সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া
সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৩, ০৮:০৯ পিএম
সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া
সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৩, ০৮:০৯ পিএম
সারা দেশে ডেঙ্গু প্রকোপ বেড়েই চলছে। আগস্ট মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড দেখেছে দেশ। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছিলেন সেপ্টেম্বর মাস আগস্টকে ছাড়িয়ে যাবে। সে আশঙ্কাই সত্য হলো। আগস্ট মাসের প্রথম ১৮ দিনে রোগী ছিল ৪৪ হাজার ৪৫ জন এবং মৃত্যু ছিল ২০২ জন। একই সময়ে চলতি মাসে রোগী সংখ্যা ৪৬ হাজার ৯৬০ জন এবং মৃত্যু ২৪৬ জন।
আগস্ট মাসে ডেঙ্গু রোগী ঢাকার বাইরে কিছু সংখ্যক হারে বাড়তে শুরু করলেও সেপ্টেম্বর মাসের শুরু থেকে প্রতিদিন ঢাকার চেয়ে দেড় থেকে দ্বিগুণ হারে ঢাকার বাইরে রোগী বাড়ছে। ঢাকার আশপাশের জেলা থেকে ঢাকায় চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মৃত্যুও হচ্ছে বেশি। তার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জেলা পর্যায়ে পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকা ও রোগী শেষ মুহূর্তে হাসপাতালে আসা মৃত্যুর প্রধান কারণ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন অ্যান্ড কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো সর্বশেষ তথ্য বলছে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫৬৬ জন আর মৃত্যু ৬ জন। ফেব্রুয়ারি মাসে আক্রান্ত ১৬৬ জন মৃত্যু তিনজন। মার্চ মাসে আক্রান্ত ১১১ জন মৃত্যু শূন্য। এপ্রিল মাসে আক্রান্ত ১৪৩ জন মৃত্যু দুজন। মে মাসে আক্রান্ত এক হাজার ৩৬ জন মৃত্যু দুজন। জুন মাসে আক্রান্ত পাঁচ হাজার ৯৫৬ জন মৃত্যু ৩৪ জন। জুলাই মাসে আক্রান্ত ৪৩ হাজার ৮৫৪ জন মৃত্যু ২০৪ জন। আগস্ট মাসে ৭১ হাজার ৯৭৬ জন মৃত্যু ৩৪২ জন। এ তথ্য শুধু ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয়া রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা। আক্রান্ত হয়ে বাসায় চিকিৎসা নেয়া রোগী থেকে যাচ্ছেন হিসাবের বাইরে। বছরের প্রথম দিকে ডেঙ্গু ঢাকায় ছড়িয়ে পড়লেও জুন-জুলাই মাসে ডেঙ্গু সারা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। সর্বশেষ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাপ্তাহিক প্রতিবেদন বলছে ঢাকার পরই মানিকগঞ্জ জেলায় সবচেয়ে বেশি রোগী আক্রান্ত হয়েছে।
আক্রান্তের দিক থেকে তারপরই রয়েছে চট্টগ্রাম, বরিশাল, পটুয়াখালী জেলার নাম। সামপ্রতিক সময়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ঢাকার বাইরের রোগী যেন ঢাকায় স্থানান্তর না করা হয়। সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ডেঙ্গু বিষয়ে যে গাইডলাইন দেয়া হয়েছে তা প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছেছে। ডেঙ্গু চিকিৎসায় মূল বিষয়টি হচ্ছে ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট। ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট বলতে যখন রোগীর প্রেশার কমে যাচ্ছে, তখন যথাযথ সময়ে আইভি ফ্লুইড দেয়া। আইভি ফ্লুইড দেয়ার জন্য অনেক যন্ত্রপাতি বা বড় কোনো ধরনের হাসপাতালে প্রয়োজন নেই; বরং প্রান্তিক পর্যায়ে শকে আছেন যে রোগী, তার শক ম্যানেজ না করে যদি ঢাকায় পাঠানো হয়, তাহলে যাত্রাপথের এই লম্বা সময়ে নিশ্চিতভাবে এই রোগীকে আমরা হারাব। সুতরাং কোনো অবস্থাতেই খারাপ রোগী হোক, শকের রোগী হোক, যেখানে আছে সেখানেই যদি চিকিৎসা নেয়া হয়, তাহলে রোগীর বিপর্যয় হবে না। জেলা, উপজেলায়, মেডিকেল কলেজ, যে যেখানে আছেন, সেখানেই চিকিৎসা নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমাদের রোগীরা যেন সেই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সেখানেই চিকিৎসা নেয়।
ডেঙ্গুর বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আমার সংবাদের এ প্রতিবেদক কথা বলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদের সাথে। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন দুটো বিষয় জানতে হবে। প্রথমটি হলো ডেঙ্গু ভাইরাস মানুষের মধ্যে কতটুকু আছে, অন্যটি হলো মশার মধ্যে কতটুকু ভাইরাস আছে। ডেঙ্গু ভাইরাস মানুষের শরীরে ১৫-২০ দিন স্থায়ী হয়। এ সময়ে ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী কাউকে যদি মশা কামড়ায়। সে মশা যদি আবার অন্য কাউকে কামড়ায়, তাহলে কামড়ানো ব্যক্তি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হবে। বাহক যদি না থাকতো তাহলে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ত না। বাহক আছে বলেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত বাড়ছে। আমাদের ডেঙ্গু ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি খুব বেশি একটা কাজে আসছে না। তা ছাড়া এডিস মশা জন্মানোর জন্য পানির প্রয়োজন, বৃষ্টি হচ্ছে কিছু দিন পরপর। এই বৃষ্টি আরও কয়েক দিন থাকবে। বৃষ্টি হলে ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী এডিস মশা প্রজননের জন্য যে পানি দরকার তার সুযোগ সৃষ্টি হবে। তাই বলা যায় অক্টোবর মাস আমাদের একটু বেশি সতর্ক থাকতেই হবে।’
কীটতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, ‘ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখন নির্ভর করছে বৃষ্টিপাতের উপর। বৃষ্টি যতদিন থাকবে ততদিন ডেঙ্গুর প্রকোপ কমবে না। বৃষ্টিপাত বন্ধ হলে রোগী কমতে শুরু করবে। ডেঙ্গু আমাদের দেশে এখন সারা বছরই থাকবে। হয়তো কখনো বাড়বে কখনো কমবে। বর্ষাকালে বেশি থাকবে শীতকালে কম থাকবে এমন হবে। স্থানীয় পর্যায়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।