সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া
সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৩, ১২:২৪ এএম
সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া
সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৩, ১২:২৪ এএম
দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি অতীতের যেকোনো সময়ের আক্রান্ত ও মৃত্যু ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিদিন হচ্ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর নতুন রেকর্ড। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গতকাল ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন দুই লাখ ৯৮১ জন। এ সময় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৯৭৫ জনের। যা দেশের ডেঙ্গু রোগের ইতিহাসে সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। এর আগে ২০১৯ সালে দেশে সর্বোচ্চ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন এবং ওই বছর মৃত্যু ছিল ১৫৬ জনের। চলতি বছরের শুরু দিকে ঢাকায় রোগীর সংখ্যা বাড়লেও বছরের মাঝামাঝি থেকে ঢাকার বাইরে রোগী বাড়তে শুরু করে।
অপর দিকে, ডেঙ্গু চিকিৎসার ব্যয়ও বেড়েই চলছে। ডেঙ্গু চিকিৎসা-সহায়ক সব পণ্যের দাম বাড়ায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির ওপর পড়ছে ডেঙ্গু চিকিৎসার বাড়তি চাপ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন অ্যান্ড কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো তথ্য বলছে— চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫৬৬ জন আর মৃত্যু ছয়জনের। ফেব্রুয়ারি মাসে আক্রান্ত ১৬৬ জন মৃত্যু তিনজনের। মার্চ মাসে আক্রান্ত ১১১ জন মৃত্যু শূন্য। এপ্রিল মাসে আক্রান্ত ১৪৩ জন মৃত্যু দুজন। মে মাসে আক্রান্ত এক হাজার ৩৬ জন মৃত্যু দুজনের। জুন মাসে আক্রান্ত পাঁচ হাজার মৃত্যু ৯৫৬ জনের। জুলাই মাসে আক্রান্ত ৪৩ হাজার ৮৫৪ জন মৃত্যু ২০৪ জনের। আগস্ট মাসে আক্রান্ত ৭১ হাজার ৯৭৬ জন মৃত্যু ৩৪২ জনের। সেপ্টেম্বর মাসে আক্রান্ত ৭৭ হাজার ১৭৩ জন মৃত্যু ৩৮২ জনের।
দেশে চলমান থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। বিভিন্ন জায়গায় জমে থাকছে পানি। মশকনিধন কার্যক্রম আশানুরূপ না হওয়ায় এই উদ্বেগ আরও বাড়ছে। ঢাকা বাইরে রোগী বাড়ালেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। এতে রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, চলতি বছর আক্রান্ত রোগীর মধ্যে ঢাকায় আক্রান্ত হয়েছেন ৮২ হাজার ৪৭১ জন এবং ঢাকা বাইরে আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ ১৮ হাজার ৫১০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ঢাকায় ৭৮ হাজার ৫৫৭ জন এবং ঢাকার বাইরে এক লাখ ১১ হাজার ৯২৩ জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ৯ হাজার ৫২৬ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন। ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে তিন হাজার ২৮৩ জন এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ছয় হাজার ২৪৩ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। ঢাকায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৬৩১ জন এবং ঢাকার বাইরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়ে ৩৪৪ জনের। ডেঙ্গুতে মোট আক্রান্তের হার পুরুষ ৬০ দশমিক ৮ শতাংশ আর নারী ৩৯ দশমিক ২ শতাংশ। ডেঙ্গুতে পুরুষ বেশি আক্রান্ত হলেও মৃত্যু বেশি নারীর। মোট মৃত্যুর ৫৪৮ জন নারী এবং ৪২৭ জন পুরুষ।
ঢাকার শীর্ষ ১০টি এলাকায় আক্রান্তের তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেখানে দেখা যায়, ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বেশি যাত্রাবাড়ী এলাকায়। ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু আক্রান্তের ১০টি জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রাম জেলায়। জেলা পর্যায়ে সবচেয়ে কম আক্রান্ত সুনামগঞ্জ জেলায়। সারা দেশের বিভাগীয় পর্যায়ে ঢাকা ব্যতীত চট্টগ্রাম বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। আক্রান্ত সংখ্যা কম সিলেট বিভাগ।
ডেঙ্গুর বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আমার সংবাদের এ প্রতিনিধির সাথে কথা বলেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘কিছু দিন যাবত বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির পানি জমছে থাকছে বিভিন্ন জায়গায়। জমে থাকা পানিতে এডিস মশার লার্ভা জন্ম নিচ্ছে। ডেঙ্গু আমাদের এখানে স্থায়ী রোগে পরিণত হচ্ছে। কখনো বাড়ছে আবার কখনো কিছু কমছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে স্থায়ী পরিকল্পনার কোনো বিকল্প নেই। সঠিক পরিকল্পনা না করলে আক্রন্তের সংখ্যা বাড়তে থাকবে।’