Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২০ মে, ২০২৪,

সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ডেঙ্গু

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

আগস্ট ২১, ২০২৩, ১১:৫৯ পিএম


সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ডেঙ্গু
  • ২০০৭ থেকে ২০১০ এবং ২০১৪ সালে আক্রান্ত থাকলেও কোনো মৃত্যু ছিল না।

স্থানীয় সরকার বিভাগ দ্বারা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এ ব্যবস্থা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করা প্রয়োজন
—অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ, সাবেক পরিচালক, রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

চলতি বছরের শুরু থেকে বিশেষজ্ঞরা ডেঙ্গুর প্রকোপ দ্রুত ছড়িয়ে পড়া দেখে আশঙ্কা করেছিলেন, বিগত বছররগুলোকে ছাড়িয়ে যাবে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা। অবশেষে সেই শঙ্কা সত্য হলো। সর্বশেষ গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো তথ্য বলছে, দেশে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এক লাখ দুই হাজার ১৯১ জন এবং মৃত্যু ৪৮৫ জনের। যা দেশের ডেঙ্গু রোগের ইতিহাসে সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। এর আগে ২০১৯ সালে দেশে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন এবং ওই বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন ১৫৬ জন। বাংলাদেশে ডেঙ্গু শনাক্ত হয় ২০০০ সালে। সেই সময় থেকে ২০২৩ সালের ২১ আগস্ট পর্যন্ত  মশাবাহিত রোগটি বিভিন্ন সময়ে কখনো বেড়েছে আবার কখনো কমেছে। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে ২০০০ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজার ৫৫১ জন। সেই বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন ৯৩ জন। তার পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যু বিভিন্ন সংখ্যায় উঠা-নামা করলেও ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যায়। সেই বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সর্বোচ্চ মৃত্যুও দেখে দেশ। ২০০৭ থেকে ২০১০ এবং ২০১৪ সাল  এ পাঁচ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত থাকলেও মৃত্যু ছিল শূন্য। ২০১৯ সালের পরবর্তী বছরগুলোতে ডেঙ্গু কিছুটা সহনশীল থাকলেও ২০২৩ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেলো। যা স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় শঙ্কা ও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। 

দেশে ডেঙ্গু রোগের শুরুর দিকের একজন ডাক্তার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ। তার সাথে আমার সংবাদের কথা হয় দেশের ডেঙ্গু রোগের অতীত ও বর্তমান অবস্থা নিয়ে। তিনি বলেন, ২০০০ সালে যখন প্রথম ডেঙ্গু রোগ শনাক্ত হলো তখন আমরা এ রোগটি সম্পর্কে নতুন করে জানতে পারি। রোগটি যেহেতু নতুন ছিল তাই এ রোগের চিকিৎসা ও প্রতিকার সম্পর্কে আমাদের নতুন করে জানতে হয়েছিল। আমরা সেই সময়ে বিভিন্ন দেশে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে শুরু করলাম। আমাদের কোনো প্রস্তুতি না থাকায় হঠাৎ করে একটি রোগ এসে অনেকটা জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। সেই বছর বেশ কিছু মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারাও গিয়েছিলেন। এর মধ্যে আমাদের কয়েকজন ডাক্তারও ছিলেন। 

ডেঙ্গুর বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি আমার সংবাদকে বলেন, ডেঙ্গু ইতোমধ্যে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ডেঙ্গু আমাদের জন্য এখন সম্পূর্ণরূপে স্থায়ী রোগ হয়ে উঠেছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য যে কাজ করা হচ্ছে তা কারিগরিভাবে হচ্ছে না। যেটি হচ্ছে সেটি সাধারণ মশা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য এ পদ্ধতি কাজে আসছে না। কীটতত্ত্ববিদ ও অভিজ্ঞদের সমন্বয়ে কাজ করা জরুরি। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের চলমান কার্যক্রম যেহেতু সফল হচ্ছে না; সুতরাং কার্যক্রম পরিবর্তন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘স্থানীয় সরকার বিভাগের পক্ষে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করা প্রয়োজন।’

দেশের বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে আমার সংবাদ কথা বলে কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশারের সাথে। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাবের ফলে সারা বিশ্বে এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে হুঁশিয়ারি দিয়েছে, বিশ্বের অর্ধেক মানুষ ডেঙ্গুঝুঁকিতে রয়েছে। আমাদের দেশে অপরিকল্পিত নগরায়ণ, নিরবচ্ছিন্ন পানি সরবারহ ব্যবস্থা না থাকায় ডেঙ্গু প্রকোপ বেড়েছে। তা ছাড়া আমাদের এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের ঘাটতি আছে। এসব কিছু মিলিয়ে ডেঙ্গুর বর্তমান অবস্থা। ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে আমাদের এখনই রাষ্ট্রীয়ভাবে একটি টেকসই পরিকল্পনা করতে হবে। দেশে সংক্রমণ আইন রয়েছে, সেই আইনে বলা আছে কেউ সংক্রামণ রোগে আক্রান্ত হলে তাকে সরকারের কাছে তথ্য দিতে হবে। এতে সরকার রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিতে পারবে। সঠিক সময়ে ব্যবস্থা নিতে পারলে সংক্রমণ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে অন্যের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমবে।
 

Link copied!