Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২০ মে, ২০২৪,

হুটহাট সিদ্ধান্তে অসন্তোষ

মো. নাঈমুল হক

আগস্ট ১০, ২০২৩, ০১:০৩ এএম


হুটহাট সিদ্ধান্তে অসন্তোষ

প্রাথমিকে বৃত্তি পরীক্ষা বাতিল

  • বছরের ব্যবধানে বৃত্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত
  • গাইড কিনেছে ও কোচিং করছে সম্ভাব্য পরীক্ষার্থীরা  
  • শিশুদের পড়ায় মনোযোগ কমে যাওয়ার আশঙ্কা

শিক্ষার্থীদের স্কুল কার্যক্রম বা এক্সটা কারিকুলাম দক্ষতায় বৃত্তির টাকা খরচ করা হবে
—প্রফেসর ফরহাদুল ইসলাম
চেয়ারম্যান, এনসিটিবি

বৃত্তি পরীক্ষা নতুন শিক্ষা কারিকুলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক 
—রাশেদা কে চৌধুরী

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা পিএসসি পরীক্ষা বাতিলের পর নতুন করে প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে গত বছর। এর এক বছরের মাথায় পুনরায় বৃত্তি পরীক্ষা বন্ধের সিদ্ধান্ত এসেছে। ফলে ক্ষোভ জানিয়েছেন অভিভাবকরা। তারা বলেছেন, সরকার হুটহাট যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়, আবার তা বাতিল করে। এ কেমন সিদ্ধান্ত? বৃত্তি পরীক্ষা না থাকলে সন্তানদের তো পড়াশোনা কমে যাবে। 

তবে শিক্ষামন্ত্রী বলছেন, আমাদের ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী বৃত্তি পরীক্ষা দিতে পারেন। পরীক্ষা কেন্দ্রিক আমাদের শিক্ষক ও অভিভাবকদের ওই ২০ শতাংশের ওপর মনোযোগ বেশি থাকে। বাকি ৮০ শতাংশ একেবারেই বঞ্চিত হন। এ কারণেই বৃত্তি পরীক্ষা থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।  এছাড়া শিক্ষাবিদরা বৃত্তি বাতিলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।

জানা যায়, করোনার কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালের পিএসসি পরীক্ষা নেয়া হয়নি। এরপর ২০২২ সালে পিএসসি পরীক্ষা বাতিল করে বৃত্তি পরীক্ষা নেয়ার ঘোষণা দেয়। এ ক্ষেত্রে সব শিক্ষার্থীর পরিবর্তে ২০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে বৃত্তির জন্য মনোনয়ন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু এক বছর পর পুনরায় আবার বৃত্তি পরীক্ষা না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে নারিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক আজমত হোসেন বলেন, সরকার হুটহাট যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয় আবার বাতিল করে। এ কেমন সিদ্ধান্ত? সন্তানদের পরীক্ষার উদ্দেশ্য বাজার থেকে গাইড কিনেছি। এর আলোকে তারাও ভালো ভাবে পড়াশোনা করছিল। নরসিংদীর আদর্শ একাডেমির অভিভাবক খন্দকার মাহফুজ বলেন, পিএসসি যখন বাতিল করেন তখন ওনাদের মাথায় বিভাজনের চিন্তা ছিল না। এখন হঠাৎ করে মনে হলো বৃত্তিতে বিভাজন তৈরি হয়। আমার সন্তানের জন্য ইতোমধ্যে গাইড কিনেছি এবং কোচিংয়েও দিয়েছি। এখন তো ওর পড়াশোনা কমে যাবে। 

অপরদিকে বৃত্তি পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রভাব পড়েছে। এ নিয়ে সুবর্ণা সওদাগর বলেন, বৃত্তির জন্য বই কেনা, কোচিং করা। এত প্রস্তুতি নেয়া। সবই বৃথা? তাসলিমা নারগিস বলেন, কি যে হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না। যখন যা খুশি তাই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এখন আবার বলছে ভিন্ন আঙ্গিকে নেবে। সেই ভিন্ন আঙ্গিকটা কী? সেটাও তো পরিষ্কার করছে না। রিয়াদ হোসাইন বলেন, পিএসসি বাদ দিয়ে ছেলেমেয়ে ও অভিভাবকদের আগ্রহটাই নষ্ট হয়ে গেছে। আর এখন যদি বৃত্তিও বাদ দেয় তাহলে পড়ালেখায় আরও ঝুঁকি এসে যাবে। মেধা বলে কিছু থাকবে না। 

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, বৃত্তি না দেয়া হলেও বৃত্তির টাকা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন স্কুল একভিটির (কার্যক্রমের) ওপর ভিত্তি করে একবারেই দেয়া হবে। বর্তমানের বৃত্তির পুরো টাকাই ওইভাবে খরচ করা হবে। তবে সব শিক্ষার্থীকে বৃত্তির আওতায় আনার ব্যাপারে জানতে চাইলে এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, এখনো পুরোপুরি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। শীঘ্রই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হলে আপনারা জানতে পারবেন।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, বৃত্তি পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে এটা একটা ভালো সিদ্ধান্ত। গত বছর এ ব্যাপারে ৪২ জন বিশেষজ্ঞ উদ্বেগ জানিয়েছে। এটা নতুন কারিকুলামের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। পৃথিবীর কোথাও শিশুদের এভাবে পড়াশোনার জন্য চাপ দেয়া হয় না। আমাদের দেশ অনেক পরে হলেও এ ধরনের একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটাকে সাধুবাদ জানানো উচিত। অভিভাবকদের পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে হবে। 

প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষা থাকবে না জানিয়ে ৮ আগস্ট শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষা থাকবে কী থাকবে না এটা তাদের বিষয়। আমাদের আন্তঃমন্ত্রণালয়ের একটা বৈঠক ছিল। এর আলোকে বলতে পারি, আমাদের অনেক অসচ্ছল শিক্ষার্থী উপবৃত্তি পায়। বৃত্তি পরীক্ষার মাধ্যমে আমাদের শিক্ষার্থীদের মাঝে মেধাবী ও অমেধাবী একটা বিভাজন তৈরি হয়। আমাদের ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী বৃত্তি পরীক্ষা দিতে পারেন। শিক্ষক, অভিভাবকদের ওই ২০ শতাংশের ওপর মনোযোগ থাকে। বাকি ৮০ শতাংশ একেবারেই বঞ্চিত হন। তারা ছোট বেলা থেকেই নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েন। সে কারণে এটি থাকছে না। কিন্তু যারা ভালো করবে। যেকোনো বিষয়ে দক্ষতা দেখাবে তাদের নানান রকম মেধার স্বাক্ষর রাখবেন। যেমন আমাদের সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা আছে। এরকম প্রাথমিকের অনেক ধরনের প্রতিযোগিতা আছে। যারা খুব ভালো করছে। এর মাধ্যমে তাদের পুরস্কৃত করা সম্ভব। আমার মনে হয় না এতে কোনো সমস্যা হবে।
 

Link copied!