ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা সোমবার, ০৪ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের ব্যতিক্রম প্রদর্শনী

মো. সোহাগ বিশ্বাস

মো. সোহাগ বিশ্বাস

জানুয়ারি ৭, ২০২৩, ০৩:২৮ পিএম

পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের ব্যতিক্রম প্রদর্শনী

প্লাস্টিক দূষণ রোধে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে পরিত্যক্ত প্রায় অর্ধকোটি প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার  প্রতিকৃতি, প্রদর্শনীর স্টেজ, ঝরাপাতার গাছ, মানুষের মগজ, মাছ ও গ্রেনেড। রাজধানীর মহাখালী টিঅ্যান্ডটি মাঠে ৯ দিনব্যাপী ব্যতিক্রমী এই প্রদর্শনী চলছে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিডি ক্লিনের আয়োজনে গত ৩০ ডিসেম্বর থেকে শুরু করে আজ ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রদর্শনী চলবে। তাদের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘সেভ আর্থ, সেভ বাংলাদেশ’।

সারা দেশের প্রায় ১২ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর কুড়িয়ে আনা প্রায় পাঁচ কোটি সিগারেটের ফিল্টার, ৩০ লাখ পরিত্যক্ত প্লাস্টিক বোতল, চিপসের খোসা দিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। 

প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি বিডি ক্লিনকে ১০ লাখ টাকা অনুদান দেন।

বিডি ক্লিনের প্রতিষ্ঠাতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, আমরা সচেতনতার অভাবে বিভিন্ন প্লাস্টিকের বোতল, চিপসের প্যাকেট পানিতে ফেলে দিচ্ছি, এ কারণে জলরাশি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যে জলরাশিতে মাছ আর আগের মতো প্রজনন করতে পারছে না। প্রতি এক মিনিটে প্রায় তিন হাজার ৮০০ প্লাস্টিকের বোতল বা পলিথিন প্যাকেট সমুদ্রে যাচ্ছে, যা সমুদ্রের ঢেউয়ের কারণে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হচ্ছে এবং প্রাণিকুলের পেটে যাচ্ছে— যা কোনোভাবেই হজম হচ্ছে না। এর ফলে অনেক প্রাণী মারা যাচ্ছে। সবাইকে প্লাস্টিক ব্যবহারে সচেতন করার লক্ষ্যেই আমাদের এ আয়োজন।

এসব শিল্পকর্মের প্রতিটি তৈরির পেছনে ব্যাখ্যা রয়েছে আয়োজকদের। মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, কেউ হয়তো ব্যবহারের পর একটি বোতল ফেলেছে। যখন এমন লাখো বোতল একসঙ্গে হচ্ছে, তখন তা বড় আকার ধারণ করছে। এই বড় ব্যাপারটি বোঝাতে আমরা বিশাল বোতলের আদলে আমাদের স্টেজ তৈরি করেছি, যার নিচে সিগারেটের  ফিল্টার দিয়ে গাছের গুঁড়ির প্রতিকৃতি করা হয়েছে।

মাছ ও কচ্ছপ তৈরির ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, প্লাস্টিক ও সিগারেটের ফিল্টারের মধ্যে যে রাসায়নিক রয়েছে, তাতে জলরাশি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, দূষিত হচ্ছে। যে দূষণ মাছ ও মাছের প্রজনন ক্ষমতা ধ্বংস করে দিচ্ছে। তাই মাছ তৈরি করা হয়েছে। একই কারণে ধ্বংস হচ্ছে সমুদ্রের ভারসাম্য রক্ষা করা সামুদ্রিক প্রাণীরা। তারই প্রতীক হিসেবে কচ্ছপের প্রতিকৃতি তৈরি করা হয়েছে।

মানুষের মগজ তৈরির ব্যাখ্যায় ফরিদ উদ্দিন বলেন, কিছুদিন আগে পত্রপত্রিকায় লেখা এসেছে, মানুষের মগজে প্লাস্টিকের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এটা এমনি এমনি মগজে স্থাপিত হয়নি। আমরা দৈনন্দিন যে খাবার গ্রহণ করছি, সেই খাবারের মধ্যে প্লাস্টিকের যে রাসায়নিকগুলো রয়েছে, সেগুলোই হয়তো মস্তিষ্কে গিয়ে প্রতিফলিত হচ্ছে।

আমরা আমাদের মগজটাকে ধ্বংস করছি, নিস্তেজ করে দিচ্ছি। পক্ষান্তরে আমরা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করছি। তা বোঝাতেই এই মগজের প্রতিকৃতিটা করা হয়েছে।

