Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

করের সেই পিয়নের খামারবাড়ি

নুর মোহাম্মদ মিঠু

ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৩, ১০:৫৭ এএম


করের সেই পিয়নের খামারবাড়ি
  • খামারে শতাধিক গরু বিনিয়োগ আড়াই কোটি টাকা, কাজ করে চারজন শ্রমিক
  •  ঘাষ চাষের জন্যই কিনেছেন ৫ বিঘা জমি
  •  পিতার নামে কিনেছেন দুই একর নিজের নামে ২৩ শতাংশ
  •  স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থীদের ডোনেশন দিয়ে কেনেন রাজনৈতিক প্রভাব

 

বিলাসবহুল গাড়ির মালিক কর অঞ্চল-৪ এর পিয়ন (নোটিস সার্ভার) শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে চলমান অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অর্থে শুধু বিলাসবহুল গাড়িই নয়, গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে গড়েছেন তিনতলা ফাউন্ডেশনের বিশালাকার খামারবাড়িও। যে খামারে পালন করছেন শতাধিক গরু। যদিও স্থানীয়রা বলছেন, কমপক্ষে আড়াই থেকে তিনশ গরু পালন করেন তিনি। এর মধ্যে বিশালাকার দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের গরু রয়েছে। একেবারেই নদীপাড়ে অবস্থিত শফিকুলের সেই খামার এখন অনেকের জন্য দর্শনীয় স্থান। গোটা চাঁদপুর জেলাজুড়ে আলোচিত সেই খামারে সরেজমিন পরিদর্শন করে আমার সংবাদও। সম্প্রতি শফিকুলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) হওয়া অভিযোগের সূত্রে আমার সংবাদের অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আজকের পর্বে প্রকাশ করা হচ্ছে আলোচিত সেই খামারের তথ্য।

চাঁদপুরের মতলব উত্তর থানাধীন ফরাজীকান্দি গ্রামের বাসিন্দা জমির হোসেনের ছেলে শফিকুল ইসলাম। জেলে জীবন ছেড়ে ভাগ্য বদলের আশায় শূন্য হাতে ২০১২ সালে পাড়ি জমান ঢাকায়। স্থানীয়ভাবে

 

