Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

বদলে যাচ্ছে সৌদির ফুটবল

আহমেদ হৃদয়

আহমেদ হৃদয়

জুন ৭, ২০২৩, ১১:৪৯ এএম


বদলে যাচ্ছে সৌদির ফুটবল

ইউরোপের বুড়ো তারকাদের নতুন ঠিকানা সৌদি আরব

  • তারকা ফুটবলারদের দলে ভেড়াচ্ছে ক্লাবগুলো
  • নজর আছে মেসি-রামোসসহ বড় তারকার ওপর
  • সৌদির রাডারে আছেন ডি মারিয়া, বুসকেটস, হুগো লরিস অ্যালেক্স সানচেজ, জর্ডি আলবা

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবেও এত জমজমাট ফুটবল লিগ হয়! ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো সৌদি ক্লাব আল নাসেরে যোগ না দিলে হয়ত কেউ জানতেই পারত না। সৌদির ক্লাব ফুটবলের ৪৬ বছরের ইতিহাসে হয়ত এত বড় তারকার অভিষেক হয়নি এর আগে। কিছুদিন আগেও সৌদি আরবের ফুটবল লিগ সম্পর্কে জানাশোনা ছিল খুব কম মানুষের। কিন্তু পরিস্থিতি বদলে দেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। অল্প সময়ের ব্যবধানে বিশ্বজুড়ে আলোচনায় চলে আসে সৌদি প্রো লিগ। হু হু করে বাড়তে থাকে আল নাসেরের জনপ্রিয়তা। 

পর্তুগিজ তারকার আল নাসেরে যোগদানের পর সৌদি প্রো লিগের খবর রাখেন বিশ্বের অনেক ফুটবলভক্তই। রোনালদো-বেনজেমাকে দলে ভিড়িয়ে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছে সৌদি আরব। দুজনেই ব্যালন ডি’অর জয়ী ফুটবলার। এদিকে শুধু রোনালদোকে দলে ভিড়িয়েই ক্ষান্ত হয়নি দেশটির ক্লাবগুলো। রোনালদোকে দলে ভেড়ানোর পর রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে ক্লাবগুলো। আল নাসেরের চির প্রতিদ্বন্দ্বী আল হিলাল মেসিকে কেনার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। একের পর এক লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে যাচ্ছে মেসিকে। অন্যদিকে বসে নেই আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী আল ইত্তিহাদ। আল ইত্তিহাদে দুই বছরের জন্য চুক্তি করেছেন ফরাসি তারকা করিম বেনজেমা। আল ইত্তিহাদের বর্তমান কোচ উলভস ও টটেনহ্যামের সাবেক কোচ নুনো এস্পিরিতো সান্তো। 

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ক্লাব আল নাসেরের চেয়ে পাঁচ পয়েন্টে এগিয়ে থেকে এবারের সৌদি চ্যাম্পিয়ন তারা। ইউরোপের বুড়ো তারকা ফুটবলারদের নতুন ঠিকানা হতে যাচ্ছে সৌদি আরব। এর আগে কাতার, চীন তাক লাগানো সব চুক্তি উপহার দিয়েছে। এবার ওই পথেই এগোচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি। রোনালদো, বেনজেমার পর মেসিও আছেন সৌদির পথে। শোনা যাচ্ছে, ডি মারিয়া, বুসকেটস, হুগো লরিস, অ্যালেক্স সানচেজ, জর্ডি আলবাকেও দেখা যেতে পারে সৌদি লিগে। তবে হঠাৎ সৌদি আরব এত বড় বড় তারকাদের দলে ভেড়াচ্ছে কেন? এমন প্রশ্নও হয়ত অনেকের মনে উঁকি মারছে। তবে সৌদি আরবের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজন করবে তারা। আগামী ২০২৭ এএফসি এশিয়ান কাপের আয়োজন করবে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটি। এটিই প্রথমবারের মতো বড় কোনো ইভেন্ট আয়োজন করতে যাচ্ছে সৌদি। আগামী ২০৩০ সালের ফিফা বিশ্বকাপের আয়োজন করার জন্যই সৌদি আরবের এত আয়োজন। আর এ জন্যই বিশ্ব ফুটবলের রথী-মহারথীদের মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে তারা নিয়ে যাচ্ছে নিজ দেশে।

আগামী এশিয়ান কাপ সামনে রেখে দেশটির ফুটবল অবকাঠামোতেও আসবে নতুনত্ব। ইপিএল ক্লাব নিউক্যাসল ইউনাইটেডের মালিকানাও তারা কিনেছে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে। মূলত ফুটবলের মধ্য দিয়েই বিশ্ববাসীর সামনে সৌদি আরবকে তুলে ধরতে চায় দেশটির সরকার। যার জন্য অর্থ তাদের কাছে শুধুই একটা সংখ্যা মাত্র।

