নভেম্বর ২৯, ২০২৩, ১১:১৬ পিএম
- গত বছরের তুলনায় রেমিট্যান্স বেড়েছে ২৮ শতাংশ
- এক বছরে আমানত বেড়েছে ১৫ শতাংশ
- ৮৬ শতাংশ হিসাব গ্রামে, বাড়ছে সঞ্চয় প্রবণতাও
গ্রামীণ অর্থনীতিতে চাঙা ভাব এনে দিয়েছে এজেন্ড ব্যাংকিং সেবা। মানুষের আর্থিক লেনদেনে নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি বেড়েছে সঞ্চয় প্রবণতাও। ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেনের ফলে সমাজে কমে আসছে আর্থিক কলহ ও বৈষম্য। বিদেশ থেকে প্রিয়জনের পাঠানো টাকা ঝামেলা ছাড়াই পাচ্ছে প্রান্তিক মানুষ। আর হাড়ভাঙা পরিশ্রমের টাকা নিজ হিসাবে জমা রেখে সময়মতো খরচ করতে পারছেন কৃষক-শ্রমিক শ্রেণির মানুষ। অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ও কমে আসছে সংসারে। সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য ডিপিএস হিসাব খুলছেন অনেকেই। পরিমাণে কম হলেও ঋণ পাওয়া যাচ্ছে তুলনামূলক সহজ উপায়ে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, শহরের তুলনায় গ্রামের মানুষই এই এজেন্ট ব্যাংকসেবায় বেশি সম্পৃক্ত হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মোট হিসাব ছিল দুই কোটি ছয় লাখ ৮৪ হাজার ৫৩৭টি। আর এই হিসাবের ৮৬ দশমিক ১৪ শতাংশই ছিল গ্রামের মানুষের। বাকি ১৩ দশমিক ৮৬ শতাংশের সম্পৃক্ততা মিলেছে শহরের অধিবাসীর। অর্থাৎ এজেন্ট ব্যাংকিং কর্মকাণ্ডের হিস্যায় প্রতি বছর বাড়ছে গ্রামনির্ভরতা।
তথ্যমতে, এসব হিসাবের মধ্যে নারীদের অংশগ্রহণও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এ সময়ে নারীদের হিসাবসংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক কোটি দুই লাখ ৮৭ হাজার ৮৮১টি, যা মোট হিসাবের ৪৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ। এ ছাড়া এজেন্ট ব্যাংকিং হিসাবে মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৩০ হাজার ৬৬৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ, এক বছরের ব্যবধানে আমানতের পরিমাণ ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ বেড়েছে। মূলত গ্রামীণ জনগোষ্ঠীই এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে এই আমানত রাখছেন। অর্থাৎ, ৭৯ দশমিক শূন্য তিন শতাংশই তাদের আমানত। গত তিন মাসে গ্রামে আমানত বেড়েছে সাত দশমিক ৯৩ শতাংশ আর শহরে বেড়েছে তিন দশমিক ৯৭ শতাংশ। এর মধ্যে আবার সিংহভাগই নারীদের আমানত। তবে এজেন্ট ব্যাংকিং বিস্তৃত হলেও সে তুলনায় এর মাধ্যমে ঋণ বিতরণ বাড়েনি। সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ মাত্র ১৪ হাজার ১৯২ কোটি টাকা। গত প্রান্তিক শেষে ছিল ১৩ হাজার ৪২ কোটি টাকা; অর্থাৎ তিন মাসে ঋণ বিতরণ বেড়েছে আট দশমিক ৮২ শতাংশ।
দেশের সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাংকিং সুবিধা পৌঁছে দিতেই ২০১৪ সালে চালু হয় এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম। এ জন্য বাড়তি চার্জ গুনতে হয় না গ্রাহককে। ব্যাংকের ডেবিট কার্ড ব্যবহারের সুযোগও পাচ্ছেন তারা। এতে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে প্রতিনিয়ত বাড়ছে গ্রাহকসংখ্যা; সে সঙ্গে বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণও।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, সঠিকভাবে পরিচালনা করলে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমের মাধ্যমে সারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিটি ঘরে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে। এছাড়া এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সংগৃহীত আমানতের অর্থে সিংহভাগ গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিনিয়োগের সুযোগ করা গেলে তা গ্রামীণ অর্থনীতির চাকাকে আরও শক্তিশালী ও সচল রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। আগামী দিনে সে চেষ্টাই করা হবে বলেও জানান তারা।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ৩১ ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসব ব্যাংকের মোট এজেন্টের সংখ্যা ১৫ হাজার ৫৪০টি, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১৪ হাজার ৬৬৩টি। একই সময়ে আউটলেট ২০ হাজার ১৭৭ থেকে বেড়ে হয়েছে ২১ হাজার ৪৪৮টি। এসব এজেন্টের ৮৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ ও আউটলেটের ৮৫ দশমিক ৫০ শতাংশই গ্রামে।
একই সময়ে এজেন্ট ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্সের পরিমাণও বেড়েছে। সেপ্টেম্বর শেষে এক লাখ ৩৬ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকার রেমিট্যান্স এসেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ বেশি। ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর এজেন্ট ব্যাংকিং নীতিমালা জারির পর ২০১৪ সালে প্রথম এ সেবা চালু করে বেসরকারি খাতের ব্যাংক এশিয়া। এখন পর্যন্ত এ সেবায় শীর্ষে অবস্থান করছে বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। এরপরই রয়েছে ব্যাংক এশিয়া ও ইসলামী ব্যাংক।