কথিত রয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষার গণ্ডি অতিক্রম না করেই ঢাকায় আসেন শফিকুল। নারায়ণগঞ্জের কোটায় চাকরি নেন করের পিয়ন (নোটিস সার্ভার) পদে। এরপর থেকেই তার ভাগ্য বদল হতে থাকে। কর অঞ্চলের সর্বনিম্ন গ্রেডের চাকরির কল্যাণে কয়েক বছরের ব্যবধানে তিনি বনে গেছেন কোটিপতি। ইতোমধ্যেই গড়েছেন বাড়ি, গাড়ি, খামার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সম্পদের পাহাড়। সম্প্রতি তার খামারের অস্তিত্ব অনুসন্ধানে সরেজিমন পরিদর্শন করে আমার সংবাদ। খামার বাড়িতেই কথা হয় শফিকুলের মা, খামারের কর্মচারী ও স্থানীয়দের সাথে। স্থানীয়রা আমার সংবাদকে জানান, শুধু খামারই নয়, খামারের আশপাশে কয়েক বিঘা জমিও কিনেছেন তিনি। তার খামারের গরুর ঘাস চাষের জন্য জোরপূর্বক জমি ক্রয়ের অভিযোগ করছেন তারা। স্থানীয়দের কেউই সেখানে চাইলেও জমি কিনতে পারেন না। শফিকুল সবার ঊর্ধ্বে দাম নির্ধারণ করে জমি কিনে নেন। খামারের আশপাশে বিঘায় বিঘায় এসব জমিতে চাষ করছেন ঘাষ। অনুসন্ধানে জানা গেছে, খামারের গরু দেখাশোনার জন্য মাসিক বেতনভুক্ত একাধিক কর্মচারী রয়েছে তার। যাদের বেতন প্রায় ২০ হাজার টাকা। সার্বিক তদারকি করেন তার ভাই। প্রতি সপ্তাহেই ঢাকা থেকে খামার দেখতে যান শফিকুল। নিজেও তদারকি করেন খামারের। এ ছাড়া আরও দুজন কর্মচারী রয়েছে তার। যারা মাসিক ১৫ হাজার টাকা বেতনে কাজ করছেন খামারের গরুর ঘাস চাষ, ঘাস কাটা ও প্রক্রিয়াজাত করে গরুর খাবারের উপযোগী করে তোলার জন্য। তাদের সঙ্গে সরাসরি কথা হয় আমার সংবাদের। একই এলাকার বাসিন্দা তারা। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত শফিকুলের খামারের গরুর জন্য ঘাষ চাষবাস, কাটাকাটির কাজ করেন তারা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, খামারবাড়ির চারপাশ ঘিরে পাঁচ বিঘা জমি কিনেছেন শফিকুল। ওই জমিতেই ঘাষ চাষ করছেন তিনি। শফিকুলের মা আমার সংবাদকে বলেন, ‘গরু বেশি তাই পাঁচ বিঘা জমিতে ঘাষ করতে হচ্ছে’। কয়েকটি শেড ফাঁকা থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, গরু আরও ছিল। বিক্রি করা হয়েছে। আবার নতুন করে তোলা হবে। তিনি আরও বলেন, এই খামার থেকে দৈনিক চার থেকে পাঁচ মণ দুধ বিক্রি হয়। ঘাষ লাগানো, কাটাকাটি করা, গরুর গোসল, দুধ দোহানো, শেড পরিষ্কার করাসহ অনেক কাজ। তাই লোক দিয়ে করাতে হচ্ছে। চারজন লোক সার্বক্ষণিক কাজ করছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই খামারের বয়স সাত-আট বছর। অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, জিরো থেকে হিরো বনে যাওয়া শফিকুল এখন নিয়ন্ত্রণ করেন স্থানীয় রাজনীতিও। স্থানীয় নির্বাচনে জয়ী হতে পারেন— এমন প্রার্থীদের দেন মোটা অংকের ডোনেশন। সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনেও নৌকার প্রার্থীকে ২০ লাখ টাকা দিয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয়রা বলছেন, এটি দিনের আলোর মতো সত্য। পারিবারিক খুঁটির জোর না থাকায় অর্থের বিনিময়ে স্থানীয় প্রভাবও কিনতে চান শফিকুল। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শফিকুল বলেন, দিতেই (টাকা) পারি। এটি আমার ব্যক্তিগত বিষয়। আপনার টাকা থাকলে আপনি অন্য একজনকে দিলে তাতে কারো সমস্যার তো কিছু নেই। খামার ও জমি ক্রয়ের বিষয়ে শফিকুল ইসলাম বলেন, এগুলো তাদের পারিবারিক যৌথ সম্পত্তি। আর খামারের আশপাশের জমিগুলো সব কেনা নয়; একটি স্কুলের সম্পত্তি তিনি পত্তন (বন্ধক) নিয়ে ঘাষ চাষ করছেন। এদিকে দুদকে হওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, খামার বাড়িতে শফিকুল বিনিয়োগ করেছেন আড়াই কোটি টাকা। তার বাবার নামেও কিনেছেন দুই একর জমি। রেজিস্ট্রিসহ ওই জমির মূল্য ৩০ লাখ টাকা। অভিযোগ সূত্রে আরও জানা যায়, এলাকায় নিজের নামেও কিনেছেন ২৩ শতাংশ জমি। যার মূল্য পাঁচ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এটাকেই তিনি স্কুলের সম্পত্তি বলে উল্লেখ করছেন সব জায়গায়। দান হিসেবেও নাকি পেয়েছেন ০.১২০০ একর জমি। অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ওই দানেরও কোনো দলিল নেই। যে দলিল তিনি দেখান সেটিও ভুয়া দলিল।

Link copied!