আল নাসেরের সঙ্গে দুই বছরের চুক্তিতে রোনালদো পারিশ্রমিক পাবেন ৪০০ মিলিয়ন ইউরো। আল ইত্তিহাদে ২০০ মিলিয়ন ইউরোর বেশি বেতনে যোগ দিচ্ছেন করিম বেনজেমা। লিওনেল মেসির জন্য প্রস্তাবিত চুক্তির অঙ্কটা আরও বেশি। আর্জেন্টাইন এই সুপারস্টার আল হিলালে যোগ দিলে দুই বছরে বেতন হিসেবে পাবে বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।

ইতালিয়ান ফুটবল সাংবাদিক ফাব্রিৎসিও রোমানো গত সোমবার টুইট করে জানিয়েছেন, আল-ইত্তিহাদের সঙ্গে বেনজেমার চুক্তির প্রায় অর্ধেক শেষ। ক্লাবটির সঙ্গে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত চুক্তি করছেন তিনি। তবে চুক্তিপত্রে আরও মৌসুম বাড়ানোর অপশনও রাখা হচ্ছে। এই প্যাকেজে বছরে ২০০ মিলিয়ন ইউরো করে পাবেন ৩৫ বছর বয়সি তারকা। রিয়ালের আরেক তারকা মদরিচ ও টটেনহাম ছেড়ে দেয়া ফরাসি গোলরক্ষক হুগো লরিসের দিকেও চোখ পড়েছে তাদের। এএফপি জানিয়েছে, আরও ১০ জনকে নিজেদের রাডারে রেখেছে সৌদি। এএফপি তাদের সর্বশেষ খবরে জানিয়েছে, মেসি ও বেনজেমাকে চুক্তিবদ্ধ করার চেষ্টায় প্যারিস ও মাদ্রিদে আছেন সৌদি কর্মকর্তারা। এমনটা হলে একসঙ্গে এক লিগে দেখা যাবে চার ব্যালন ডি’অর জয়ীকে। তেলসমৃদ্ধ রাজ্যে রোনালদো তো আছেনই, বেনজেমার যাওয়াও প্রায় নিশ্চিত। বাকি থাকেন মেসি ও মদরিচ। আগস্টে শুরু হবে সৌদি লিগের নতুন মৌসুম। এএফপিকে এক সূত্র বলেছে, আকর্ষণীয় চুক্তির পাশাপাশি তারা বেশ প্রতিযোগিতাপূর্ণ এক লিগে খেলবেন। সৌদি ক্লাব লেভেলকে শক্তিশালী ও প্রতিযোগিতাপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠা করতে চায় কর্তৃপক্ষ।

পঞ্চাশের দশকের শেষ নাগাদ সৌদি আরবের ফুটবল আঞ্চলিক ভিত্তিতে সংগঠিত ছিল, তখন দেশব্যাপী একমাত্র টুর্নামেন্ট ছিল কিংস কাপ। ১৯৫৭ সালে মধ্য, পশ্চিম, পূর্ব এবং উত্তর অঞ্চলের আঞ্চলিক টুর্নামেন্টসহ প্রথম জাতীয় লিগ অনুষ্ঠিত হয়। সে সময় কিংস কাপের জন্য যোগ্যতা অর্জনের জন্য ক্লাবগুলো তাদের আঞ্চলিক লিগে অংশ নিত এবং চূড়ান্ত পর্বে কিংস কাপে সুযোগ পেত। কিংস কাপের বিজয়ীকে লিগের বিজয়ী ধরা হতো। ১৯৮১ সালে ক্লাবের সংখ্যা বৃদ্ধি করার এবং দ্বিতীয় বিভাগ যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯৮১-৮২ এর লিগ প্রতিযোগিতা র্যাঙ্কিং লিগ হিসাবে পরিচিত, ১৮টি ক্লাব নিয়ে এটি অনুষ্ঠিত হয়। শীর্ষ আটটি দল প্রথম বিভাগের জন্য এবং নিচের ১০টি দল নতুন দ্বিতীয় বিভাগের জন্য যোগ্যতা অর্জন করে। পরে ১৯৮৪-৮৫ মৌসুমে প্রথম বিভাগের ক্লাবের সংখ্যা ১২ তে উন্নীত করা হয়। ১৯৯০ সালে স্থানীয় প্রতিযোগিতা পুনর্গঠন এবং পেশাদার ফুটবল লিগ প্রবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ‘দুই পবিত্র মসজিদের তত্ত্বাবধায়ক লিগ’ নামে একটি নতুন লিগ চ্যাম্পিয়নশিপ গঠন করা হয়, এটি দুই-পর্যায়ের চ্যাম্পিয়নশিপ ছিল। প্রথম পর্যায়ে নিয়মিত ডাবল রাউন্ড-রবিন লিগ পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হয় এবং শীর্ষ চার দল নকআউট পদ্ধতির ফাইনালপর্বে উন্নীত হয়। একে গোল্ডেন স্কোয়ার বলা হয়। ক্লাবগুলোকে পেশাদার ভিত্তিতে খেলোয়াড়দের স্বাক্ষর করার অনুমতি দেয়া হয়েছিল যা লিগকে আধা পেশাদার লিগে পরিণত করে। ২০০৭ সালে লিগটি পেশাদার লিগে পরিণত হয়।

Link copied!