Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ১৪ মে, ২০২৪,

সেকেন্ডম্যানে নয়া কৌতূহল

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

মার্চ ৪, ২০২৪, ১১:৪২ এএম


সেকেন্ডম্যানে নয়া কৌতূহল
  • রাজনীতি-কূটনীতি গণমাধ্যমে কাদের-ফখরুল রহস্য সর্বত্র
  • বারবার দুই নেতার ফোনালাপ, মিরাকল সাক্ষাতে গরম হাওয়া
  • সিঙ্গাপুর গেলেন ওবায়দুল কাদের, আজ যাচ্ছেন ফখরুল
  • সাক্ষাৎ না হলেও পুরোনো রূপে ফোনালাপের ধারণা অনেকের
  • রাজনৈতিক সংকটে অর্থনীতিতে প্রভাব আড়ালে হলেও সমঝোতার আহ্বান

সিঙ্গাপুরে দুই নেতার সাক্ষাৎ হলে রাজনীতির জন্য ভালো কিছুর প্রতিফলন ঘটবে —বদিউল আলম মজুমদার, সুজন সম্পাদক

রাজনীতিতে দুই নেতা নিয়ে কৌতূহল সর্বত্র। একজন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। অন্যজন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একজন আরেকজনকে ‘ভাই’ বলেই সম্বোধন করেন। পরস্পর শারীরিক খোঁজখবর নেন। দুই নেতার একাধিক টেলিফোনে কথোপকথন ও সরাসরি সাক্ষাতে এমন আন্তরিকতার দৃশ্যপট বহুবার প্রকাশিত। আবার রাজনৈতিক মঞ্চে বক্তৃতায় তারা ভিন্নরূপ। পাল্টা আক্রমণে কেউ কাউকে ছাড় দেন না। 

সর্বশেষ ২০২০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি টেলিফোনে মির্জা ফখরুল ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে কথা বলেন। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবনতির কথা জানান। রাজনৈতিক আক্রোশ না রেখে মানবিকতায় খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে কাদেরকে অনুরোধ করেন। এ নিয়ে তখন দেশ-বিদেশে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে ১০ দিন পর ২৩ ফেব্রুয়ারি কথোপকথনের কথা স্বয়ং মির্জা ফখরুলই স্বীকার করেন। সেদিন দুই নেতার মধ্যে সাত মিনিটের মতো কথা হয়। প্রথম দুই মিনিট সালাম বিনিময়ে একে অপরকে ভাই ডেকে শারীরিক অবস্থার খোঁজ খবর নেন।  

এ ছাড়া ২০১৭ সালের ১৯ নভেম্বর সৈয়দপুর বিমানবন্দরেও এই দুই নেতার সরাসরি সাক্ষাৎ হয়। একে অপরের হাত চেপে ধরেন। হাস্যোজ্জ্বল কথা হয়। সালাম বিনিময়ে শারীরিক খোঁজখবরের ভিডিও ওই সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। রংপুরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সমবেদনা জানাতে বড় দুই দলের এই দুই নেতা তখন ছুটে যান। তখন এই সাক্ষাৎ,  পূর্বপরিকল্পিত নাকি মিরাকল— এ নিয়ে টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়। তখনো এ বিষয়ে মুখ খুলেন মির্জা ফখরুল। জানান, স্ত্রীর অসুস্থতায় ফ্লাইট বিলম্ব হওয়ায় তাদের দেখা হয়। এরপর লম্বা সময় রাজনীতিতে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে একাদশ ও দ্বাদশ দুটো জাতীয় নির্বাচন শেষ হয়েছে। তাদের আর সরাসরি কথা কিংবা সাক্ষাতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে এই দুই নেতার এক দফার ঘোষণাও বিশ্বব্যাপী আলোচনায় ছিল। রাজনীতি-কূটনীতি গণমামাধ্যমে দুই নেতার ইস্যু সব সময় উত্তেজনা ছড়ায়। ফের নয়া উত্তাপ এবং কৌতূহল হচ্ছে— একই জায়গায় চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন বাংলাদেশের অন্যতম দুই রাজনৈতিক দলের সেকেন্ডম্যান ওবায়দুল কাদের ও মির্জা ফখরুল। 

স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল রোববার সকাল ৮টা ৪১ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-৫৮৪ ফ্লাইটে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে রওনা হন। আজকে যাচ্ছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দুই রাজনৈতিক দলের দ্বিতীয় ব্যক্তি একই দেশে এক সঙ্গে চিকিৎসা নিতে যাওয়ায় রাজনীতিতে অনেক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। দেশের পরিস্থিতি নিয়ে দুই নেতার মধ্যে পর্দার আড়ালে কিংবা বিদেশের মাটিতে টেলিফোনে কোনো কথা হচ্ছে কি-না, এই নিয়ে গুঞ্জন উঠেছে। দুই নেতার সখ্যতায় সাক্ষাতের বিষয়টিও কেউ উড়িয়ে দিচ্ছেন না। 

