Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

ছয় আসনে উপনির্বাচন

সাড়ে তিন লাখ ভোটে ৬ এমপি

আবদুর রহিম

ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৩, ১২:৫০ এএম


সাড়ে তিন লাখ ভোটে ৬ এমপি
  • মোট ভোটার সংখ্যা ২২ লাখ ৫৪ হাজার ২১৭ 
  • বিজয়ী প্রার্থীরা পেয়েছেন তিন লাখ ৫৩ হাজার ৫৭০ ভোট 
  • ১৯ লাখ ৬৪৭ জন নেতৃত্বে আসা ব্যক্তিদের ভোট দেননি 

পাঁচ শতাংশের বেশি ভোট পড়েনি, তারা নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে -মির্জা ফখরুল, মহাসচিব, বিএনপি
যেখানে প্রতিদিন নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে সেখানে মানুষ ভোট দিতে কেন যাবে -রুহিন হোসেন প্রিন্স, সাধারণ সম্পাদক, সিপিবি
কম উপস্থিতিতে বিস্মিত হয়েছি, সমাধান না হলে ভবিষ্যতে ভোটের উৎসাহ হারিয়ে যাবে -কবিতা খানম, সাবেক নির্বাচন কমিশনার

বিএনপির সাত সংসদ সদস্য পদত্যাগ করায় গত বুধবার ছয়টি আসনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ আসনগুলোর মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ২২ লাখ ৫৪ হাজার ২১৭ জন। এতে বিজয়ী প্রার্থীরা ভোট পেয়েছেন মাত্র তিন লাখ ৫৩ হাজার ৫৭০। ১৯ লাখ ৬৪৭ জন ভোট দেয়া থেকে দূরে ছিলেন। 

এদিকে এতো কম সংখ্যক ভোট পড়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন দেশের প্রথম সারির নাগরিকরা। তারা বলছেন, এর মূল কারণ হচ্ছে প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে ভোট চাইতে যাননি। তারা রাজনৈতিক সভা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তারা মনে করেছেন, এমনিই তারা ভিন্ন কৌশলে জিতে যাবেন। 

আবার কেউ বলছেন, বিএনপির সমর্থকরা ভোট কেন্দ্রে যায়নি তার কারণেও প্রভাব পড়েছে। তবে কার্যত কারণ বের করে এখনই সমাধান না হলে ভবিষ্যতে দেশের নাগরিকরা ভোট দিতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বগুড়া-৪ (কাহালু- নন্দীগ্রাম) আসনে মহাজোটের প্রার্থী জাসদের এ কে এম রেজাউল করিম তানসেনের কাছে মাত্র ৮৩৪ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম। রেজাউল মশাল প্রতীকে পেয়েছেন ২০ হাজার ৪০৫। এখানে মোট ভোটার তিন লাখ ২৮ হাজার ৪৬৯ জন। বগুড়া-৬ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান ৪৯ হাজার ৩৩৬ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। এখানে মোট ভোটার ছিল তিন লাখ ৮৭ হাজার ২৫৪ জন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (নাচোল গোমস্তাপুর-ভোলাহাট) আসনে ৯৪ হাজার ৯২৮ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের মু. জিয়াউর রহমান। এখানে মোট ভোটার ছিল চার লাখ পাঁচ হাজার ৪৫০ জন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল ওদুদ ৫৯ হাজার ৯৩৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। এখানে ভোটার চার লাখ ১১ হাজার ৪৯৫ জন ভোটার ছিল। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে ১৩২টি কেন্দ্রের ফলাফলে ৪৪ হাজার ৯১৬ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী (কলার ছড়ি প্রতীক) উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া। এখানে তিন লাখ ৭৩ হাজার ৩১৯ ভোটার ছিল। ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে (পীরগঞ্জ-রানীশংকৈল আংশিক) উপনির্বাচনে সাবেক সংসদ সদস্য হাফিজউদ্দিন আহম্মেদ বিজয়ী হয়েছেন। তিনি লাঙ্গল প্রতীকে ৮৪ হাজার ৪৭ ভোট পেয়েছেন। এখানে মোট ভোটার ছিল তিন লাখ ২৪ হাজার ৭৪১ জন।

