Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

রাজপথে তৎপর বিরোধীরা

তত্ত্বাবধায়কে আপস করবে না আ.লীগ

সৈয়দ সাইফুল ইসলাম

ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৩, ১২:৪৭ এএম


তত্ত্বাবধায়কে আপস করবে না আ.লীগ

দেশে কোনো রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টি হয়নি -ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন
সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই -প্রফেসর ড. আব্দুল খালেক
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুটি মীমাংসিত -মাহবুব-উল আলম হানিফ

বিএনপিসহ রাজপথে থাকা বিরোধী দলগুলো তাদের পক্ষ থেকে ঘোষিত ১০ দফা দাবি আদায়ে মাঠে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। গত ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠ থেকে ১০ দফা দাবি ঘোষণা করে বিএনপি। এরপর বিএনপির মিত্ররাও এই দফাগুলোর সাথে সহমত পোষণ করে রাজপথে দাবি আদায়ে সক্রিয় রয়েছে। 

এই ১০ দফার প্রথম দফা হচ্ছে- বর্তমান জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে ক্ষমতাসীন সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং দ্বিতীয় দফা হচ্ছে- ১৯৯৬ সালে সংবিধানে সংযোজিত ধারা ৫৮ খ, গ ও ঘ অনুচ্ছেদের আলোকে একটি দলনিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার বা অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে। কিন্তু এই দাবিকে আমলেই নিচ্ছে না ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলটি মনে করে নির্বাচন কীভাবে হবে তা সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। উন্নত বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোতে নির্বাচনকালীন সরকার বলতে কিছু নেই। ক্ষমতাসীনদের অধীনেই নির্বাচন হয়, নির্বাচনের সময় স্থানীয় প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের অধীনে পরিচালিত হয়। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম কিছু করার সুযোগ নেই। 

রাজপথে সক্রিয় থাকা বিএনপি নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সপক্ষে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর পাশপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের পাশে চেয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের একটি মিলনায়তনে আইনজীবীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেয়ার সময় বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর পাশপাশি দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠায় কথা বলতে হবে। শুধু কথা নয়, পাশে থাকারও আহ্বান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল। 

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন এ প্রসঙ্গ দৈনিক আমার সংবাদকে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কনসেপ্ট বর্তমান প্রেক্ষাপটে মানানসই নয় এই জন্য যে, বর্তমানে দেশে কোনো রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টি হয়নি। আর এ কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন না দেশের এই প্রবীণ আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ। 

অপরদিকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. আব্দুল খালেক মনে করেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে আওয়ামী লীগ কোনো কম্প্রোমাইজ করবে না। করার সুযোগও নেই। 

দৈনিক আমার সংবাদের সাথে আলাপকালে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম এ সদস্য বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে দলের মুখপাত্র ওবায়দুল কাদের প্রতিদিনই দলীয় অবস্থান ব্যাখ্যা করছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে সরকার ও দলের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। 

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে ড. আব্দুল খালেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কথা বলেছেন। শেখ হাসিনা বলেছেন ‍‍`দেশে অনির্বাচিত সরকার নিয়ে আসার পেছনে কলকাঠি নাড়েন‍‍` কিছু জ্ঞানী-বিজ্ঞানী‍‍`। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‍‍`আমাদের দেশে খুব জ্ঞানী-বিজ্ঞানী আছেন। তাদের মুখে শুনলাম, দু-চার বছরের জন্য যদি অনির্বাচিত সরকার আসে, তাহলে তো মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না। কারা এগুলো বলেন, সেটি আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। অনির্বাচিত সরকার তো আপনারা দেখেছেন। এখানের ছাল ওখানে নিয়ে নানাভাবে দল করার চেষ্টা করেন, রাজনৈতিক নেতাদের খারাপভাবে উপস্থাপন করে অপকর্মের চেষ্টাও করেছেন। 

শেখ হাসিনা বলেন, ‍‍`মহাভারত অশুদ্ধ হবে না, অশুদ্ধ হবে আমাদের সংবিধান। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা এবং তৎপরবর্তী বঙ্গবন্ধুর দেয়া সংবিধান, অনির্বাচিত সরকার এলে সেটি অশুদ্ধ হবে। 

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে ১ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তৃতার প্রসঙ্গ টেনে আওয়ামী লীগ এই অন্যতম উপদেষ্টা আরও বলেন- তিনি দলের কাছে থেকে যতোটা জানেন তাতে সংবিধানের বাইরে গিয়ে নির্বাচনকালীন বিশেষ কোনো সরকার প্রতিষ্ঠার কোন সুযোগ নেই। যা হবে সংবিধানের আলোকেই হবে। 

এক প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মনে করে বিএনপিতে এখন এমন কোনো জনপ্রিয় নেতা নেই, যে নেতার আহ্বানে একটি গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি হতে পারে। দেশের জনগণের কাছে দল হিসেবে বিএনপি খুব বেশি জনপ্রিয় দলও নয়। আর কারণে আন্দোলনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করা বিএনপির পক্ষে সম্ভব নয়। 

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুল-উল আলম হানিফ আমার সংবাদকে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুটি মীমাংসিত। আগামী নির্বাচন হবে সংবিধানের আলোকে।

Link copied!