Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ১১ মে, ২০২৫,

আবেদনে বাড়তি ফি-কমিশনের ওপর ভ্যাট

চাকরিপ্রত্যাশীদের ক্ষোভ

মো. নাঈমুল হক

সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৩, ১২:১০ এএম


চাকরিপ্রত্যাশীদের ক্ষোভ
  • বেকারদের আবেদন ফি কমানোর দাবি দীর্ঘদিনের 
  • উল্টো যুক্ত হলো কমিশনের ওপর ১৫ শতাংশ কর
  • সর্বোচ্চ ২০০ টাকা ফি নির্ধারণ দাবি চাকরিপ্রত্যাশীদের

চাকরির আবেদনে ফি নির্ধারণ করাই উচিত নয় 
—গোলাম রহমান
দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান

আবেদনে ফি কমাতে দীর্ঘ দিন ধরে দাবি করে আসছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। কিন্তু এ দাবি আমলে না নিয়ে  উল্টো গত বছর আবেদন ফি বাড়িয়েছে সরকার। ফি বাড়ার ধারাবাহিকতায় এ বছর যুক্ত হয়েছে কমিশনের ওপর ১৫ শতাংশ কর। এতে নতুন করে চাকরিপ্রত্যাশীদের মধ্যে অসন্তোষ বেড়েছে। সম্প্রতি আবেদন ফি সর্বোচ্চ ২০০ টাকা নির্ধারণ দাবিতে মানববন্ধন করেছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা যায়, সম্প্রতি অর্থমন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে চাকরির আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। একই ফি ছিল গত বছরের সেপ্টেম্বরের প্রজ্ঞাপনেও। এবার নতুন করে যুক্ত হয়েছে কমিশনের ওপর কর (কমিশন হলো আবেদন ফি প্রদানের পদ্ধতিকে দেয়া অর্থ)। 

অর্থাৎ নবম গ্রেডের চাকরির পরীক্ষার আবেদন ফি ৬০০ টাকা। এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে ১০ শতাংশ কমিশন। ৬০০ টাকার ১০ শতাংশ ৬০ টাকা। অর্থাৎ এ গ্রেডে আবেদন করতে হলে এমনিতেই লাগছিল ৬৬০ টাকা। এখন আবার ওই কমিশনের ৬০ টাকার ওপর ১৫ শতাংশ কর হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। সুতরাং এখন থেকে আবেদনে আরও ৯ টাকা বাড়তি দিতে হবে। ফলে মোট আবেদন খরচ হবে ৬৬৯ টাকা।  

অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন থেকে জানা যায়, নবম গ্রেডের চাকরিপ্রার্থীদের আবেদন ফি ৬০০ টাকা। দশম গ্রেডের ৫০০ টাকা। ১১তম থেকে ১২তম গ্রেডের ৩০০ টাকা। ১৩তম থেকে ১৬তম গ্রেডের ২০০ টাকা। ১৭তম থেকে ২০তম গ্রেডের ১০০ টাকা। যদিও গত বছরের সেপ্টেম্বরের আগে চাকরির আবেদন ফি ছিল নবম ও দশম গ্রেডের জন্য ৫০০ টাকা। ১৩ থেকে ১৬তম গ্রেডের ফি ১০০ টাকা। ১৭ থেকে ২০তম পর্যন্ত আবেদন ফি ছিল ৫০ টাকা। সম্প্রতি চাকরির আবেদন ফি সর্বোচ্চ ২০০ টাকা করার জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। আবেদন ফি কমানোর দাবিতে মানববন্ধনে বক্তারা ‘চাকরির আবেদন ফি সর্বোচ্চ ২০০ টাকা নির্ধারণের দাবি জানান। তাদের দাবি— প্রথম শ্রেণিতে ২০০ টাকা, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১৫০ টাকা, তৃতীয় শ্রেণিতে ১০০ টাকা ও চতুর্থ শ্রেণিতে ৫০ টাকা নির্ধারণ করার। প্রয়োজনে সরকারকে ভর্তুকি দেয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। এ ছাড়া একই তারিখে একাধিক নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া যাবে না বলেও  দাবি জানান তারা।

চাকরির আবেদন ফিতে কর যুক্ত করায় অসন্তুষ্টির কথা জানিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী শাহরিয়ার সজিব বলেন, অনার্সের পর নিজের খরচ চালানোর পাশপাশি পরিবারের দেখাশোনার চাপ যুক্ত হয়। এ সময় যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্যই টার্নিংপয়েন্ট। দ্রব্যমূল্যর ঊর্ধ্বগতির ফলে নিজস্ব খরচ চালিয়ে চাকরির আবেদনে এত টাকা খরচ করা কঠিন। আবেদন ফির পরিমাণ যেখানে অযৌক্তিক সেখানে আবার কর যুক্ত করেছে সরকার। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বেকারদের সঙ্গে সরকারের কিসের ব্যবসা? চাকরি কী কোনো ব্যবসা? এর মধ্যেও কর বসাতে হবে কেন? জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানিশা আক্তার বলেন, দীর্ঘ দিন চাকরির আবেদন ফি কমানোর জন্য দাবি জানিয়ে আসছি। উন্নত বিশ্বে বেকাররা ভাতা পান। আর আমাদের সরকার উল্টো চাকরির আবেদন ফির সাথে কর যুক্ত করে। আমরা আবেদন ফি দেবো। কিন্তু এত বেশি ফি নেয়া হবে কেন? 

চাকরিতে আবেদন ফি থাকাই ঠিক নয় জানিয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান আমার সংবাদের এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘চাকরির পাওয়া শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার। এর জন্য কোনো ধরনের ফি নির্ধারণ করাই উচিত নয়। ভ্যাট বা করারোপের তো প্রশ্নই আসে না। কারণ সরকার বা যারা জনবল নিয়োগ দেবে তারা নিজেদের প্রয়োজনেই সেটি করবে। যেহেতু তারা নিজেদের প্রয়োজনেই লোকজন নিয়োগ দেবে সেখানে আবেদনকারীরা কেন টাকা দেবে?
 

Link copied!