Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ১১ মে, ২০২৫,

১২ হাজারেও ব্যাচেলরদের টানাটানি

মো. নাঈমুল হক

সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৩, ১২:৩৯ এএম


১২ হাজারেও ব্যাচেলরদের টানাটানি

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রভাব পড়েছে সর্বত্রই। এ কারণে অন্যদের মতো ভালো নেই ব্যাচেলররাও। মাসে ১২ হাজার টাকা খরচের পরও টানাপড়েন লেগেই থাকে সব সময়। মোটামুটি চাহিদা পূরণের জন্য অতিরিক্ত পরিশ্রম করেও ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে আছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ধারদেনা করে এবং সঞ্চয়পত্র ভেঙে সন্তানদের পড়াশোনা করাচ্ছেন অভিভাবকরা। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে সহজ কোনো সমাধান দেখছেন না তারা। অন্যদিকে বেকারত্ব ও অর্থনৈতিক চাপসহ নানা কারণে যুবকদের আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে।  

ব্যাচেলরদের এক মাসের খরচ পর্যালোচনায় দেখা যায়, সব ব্যাচেলরের জীবন পরিচালনা বা জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে প্রায় ২৫ থেকে ৩৫ শতাংশ। এক বছর পূর্বে ছয় হাজার ৫০০ থেকে সাত হাজারের মধ্যে মাস কাবার করতে পারলেও বর্তমানে ১২ হাজারেও কুলোচ্ছে না। বর্তমানে প্রতি মাসে বাসা ভাড়া দিতে হয় ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা। এলাকাভেদে আরও বেশি দিতে হয়, যা এক বছর আগেও ছিল ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা। গৃহকর্মীর ভাতাও বেড়েছে। আগে জনপ্রতি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা লাগলেও এখন আর ১০০০ টাকার কমে হচ্ছে না। আগে গ্যাস, বিদ্যুৎ, ওয়াসার পানি, খাবার পানি, ময়লার বিল ইত্যাদির চার্জ মিলিয়ে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে থাকলেও বর্তমানে এক হাজারের বেশি খরচ যাচ্ছে। মিল রেট মেসভেদে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা থাকলেও এখন ৫০-এর নিচে কোনোভাবে মিলরেট রাখা যাচ্ছে না। দুই বেলা সবজি খেলেও মিলরেট ৪০-এর নিচে নামছে না। কোনো কোনো মেসে মিল খরচ ৬০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত দেখা গেছে। সাধারণ চা-বিস্কুটের খরচও দ্বিগুণ বেড়েছে। আগে নাশতার জন্য ২০ টাকার মতো খরচে যা পাওয়া যেত, এখন তা ৫০-৫৫ টাকার কমে হচ্ছে না। বর্তমানে বাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা। লোকাল পরিবহন ব্যবহার করে একবার গ্রামে গেলে কমপক্ষে যাতায়াত খরচ হচ্ছে এক হাজার টাকা। 

জানা যায়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা পরিবার ছাড়া সহপাঠী ও বন্ধুদের সঙ্গে একত্রে থাকেন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কর্মের উদ্দেশ্যে অনেকে পরিবার ছেড়ে রাজধানীতে থাকেন। প্রচলিত ভাষায় তাদের ‘ব্যাচেলর’ বলা হয়। ধারণা করা হচ্ছে রাজধানীতে এমন ব্যাচেলরের সংখ্যা প্রায় এক কোটি। 

খরচ বেড়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পাস করা এক শিক্ষার্থী তানভীর হোসাইন বলেন, ২০১৬ সালে ঢাকায় এসেছি। তখন থেকে ২০২০ পর্যন্ত বাসা ভাড়া ও অন্যান্য খরচ এত বেশি ছিল না। এর আগ পর্যন্ত পাঁচ-ছয় হাজারের মধ্যে চলতে পারতাম। কিন্তু জীবনযাত্রার মান একই থাকলেও বর্তমানে ১২ হাজারেও কুলাতে পারছি না। চাকরির প্রস্তুতির পাশাপাশি অন্যান্য খরচ চালানোর জন্য অতিরিক্ত টিউশনি নিয়েছি। এরপরও ব্যয় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছি। দিন দিন হতাশ হয়ে যাচ্ছি। যাদের পরিবারের সচ্ছলতা আছে, তাদের সঙ্গেই আমার প্রতিযোগিতা করে চলতে হচ্ছে। অথচ আমাকে খরচ জোগানোর জন্য প্রতিনিয়ত ছুটতে হচ্ছে। সবকিছু্র দাম বেড়েছে; কিন্তু টিউশনির সম্মানি বাড়েনি। 

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ুয়া তেজগাঁওয়ের মো. সিয়াম বলেন, পরিস্থিতি অনেক কঠিন হয়ে যাচ্ছে। প্রথম বর্ষে বাসা থেকে টাকা নিয়ে চলতে পারলেও এখন আর বাসার টাকায় চলার উপায় নেই। করোনার পর থেকে এখন দ্বিগুণ খরচ বেড়েছে। বাসা থেকে টাকা নেয়ার পাশাপাশি নিজেও কিছু করার চেষ্টা করছি। কয়েক মাস টিউশনি করেছি। কিন্তু ওই টাকায় এখন আর চলা যাচ্ছে না। এখন দিনের এক-চতুর্থাংশ সময় একটি প্রতিষ্ঠানে পার্টটাইম কাজ করে কোনোরকমে টিকে আছি। জানি না এ সমস্যার সমাধান কী করে করব।
 

Link copied!