ছয়টি আসনের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ ও ৩ এবং বগুড়া-৬ আসনে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। বগুড়া-৪ আসনে জিতেছেন আওয়ামী লীগের সমর্থন পাওয়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) প্রার্থী। সবচেয়ে আলোচিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে জিতেছেন স্বতন্ত্রের মোড়কে আওয়ামী লীগের পূর্ণ সমর্থন পাওয়া বিএনপির দলছুট আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া। আওয়ামী লীগের সমর্থন পেলেও ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে জিততে পারেননি ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী। এখানে জয়ের দেখা পেয়েছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী। ছয়টি আসনেই ভোট হয়েছে ইভিএমে। 

সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ভোট হয়েছে শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল। তার ধারণা, ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ ভোট পড়েছে।

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম আমার সংবাদকে বলেন, এবার নির্বাচনে কেন এত সংখ্যক ভোটার কম এলো গণমাধ্যমে বিষয়টি দেখে আমি নিজেও বিস্মিত হয়েছি। তবে ধারণা করছি, এই আসনগুলোতে বিএনপির হয়তো জনপ্রিয়তা ছিল যার কারণে তাদের প্রার্থী না থাকায় তাদের কোনো ভোটার কেন্দ্রে যায়নি। তবে এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ একটি জনপ্রিয় দল, তাদের ভোটার সংখ্যা অবশ্যই অনেক বেশি। সেক্ষেত্রেও কেন এত ন্যূনতম উপস্থিতি সেগুলো দেখার বিষয়। তবে নির্বাচন কমিশনের মাঠের পরিস্থিতি শান্ত রাখার বিষয়টি যেভাবে রাখা দরকার সেভাবে রাখতে সক্ষম হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, আমি বলব যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা ভোটারদের ঘরে ঘরে যাননি। তারা ভোটারদের আকৃষ্ট করতে পারেননি। তারা মনে করেছেন, এমনিতেই তারা জিতে যাবেন। কিন্তু আমরা যদি দেখি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে খুব হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়। সেখানে ভোটার উপস্থিতি অনেক বেশি থাকে। যার মূল কারণ প্রার্থীরা ভোটারদের ঘরে ঘরে যায়। তাই আমাদের এখন থেকেই আরও কার্যত কারণগুলো বের করতে হবে। কেন ভোটাররা ভোট দিতে যাননি তা যদি বের করতে না পারি তাহলে ভবিষ্যতে ভোটের উৎসাহ হারিয়ে যাবে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স আমার সংবাদকে বলেন, দেশে এখন নির্বাচনের কোনো মূল্য নেই। মানুষের এখন ভোটের বিষয়ে কোনো আগ্রহ নেই। যেখানে মানুষের বাঁচার অধিকার নেই, স্বাভাবিকভাবে প্রতিদিনই বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। আজকেই (বৃহস্পতিবার) আবার বাড়ল গ্যাসের দাম। যেখানে মানুষ খেয়েপড়ে বেঁচে থাকতে কষ্ট হচ্ছে, সেখানে ভোট দিতে কেন যাবে। কারণ যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা ভোটারদের অধিকার নিশ্চিত করতে পারেননি। তাই এ সরকারের অধীনে নির্বাচনগুলোকে জনগণ বর্জন করছে। 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আমার সংবাদকে বলেন, যে ভোট হয়েছে এটি নাটকের। মানুষ ভোট বর্জন করেছে। তারা যে তথাকথিত নির্বাচন অনুষ্ঠান করল (ছয়টি উপনির্বাচন), সেখানে ভোট প্রদানের হার তাদের (ইসি) হিসাব অনুযায়ী ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। আমাদের হিসাব মতে, এটা ৫ শতাংশের বেশি না। পত্র-পত্রিকায় ছবিগুলো দেখলে বুঝতে পারবেন একেবারে ২০১৪ সালের নির্বাচনের মতো। ভোট কেন্দ্রে কুকুর শুয়ে আছে। আওয়ামী লীগ নির্বাচন ব্যবস্থাকে এই পর্যায়ে নিয়েছে। গণতন্ত্রের সব প্রতিষ্ঠানকে তারা ধ্বংস করে ফেলেছে।

Link copied!