গ্রেনেড তৈরির ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, প্লাস্টিকসামগ্রী যদি ফেলে দেয়া হয়, তা আমাদের জন্যই হুমকিস্বরূপ হয়ে মারাত্মক অস্ত্র হিসেবে ফিরে আসবে। যেটা আমাদের ধ্বংস করে দিতে পারে। যে কারণে গ্রেনেডের প্রতিকৃতি করা হয়েছে। আমরা যে প্লাস্টিকের বোতল ফেলে দিচ্ছি, সেটাই আমাদের জন্য গ্রেনেডের মতো ভয়ঙ্কর হয়ে ফিরে আসবে।

গাছের প্রতিকৃতি তৈরির ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, গাছ হলো আমাদের অক্সিজেন হাব। কিন্তু প্লাস্টিক, সিগারেট ফিল্টারের রাসায়নিকের কারণে মাটি এমনভাবে দূষিত হচ্ছে যে, গাছ আর মাটি থেকে রস শোষণ করতে পারছে না; যা শোষণ করছে সবই রাসায়নিক। এই রাসায়নিক শোষণের ফলে গাছগুলো পাতাবিহীন হয়ে যাচ্ছে। তারই প্রতীক হিসেবে এই গাছের প্রতিকৃতি তৈরি করা হয়েছে।

পাতাহীন এই গাছের সামনে দাঁড়ালে পেছনে গাছের দুই পাশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুটি প্রতিকৃতি দেখা যাবে। দেখে মনে হবে বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যা বিমর্ষ নয়নে গাছের পানে তাকিয়ে আছেন।

সিগারেটের ফিল্টার তৈরির ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, সিগারেটের ফিল্টারের প্রতিকৃতিতে লেখা আছে— আমি ধূমপান-পরবর্তী পরিত্যক্ত সিগারেট ফিল্টার, আমি সাইলেন্ট কিলার। এ কারণে এটাকে একটু আড়ালেই রাখা হয়েছে। যদিও সবার চোখের সামনে এটি ক্ষতি করছে; কিন্তু এত বড় মারাত্মক দূষণকারী পদার্থ আমাদের নজরেই আসছে না। এ কারণে বিশাল আকৃতির একটি সিগারেটের ফিল্টার রাখা হয়েছে।

বিডি ক্লিন বরগুনার আমতলীর সদস্য সাজিদ বলেন, পরিবেশে প্রাপ্ত সবচেয়ে বেশি এবং দূষিত পরিত্যক্ত পদার্থ হচ্ছে সিগারেটের ফিল্টার, যা নীরবে ধ্বংস করছে আমাদের পরিবেশ ও জলবায়ু। প্রতিবছর প্রায় ৫.৪ ট্রিলিয়ন সিগারেট উৎপন্ন হয়, যার মধ্যে প্রায় ৪.৫ ট্রিলিয়ন সিগারেট ফিল্টার বর্জ্য আকারে নিক্ষিপ্ত হয় পরিবেশে। সিগারেটের ফিল্টারের ভয়াবহতার প্রতীক হচ্ছে এই অর্ধনিমজ্জিত সিগারেট ফিল্টার।

পরিত্যক্ত বোতল ও সিগারেটের ফিল্টার দিয়ে তৈরি এমন শিল্পকর্ম নজর কাড়ছে দর্শনার্থীর। এখানে ঘুরতে এসেছিলেন  সাদিয়া, টুম্পা ও নাবিলা। তারা বলেন, এমন আয়োজন সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। আমরা তো জানতামই না প্লাস্টিকের বোতল এভাবে পরিবেশের ক্ষতি করছে। এমন প্রদর্শনীর ফলে অনেকেই সচেতন হবেন।

ভিন্নধর্মী এ আয়োজন শুধু দেশি দর্শনার্থীই নয়, বিদেশিদের কাছেও প্রশংসা পেয়েছে। আমেরিকা থেকে বাংলাদেশি এক বন্ধুর সাথে ঘুরতে এসেছিলেন আইজে ও বন্স। তারাও এমন আয়োজনের প্রশংসা করেন।

এমন ভিন্নধর্মী  প্রদর্শনী আর নানা রকম ভাস্কর্য শিক্ষার্থীদের সচেতন করে তুলছে। আর তারাও মনের আনন্দে সেলফিতে ক্যামেরাবন্দি হচ্ছে। প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহারে এখনই সচেতন না হলে অদূর ভবিষ্যতে পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়তে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

Link copied!