Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ১০ মে, ২০২৫,

৪৬ বছরে বিএনপি

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী থেকে নতুন যাত্রা

আবদুর রহিম

আগস্ট ৩১, ২০২৩, ১১:১৬ পিএম


প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী থেকে নতুন যাত্রা
  • ঢাকামুখী বড় কর্মসূচি পালনে শক্তি সঞ্চয়
  • হাইকমান্ড থেকে তৃণমূল তারেক নেতৃত্বে সন্তুষ্ট
  • চলতি মাসেই ঢাকায় বড় কর্মসূচি পালনের টার্গেট

আজ ১ সেপ্টেম্বর। ৪৬ বছরে পা রাখল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। পালিত হবে ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালের এই দিনে বিএনপি গঠন করেন। তিনি ছিলেন দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে সামরিক অভ্যুত্থানে জিয়াউর রহমান নিহত হন।

এরপর নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে ১৯৮৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বিএনপির হাল ধরেন তারই সহধর্মিণী খালেদা জিয়া। কিছু সময় ভালো কাটানোর পর প্রতিষ্ঠার  সাড়ে চার দশকের মধ্যে গত এক যুগের বেশি সময় ধরে সবচেয়ে প্রতিকূল সময় পার করছে দলটি। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারারুদ্ধ হওয়ার পর থেকে দলের অবস্থা অনেকটা নাজুক হয়ে পড়ে। তিনি সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষ মুক্তি পেলেও অসুস্থতা ও বিধিনিষেধের বেড়াজালে এখনো সক্রিয় হতে পারেননি। অসুস্থতা নিয়ে বারবার হাসপাতালে যাচ্ছেন। 

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বেগম জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব লাভ করেন লন্ডনে বসবাসরত দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি দলকে গণতান্ত্রিক পন্থায় পুনর্গঠিত করে সর্বস্তরে শক্তিশালী ও আন্দোলনমুখী করার উদ্যোগ নেন। তার প্রচেষ্টায় দলকে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত ঢেলে সাজানোর কাজ হয়েছে। সেই সঙ্গে তার নেতৃত্বে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত মিছিল সমাবেশ আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। গত এক বছর ঢাকামুখী বড় কর্মসূচি পালন করে এখন অনেকটাই চাঙ্গা। 

দলের স্থায়ী কমিটির একাধিক সিনিয়র নেতা সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নিরলস প্রচেষ্টা ও দিকনির্দেশনায় দলের সর্বস্তরে গতিশীলতা ফিরেছে। তারেক রহমান প্রতিদিনই বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে স্কাইপিসহ ভার্চুয়াল মাধ্যমে বৈঠক করছেন, দিকনির্দেশনা আদেশ-নির্দেশ দিচ্ছেন। প্রতি সপ্তাহে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক হচ্ছে। সেখানে দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি ও দলীয় বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত ও প্রস্তাবনা গৃহীত হচ্ছে। তারেক রহমানের নেতৃত্বের ওপর হাইকমান্ড থেকে তৃণমূল সবাই সন্তুষ্ট। সেপ্টেম্বর থেকে তারা বর্তমান সরকারকে সরাতে নতুন কর্মসূচি ও নতুন কৌশল নিয়ে রাস্তায় নামবেন। তাদের আন্দোলন ও ঐক্যের মাধ্যমে সরকার সরে যেতে বাধ্য হবে। অল্প সময়ের জন্য তারা সেপ্টেম্বরে আন্দোলনে নামবে। বৃহৎ অবস্থান ও ঘেরাও কর্মসূচি চলতি মাসেই বাস্তবায়ন করা হবে। 

আজ প্রতিষ্ঠার ৪৫ বছর উদযাপনে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি। ১ সেপ্টেম্বর সকালে কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশের কার্যালয়গুলোতে দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে কর্মসূচি। সেদিন বেলা ১১টায় শেরেবাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে ফাতেহা পাঠ ও পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হবে। দলটি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভাও করবে দলটি কেন্দ্রীয় কর্মসূচির বাইরে সব জেলা ইউনিট ও অঙ্গসংগঠনগুলো কর্মসূচি পালন করবে নিজেদের মতো করে। 

দল গঠনের ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধান হন। ৭ নভেম্বরের সামরিক অভ্যুত্থানের পর তিনি শাসন ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন; ১৯৭৬ সালের ২৯ নভেম্বর তিনি হন প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক। ১৯৭৭ এর ২১ এপ্রিল বিচারপতি আবু সাদাত সায়েমকে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে সরে যেতে হয়, জিয়া তখন ওই দায়িত্বও নেন। সে সময় জিয়ার সামরিক শাসনকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টায় একটি গণভোটের আয়োজন করা হয়, যাতে ৯৮.৯ শতাংশ ‘হ্যাঁ’ ভোট পড়ে। সামরিক আইন প্রশাসক থাকা অবস্থায় জিয়াউর রহমানের পৃষ্ঠপোষকতায় ১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) নামে একটি ডানপন্থি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গঠিত হয়। ওই বছর ১ মে জিয়াউর রহমানকে চেয়ারম্যান করে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট’ ঘোষণা করা হয়। সেনাবাহিনী প্রধানের পদে থেকে পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদ বনে যান জিয়া। ৩ জুন নির্বাচন দিয়ে ওই ‘জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট’ থেকে প্রার্থী হয়ে তিনি ‘নির্বাচিত’ রাষ্ট্রপতি হন। নির্বাচনের তিন মাসের মাথায় ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঢাকার রমনা রেস্তোরাঁয় এক সংবাদ সম্মেলনে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।

জাগদল, মশিউর রহমান যাদু মিয়ার নেতৃত্বাধীন ন্যাপ, আবদুল হালিম-আকবর হোসেনের নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপলস পার্টি, আব্দুল মতিনের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি ও শাহ আজিজুর রহমানের মুসলিম লীগ বিলীন হয় জিয়ার বিএনপিতে। প্রতিষ্ঠার সেই দিনটি স্মরণে দল ও অঙ্গসংগঠনগুলো পোস্টার ও বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। এ নিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, আওয়ামী লীগ সরকারকে হটাতে হলে শুধু বিএনপির ঐক্য নয়, জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। যুগপৎভাবে আমার রাস্তায় রয়েছি।  বৃহত ঐক্যের মাধ্যমে সরকার সরে যাবে। দেশে নতুন সূর্যোদয় হবে। 

দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সফল নেতৃত্বে দলের ঐক্য অটুট ও সুদৃঢ় হয়েছে। দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমাদের অঙ্গীকার হবে আন্দোলনের মাধ্যমে হারানো ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা এবং বাক-ব্যক্তি ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাসহ বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও জনগণের মানবিক মর্যাদা সুরক্ষা করা।

 

Link copied!