আগস্ট ২৫, ২০২৩, ১১:৩১ পিএম
- ২৪ মাসের পরীক্ষা ১৪ মাসে নেয়ার চেষ্টা
- সিলেবাসের চাপে আন্দোলনের কথা ভাবছেন শিক্ষার্থীরা
- ১৪ মাসে সিলেবাস শেষ করা সম্ভব নয় —বলছেন শিক্ষকরা
স্বল্পসময়ে পরীক্ষায় শিখন ঘাটতি ও শিক্ষার মান কমে যাবে
—ড. ছিদ্দিকুর রহমান
সাবেক পরিচালক, ঢাবি আইইআর
মন্ত্রী চেষ্টা করতে বলেছেন, বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করব
—অধ্যাপক তপন কুমার সরকার
চেয়ারম্যান, ঢাকা বোর্ড
আসন্ন ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষার নিয়ে চলছে তাড়াহুড়া। সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী এইচএসসি পরীক্ষা আগামী এপ্রিলে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এরই আলোকে তাড়াহুড়া করে সিলেবাস শেষ করার চেষ্টা করছেন শিক্ষকরা। ফলে শিক্ষকদের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বলছেন, দুই বছরের পড়ালেখা এক বছরের কীভাবে শেষ করব? এর মধ্যে বিভিন্ন পরীক্ষা তো আছেই। তবে শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান বলেছেন, মন্ত্রী চেষ্টা করতে বলেছেন। বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণ করব। স্বল্প সময়ে পরীক্ষা হলে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি দেখা দেবে। একই সঙ্গে শিক্ষার মান কমে যাবে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা।
জানা যায়, সাধারণত একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা ২২ থেকে ২৪ মাস সময় পান। তবে এটি কখনোই ১৮ মাসের নিচে নামেনি। ২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা ১৮ মাসে পরীক্ষা দিচ্ছেন। এর ফলে শিক্ষার্থীদের যথাযথ প্রস্তুতি হয়নি জানিয়ে চার দফা দাবিতে রাজপথে আন্দোলনে নামে। আগামীতে ১৪ মাসে পরীক্ষা নেয়া হলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নামার আশঙ্কা রয়েছে। করোনার পর থেকে শিখন সূচিকে স্বাভাবিক করার জন্য সরকারের তাড়াহুড়া করছে। গত ২৮ নভেম্বর ২০২২ সালে এসএসসির রেজাল্ট প্রকাশিত হয়েছে। এরপর ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারির শুরুতে কলেজে ক্লাস শুরু হয়। ক্লাস শুরুর ১৪ মাসের মধ্যে আগামী বছরের এপ্রিলে তাদের পরীক্ষা নেয়ার চিন্তা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী সাজিদুর রহমান বলেন, এপ্রিলে এইচএসসি পরীক্ষার ঘোষণার পর থেকে শিক্ষকরা দ্রুত সময়ে অধ্যায়গুলো শেষ করছেন। আমরা ঠিকমতো তাদের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছি না। এত কম সময়ে সিলেবাস শেষ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। এর মধ্যে আমাদের প্রথম বর্ষের অর্ধ-বার্ষিক, বার্ষিক। দ্বিতীয় বর্ষের অর্ধ-বার্ষিক ও প্রি-টেস্ট ও টেস্ট পরীক্ষা আছে। সিলেবাস সামান্য কমানো হয়েছে জানিয়ে মতিঝিল মডেল স্কুলের শিক্ষার্থী আফনান আহমেদ বলেন, আগের বছর সিলেবাস খুবই সামান্য কমানো হয়েছে। ৯০ শতাংশ সিলেবাসই রাখা হয়েছে। এই স্বল্প সময়ে এত বড় সিলেবাস শেষ করা কীভাবে সম্ভব? বড় ভাইদের কাছে শুনতাম, ইন্টারে (ইন্টারমিডিয়েট) পড়ার চাপ বেশি। ওনারা যদি দুই বছরে এত চাপ অনুভব করেন। সেখানে এক বছরে কত বেশি চাপ যাচ্ছে, বুঝতেই পারছেন।
আন্দোলনে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই জানিয়ে গেন্ডারিয়ার মনিজা রহমান গার্লস কলেজের শিক্ষার্থী বলেন, এবারের পরীক্ষার্থীরা কেন আন্দোলনে নেমেছে? কারণ ১৮ মাসে তারা সিলেবাস শেষ করতে পারেননি। আমাদের তো সময় আরো কম। শেষ পর্যন্ত দেখব, যদি সময় না বাড়ায় তাহলে আন্দোলনে নামা ছাড়া উপায় থাকবে না। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ (রুটিন দায়িত্ব) মো. মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা কলেজে এসেছে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে। আগামী বছরের এপ্রিলে পরীক্ষা নেয়া হলে সিলেবাস শেষ করা সম্ভব হবে না। তবে সিলেবাস শেষ করতে হলে তাড়াহুড়া করে শেষ করতে হবে। একটি অধ্যায়ের কিছু অংশ পড়িয়ে পরের অধ্যায়ে যেতে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানীর একটি গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, ‘এটি কেমন ধরনের সিদ্ধান্ত? ইন্টারের দুই বছরের এমনিতেই শিক্ষার্থীরা চাপে থাকে। এর মধ্যে আবার আট মাস কমিয়ে পরীক্ষা নেয়া হলে শিক্ষার্থীদের গ্যাপ রেখেই পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের রেজাল্ট খারাপ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অন্তত জুলাই মাস পর্যন্ত সময় দেয়া উচিত।’
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, ‘মন্ত্রী চেষ্টা করার কথা বলেছেন। তবে বিষয়টি নিয়ে আমরা পর্যবেক্ষণ করব। সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বসে ঠিক করব, সিলেবাস শেষ করতে কত সময় লাগবে। পরে মন্ত্রীর পরামর্শ নিয়ে পরীক্ষাসূচি ঠিক করব।’
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে আমাদের একটি পরিকল্পনা থাকা উচিত। এসএসসি পরীক্ষার পরপরই দ্রুত শিক্ষার্থীদের ভর্তি করিয়ে নেয়া উচিত। আর এসএসসি পরীক্ষা ফেব্রুয়ারিতে নেয়া হলে তো সমস্যা নেই। ফলে আরো এক বছর পর এইচএসসি পরীক্ষা শুরু করতে পারে। এবারের এইচএসসি পরীক্ষা জুলাই বা আগস্টে নেয়া যেতে পারে।’
স্বল্প সময়ে পরীক্ষা নেয়ার ক্ষতির কথা জানিয়ে এ শিক্ষাবিদ বলেন, ‘স্বল্প সময়ে পরীক্ষা নেয়া হলে দুই ধরনের সমস্যা দেখা দেবে। শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি দেখা দেবে ও শিক্ষার মান কমে যাবে।