেননি টিকার ডোজ
  • দেশের প্রতিটি প্রবেশপথে স্ক্রিনিং ও অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু

চীন ও প্রতিবেশী ভারতে ওমিক্রন বিএফ.৭ উপধরন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। ব্রাজিল, জাপান, তাইওয়ান, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশেও বাড়ছে সংক্রমণ। গতকাল বিকেলে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চার চীনা নাগরিকের নমুনায় করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তাদের নমুনায় ওমিক্রন বিএফ.৭ উপধরন রয়েছে কি-না তা নিশ্চিত হতে আইইডিসিআরে নমুনা পাঠানো হয়েছে। এ যেন স্বস্তির পরিবেশে ফের আশঙ্কা।

এদিকে চীনে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। দেশটির কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা দাবি করেছে, শুধু ঝেনজিয়াং প্রদেশেই দৈনিক ১০ লক্ষাধিক করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন (এনএইচসি) দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা প্রকাশ করা বন্ধ ঘোষণা করেছে। তবে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, দেশটিতে প্রতিদিন শনাক্ত হচ্ছে কয়েক লাখ মানুষ।

এদিকে প্রতিবেশী দেশ চীনের করোনা পরিস্থিতিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে ভারত। কারণ সেখানেও করোনা সংক্রমণ ফের বেড়েছে। এছাড়াও অন্যান্য দেশে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। গত রোববার জাপানে দেড় লাখের বেশি নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান,  ফ্রান্স, হংকং ও ব্রাজিলে।

জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশও নতুন উপধরনের বড় ঝুঁকিতে রয়েছে। আবার দেশের অথনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় সীমান্ত বন্ধ করাও সম্ভব নয়। ভারতের সঙ্গে ২৫টি স্থলবন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশের নিয়মিত বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে। চীনের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে। এসব পথেই যেকোনো সময় সংক্রমণটি দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

এদিকে নতুন উপধরন বিএফ.৭-এর সংক্রমণ প্রতিরোধে কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে পরামর্শ দিয়ে বলেছে, ফ্রন্ট লাইনার, ১৮ বছর ও তদূর্ধ্ব কোমরবিড রোগে (একাধিক রোগে আক্রান্ত) আক্রান্ত এবং ৬০ বছর ঊর্ধ্ব সবাইকে দ্বিতীয় বুস্টার ডোজ/৪র্থ ডোজের টিকার চলমান ক্যাম্পেইনের আওতায় আনার ব্যাপারে সব ধরনের জনসংযোগ, প্রচার-প্রচারণা জোরদার করার ব্যবস্থা করতে হবে। আশঙ্কাজনক ব্যক্তি এবং কোমরবিড রোগে আক্রান্ত সবাইকে কোভিড ১৯-এর সব স্বাস্থ্যবিধি যেমন মাস্ক পরা, হ্যান্ডস্যানিটাইজ করা ইত্যাদি অবশ্যই মেনে চলতে হবে।

পোর্ট অব এন্ট্রিগুলোতে বিশেষ করে চীন, জাপান, কোরিয়া, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আগত যাত্রীদের মধ্যে আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ থাকলে স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনতে হবে। দেশের সব কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল ও অন্যান্য হাসপাতালগুলোকে কোভিডের চিকিৎসা দেয়ার ব্যাপারে রেডি রাখতে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেয়া প্রয়োজন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা থেকে সারা দেশের সব সিভিল সার্জন, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, নৌ, স্থল ও বিমানবন্দর বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে বিদেশ থেকে আগত ব্যক্তিদের স্ত্রিনিং করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের প্রতিটি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, স্থলবন্দর ও সমুদ্রবন্দরে বিদেশ থেকে আগত ব্যক্তিদের স্ত্রিনিং ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এমতাবস্থায় দেশের  স্থল, সমুদ্র ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং ব্যবস্থায় জোর দেয়া হচ্ছে।  

সন্দেহভাজনদের অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হচ্ছে। আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইনেরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গতকাল দেশের আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, স্থলবন্দর ও সমুদ্রবন্দরগুলোতে বিদেশ থেকে আগত সাত হাজার ২০৫ জনকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। তার মধ্যে হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, শাহ মাখদুম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও শাহ পরাণ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং করা হয়েছে এক হাজার ৩০৬ জনকে। ২৫টি স্থল বন্দরে স্ক্রিনিং করা হয়েছে পাঁচ হাজার ৭৩১ জনকে এবং চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দরে ১৬৮ জন বিদেশ ফেরত ব্যক্তিকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, করোনা ভাইরাসের ওমিক্রন বিএফ.৭ একটি নতুন উপধরন। বৈশ্বিক অর্থনীতির বিপর্যস্ত অবস্থা। এসময় কঠোরতা অবলম্বনও কঠিন। এখানে ব্যক্তিগত সুরক্ষাকে বেশি জোর দিতে হবে। চীন ও ভারতে যেহেতু ভাইরাসটি সংক্রমণ শুরু করেছে। এক্ষেত্রে সারা দেশের ২৫টি স্থলবন্দর, তিনটি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর ও দুটি সমুদ্রবন্দরে বিদেশ থেকে আগতদের স্ক্রিনিং এবং সন্দেহভাজনদের তাৎক্ষণিক অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু করেছি। কিন্তু আমরা জানি, করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টটি অনেক সময় উপসর্গবিহীনভাবে সংক্রমিত হয়। এক্ষেত্রে ব্যক্তি তার সুরক্ষা নিশ্চিত করলে সবচেয়ে বেশি ভালো ফল পাওয়া যায়। তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে যারা টিকার ডোজ কমপ্লিট করেনি তারা টিকা নিয়ে নেয়া জরুরি। কিছুদিন নিয়মিত মাস্ক পরিধান করা জরুরি। বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাসটা ফিরিয়ে আনা দরকার। আর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা দরকার।

Link copied!