Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২০ মে, ২০২৪,

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাড়ছে ডেঙ্গু আতঙ্ক

মো. নাঈমুল হক

আগস্ট ২০, ২০২৩, ১১:৪৪ পিএম


শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাড়ছে ডেঙ্গু আতঙ্ক
  • ঢাকায় আক্রান্তের হারে শিশুরা এগিয়ে
  • কয়েক দিন পরপর শোনা যাচ্ছে মৃত্যুর খবর
  • জরিমানার ভয়ে স্কুলে পাঠাচ্ছেন অভিভাবকরা

স্কুল বন্ধ ও অনলাইন ক্লাসের জন্য সরকারি নির্দেশনা দরকার  
—ফাওজিয়া রাশেদী, অধ্যক্ষ, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল

রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাড়ছে ডেঙ্গু। ইতোমধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনায় সন্তান নিয়ে দুশ্চিন্তায় অভিভাবকরা। সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন কেউ কেউ। অনেকেই নিরূপায় হয়ে জরিমানার ভয়ে স্কুলে পাঠাচ্ছেন। তবে ঢাকার একটি স্বনামধন্য স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেছেন, স্কুল বন্ধ ও অনলাইন ক্লাসের জন্য সরকারি নির্দেশনা দরকার। জানা যায়, ঢাকায় শিশুদের ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি। ১৫ বছরের নিচে শিশুদের ডেঙ্গু আক্রান্তের হার ২৫ শতাংশ। এর আগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আইডিয়াল স্কুলের এক শিক্ষার্থী মারা যায়। আবার, ভিকারুননিসা গার্লস স্কুলেরও দুই শিক্ষার্থী ডেঙ্গুতে মারা গেছে। 

সম্প্রতি মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের অভিভাবকদের এক জরিপে দেখা যায়, ওই স্কুলের চার শতাধিক শিক্ষার্থী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। অভিভাবকরা জানিয়েছেন, ডেঙ্গু বর্তমানে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। পরিবারসহ আমরা আক্রান্ত হচ্ছি। এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীদের কীভাবে স্কুলে পাঠাই? এ ছাড়া প্রতিদিনই কোনো না কোনো শিক্ষার্থী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। আপাতত, অনলাইন ক্লাস চালু করুক। 

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের অভিভাবক ইয়াসিন খান বলেন, অনতি বিলম্বে স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা উচিত, আমার দুই সন্তান এই স্কুলের ছাত্র, আমরা অত্যন্ত চিন্তিত। 

আরেকজন অভিভাবক বলেন, আমার ছেলে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। আমার ছোট বাচ্চাকে নিয়ে ১৭ দিন আর স্বামীকে নিয়ে আট দিন হাসপাতালে ছিলাম। তারা ডেঙ্গু আক্রান্ত ছিল। আমার স্বামীর এখনো ডেঙ্গু পজিটিভ। এ অবস্থায় ছেলেকে নিয়ে স্কুলে যাওয়া আসার কেউ না থাকায় স্কুলে যেতে পারিনি। এ অবস্থায় জরিমানা করা কী বিবেক সম্মত? আমাদের সমস্যাগুলো বিবেচনার অনুরোধ জানাচ্ছি। 

রাজধানীর একটি স্কুলের অভিভাবক সাহেলা নিপা বলেন, প্লিজ স্কুলটা বন্ধ দেয়া উচিত, আমরা গার্ডিয়ানরা খুবই আতঙ্কিত হয়ে আছি এবং আশেপাশে এরকম মৃত্যুর সংবাদ আর নিতে পারছি না। 

সুমন চৌধুরী বলেন, আমার মেয়েরও ২০-২৫ দিন আগে সিভিয়ার ডেঙ্গু হয়েছিল এবং ১৫ দিন সে অনেক কষ্ট পেয়েছিল। এখন স্কুলে গেলেও প্রচণ্ড ভয়ে থাকি, যদি আবারও আক্রান্ত হয়! ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলেও স্কুলের জরিমানা থেকে রেহাই মেলে না শিক্ষার্থীদের। 

আইডিয়াল স্কুল বনশ্রী শাখার একজন অভিভাবক আবু নাসের চৌধুরী বলেন, আমার ছেলে ও মেয়ে দুই জনই ডেঙ্গু আক্রান্ত ছিল, দরখাস্ত দেয়ার পরও একজনের এক হাজার ২৪০ আরেক জনের ৬২০ টাকা জরিমানা ধরা হয়েছে। জরিমানা পরিশোধ করে আমি বেতন না দিয়ে চলে এসেছি। 

অভিভাবক মরিয়ম আক্তার বলেন, আমার ছোট ছেলে আর আমি কয়েক দিন ধরে অসুস্থ। আলহামদুলিল্লাহ, আজকে টেস্ট রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। বড় ছেলেকে নিয়ে স্কুলে যেতে পারছি না। স্যারদের বিবেচনায় যা খুশি করুক। 

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশেদী বলেন, হুট করে স্কুল বন্ধ ও অনলাইনে ক্লাসের সিদ্ধান্ত নেয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। সরকারের নির্দেশনা দরকার। আমরা চাইলেই এটি করতে পারি না। সরকার যদি মনে করে, ডেঙ্গুর প্রকোপের মধ্যে কিছু দিন বন্ধ রাখতে হবে। অনলাইনে ক্লাস নিতে হবে। তেমন নির্দেশনা পেলে অন্যদের মতো আমরাও তা করব।

আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বনশ্রী শাখার ইংরেজি ভার্সনের (দিবা) সহকারী প্রধান শিক্ষক কলিম মুহাম্মদমূর্শেদ বলেন, তিন মাস পরপর আমরা জরিমানার টাকা আদায় করে থাকি। জুন মাসের পর আমরা ডেঙ্গু বা অসুস্থতাজনিত কারণে কেউ দরখাস্ত করলে জরিমানা নিচ্ছি না।

অভিভাবকদের কয়েকটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তার দৃষ্টিগোচর করা হলে তিনি বলেন, ওই অভিভাবকরা যেহেতু অভিযোগ করছেন, রোববার স্কুল সময়ে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বলবেন। আমি তাদের জরিমানাটা মওকুফ করে দেবো।
 

Link copied!