সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৩, ১১:৩৭ পিএম
নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে আলু, পেঁয়াজ ও ডিম কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। সরকার মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও তা মানছেন না খুচরা ব্যবসায়ীরা। আবার তাদের মধ্যে অনেকেই জানেন না সরকার নির্ধারিত তিনটি পণ্যের নির্দিষ্ট মূল্য। ফলে যে যার মতো করে পণ্য বিক্রি করছেন সাধারণ ভোক্তাদের কাছে। সাধারণ ক্রেতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত মূল্য নেয়ার পাশাপাশি সরকারি নিদের্শনা অমান্যকারী এ অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি ভুক্তভোগীদের। সরকার আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দাম কমিয়ে নির্ধারণ করে দিয়েছে। ভোক্তারা সরকার নির্ধারিত দামে পাচ্ছেন না পণ্য। পেঁয়াজ, ডিম এখনো বিক্রি হচ্ছে আগের বাড়তি দামেই। আর আলুর দাম বাজারভেদে রাখা হচ্ছে ৫৫ টাকা কেজি।
যদিও গত বৃহস্পতিবার পেঁয়াজ, আলু ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি খুচরা বাজারে প্রতিটি ডিমের দাম ১২ টাকা, আলুর দাম প্রতি কেজি ৩৫-৩৬ টাকা এবং পেঁয়াজের দাম ৬৪-৬৫ টাকা নির্ধারণ করে দেন। ঘোষণার পর থেকেই বাজারে এ দাম কার্যকর হওয়ার কথা। কিন্তু মন্ত্রীর ঘোষণার দুই দিন পরও ভোক্তা পাচ্ছে না নির্ধারিত দামে।
রাজধানীর শান্তিনগর, হারিপুল, রামপুরা, মালিবাগ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি হালি ডিম আগের মতো ৫০-৫২ টাকা অর্থাৎ প্রতিটি সাড়ে ১২ থেকে ১৩ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি সাদা আলু ৫০ টাকা এবং লাল আলু ৫৫ টাকায় রয়ে গেছে। কমেনি পেঁয়াজের দামও। ভারতের আমদানি করা পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে। ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন জানান, সরকার পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে পণ্য ঠিকমতো না পাওয়ায় বেশি দাম দিয়ে কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। সরকার যদি আমদানি বাড়িয়ে পণ্য ঠিক মতো সরবরাহ করে তাহলে দাম এমনিতেই কমে যাবে। আমাদের দাম নির্ধারণ করে দেয়া লাগত না।
সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, সরকারিভাবে ডিমের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ টাকা, আলু ৩৬ ও পেঁয়াজ ৬৫ টাকা। অথচ বিক্রেতারা যে যার মতো করে বিক্রি করছেন। ফলে সব কিছু মিলে পকেটে কাটা যাচ্ছে সাধারণ গ্রাহকদের, এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি ক্রেতাদের।
এদিকে, বাণিজ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, বেঁধে দেয়া দাম বাস্তবায়নে ভোক্তা অধিদপ্তর থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) বাজার মনিটরিং করবেন। জেলা-উপজেলাসহ বড় বড় শহরে মনিটরিং চলবে। সর্বাত্মক শক্তি নিয়ে বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হবে। আলু, পেঁয়াজ ও ডিমসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সারা দেশে অভিযান জোরদার করেছে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এরই অংশ হিসেবে গতকাল রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় অভিযান চালিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অভিযানে মূল্যতালিকা না থাকায় দুই প্রতিষ্ঠানকে চার হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অনেক দিন ধরেই নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। প্রতিটি পণ্যের দাম হু হু করে বাড়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে মানুষকে। সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও সুফল মিলছিল না।
অভিযান শেষে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শরিফুল ইসলাম বলেন, এখানে আমরা বেশ কয়েকটি দোকানে অভিযান পরিচালনা করেছি। এর মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠানে মূল্যতালিকা না থাকায় চার হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর এলাকায় তিনটি টিম রাজধানীর মিরপুর শাহ আলী মার্কেট, মিরপুর-১ বাজার, কারওয়ান বাজার, শান্তিনগর বাজার, মালিবাগ কাঁচাবাজার, যাত্রাবাড়ী ও কুতুবখালী বাজার এলাকায় অভিযান চালায়। এ ছাড়াও অন্যান্য বিভাগীয় শহরসহ দেশের সর্বমোট ৩৯টি জেলায় একযোগে অভিযান পরিচালিত হয়।
এদিকে সরকারে বেঁধে দেয়া দাম নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করা হলেও পাইকারি বাজারে পণ্যগুলো কত দামে বিক্রি হবে তা নির্ধারণ হয়নি। ফলে পাইকারিতে দাম কমেনি। বেশি দামে পণ্য কেনা থাকায় খুচরা বিক্রেতারা সরকার নির্ধারিত দামে পণ্য বিক্রি করতে পারছেন না। পাইকারিতে কমেনি, খুচরায় দাম কমাতে নারাজ ব্যবসায়ীরা। এদিকে সারা দেশে এসব পণ্য ও ওষুধের দাম বেশি নেয়ায় ৯০টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ঢাকা মহানগরসহ দেশের সব বিভাগ ও জেলাপর্যায়ে ৪১টি টিম দিয়ে ৫৩টি বাজারে অভিযান চালায়। অভিযানে ৯০ প্রতিষ্ঠানকে দুই লাখ ৩৭ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আলুর বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেয়া দাম অনুযায়ী ভোক্তা পর্যায়ে আলু দাম বাস্তবায়ন করতে মাঠপর্যায়ে কাজ করছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এ বছর যে পরিমাণ আলু উৎপাদন হয়েছে এতে দেশে আলুর কোনো ঘাটতি নেই, কিন্তু একটি অদৃশ্য হাত আলুর বাজারকে অস্থির করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। গতকাল শনিবার দুপুরে মুন্সগীঞ্জের মুক্তারপুরে রিভারভিউ কোল্ড স্টোরেজ পরিদর্শন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। এদিকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের। সম্প্রতি রংপুর নগরীর পল্লীনিবাসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
জিএম কাদের বলেন, আমিও বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলাম। আমার সময় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়লে মানুষ জানত কেন বেড়েছে। আর যখন কমা উচিত ছিল তখন কমেছে। তখন মানুষের আস্থা ছিল। এখন নানা অজুহাত দিয়ে দাম নিয়ন্ত্রণহীন করা হচ্ছে। সরকার সম্পূর্ণভাবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। তিনটি পণ্য অতিপ্রয়োজনীয় বলে সরকার দাম ঠিক করে দিয়েছে খবরকে সাধুবাদ জানাই কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান।
তিনি বলেন, ‘দাম নির্ধারণ করলেও মুক্তবাজার ব্যবস্থায় তা কার্যকর করা সহজ হবে না। আর হুমকি যত কম দেয়া যায়, ততই ভালো। সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে দরকার হচ্ছে নজরদারি বৃদ্ধি এবং সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখা। নইলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে অভিযান চালানোর অর্থ হবে ক্ষতস্থানে মলম লাগানোর মতো, যাতে মূল রোগ সারবে না।’