কারাগারে বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দল ও বিশেষ ব্যক্তিদের অনেকেরই সাক্ষাৎ হয়েছে  বলে গুঞ্জন ছিল। কিন্তু প্রায় সাড়ে তিন মাস পর এমন উড়ো খবরের কথা গণমাধ্যমে সাক্ষাতে এসে মির্জা ফখরুল অস্বীকার করেন। তবে ওই সময় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতা বলেছিলেন, বিএনপি সমঝোতায় রাজি হলে তাদের সব নেতাকে এক রাতেই মুক্তি দেয়া হতো। পর্দার আড়ালে রাজনীতির রহস্য সবসময় আড়ালেই থেকে যায়। রাজনীতিতে চোখ রাখা অনেকে বলছেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি দুই দলের মধ্যে রাজনৈতিক আলোচনা খুবই জরুরি। রাজনৈতিক সংকটে দেশে অর্থনৈতিক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। পর্দার আড়ালে হলেও রাজনৈতিক সমঝোতায় অবশ্যই হওয়া প্রয়োজন। বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রকাশ্যে সাক্ষাৎ হলে নেতাকর্মীদের মধ্যে অনেক প্রভাব পড়তে পারে। টেলিফোনে কথা হলেও সেটি ফাঁস হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই দেশের বাইরে সাক্ষাৎ না হলেও টেলিফোনে দুই নেতা কথা হলেও হতে পারে— এমন ধারণা অনেকের। এতে ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার ঝুঁকিও মুক্ত থাকবে। দেখা সাক্ষাৎ হওয়া অবশ্যই রাজনীতির সৌন্দর্যের অংশ। এই সংস্কৃতি গোপনে না রেখে প্রকাশ্যে আসাও অনেকে ভালো  মনে করছেন। 

জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার আমার সংবাদকে বলেন, ‘আমরা চাই রাজনীতিতে বড় দুই দলের নেতাদের সঙ্গে সবসময় দেখা সাক্ষাৎ হোক। দেখা সাক্ষাৎ অবশ্যই রাজনীতির সৌন্দর্যের অংশ। এতে করে রাজনীতিতে ক্ষোভ আক্রোশের অবসান হয়। জনগণও ঝুঁকিমুক্তি থাকে। ওবায়দুল কাদের এবং মির্জা ফখরুল সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন। তাদের যদি সেখানে দেখা হয়, সাক্ষাৎ হয় কিংবা কথা হয়— অবশ্যই রাজনীতির জন্য ভালো কিছুর প্রতিফলন ঘটবে।’ 

আজ সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন মির্জা ফখরুল : চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার সঙ্গে স্ত্রী রাহাত আরা বেগমও যাবেন। আজ সোমবার সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে মির্জা ফখরুলের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করার কথা রয়েছে। চিকিৎসা শেষে আগামী ১৮ মার্চের দিকে তিনি দেশে ফিরতে পারেন। বিএনপি মিডিয়া সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সর্বশেষ গত বছরের ২৪ আগস্ট চিকিৎসার জন্য সস্ত্রীক সিঙ্গাপুর গিয়েছিলেন ফখরুল। এক সপ্তাহ চিকিৎসা শেষে ২ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরেন তারা।

সাড়ে তিন মাস কারাগারে থাাকার পর গত ১৫ ফেব্রুয়ারি জামিনে মুক্তি পান মির্জা ফখরুল। তবে কারাগারে থাকার সময় তার প্রায় ছয় কেজি ওজন কমে যায় বলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে জানান। এরপর শারীরিক চেকআপের জন্য ১৭ ফেব্রুয়ারি শ্যামলীতে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসক দেখান ফখরুল। চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। মির্জা ফখরুল এবার কারামুক্তির পর থেকে রাজনীতিতে তেমন সক্রিয় নন। রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচিতে অংশ নেননি। তবে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি গুলশানের একটি হোটেলে সফররত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া-বিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আখতারের সঙ্গে বৈঠক করেন ফখরুল। এ ছাড়া মাঝে মধ্যে তিনি গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বসেন। গত ২ মার্চ যুগপৎ আন্দোলনের দুই মিত্র জোট গণতন্ত্র মঞ্চ ও ১২ দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন বিএনপি মহাসচিব। তবে এটিকে সৌজন্য সাক্ষাৎ বলছেন জোট নেতারা। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে রাজনীতিতে পুরোপুরি সক্রিয় হতে পারেন মির্জা ফখরুল।

সিঙ্গাপুর গেলেন ওবায়দুল কাদের : স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সিঙ্গাপুরে গেলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গতকাল সকালে ৮টা ৪১ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-৫৮৪ ফ্লাইটে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে রওনা হন তিনি। আজ ৪ মার্চ এই প্রতিবেদন প্রকাশের সময়ে তিনি ততক্ষণে সিঙ্গাপুর পৌঁছে যাওয়ার কথা। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সিনিয়র তথ্য অফিসার শেখ ওয়ালিদ ফয়েজ বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে সেতুমন্ত্রী ঢাকায় ফিরবেন।

২০১৯ সালের মার্চে অসুস্থতার কারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন ওবায়দুল কাদের। সেখানে দ্রুত এনজিওগ্রাম করার পর তার হূৎপিণ্ডের রক্তনালীতে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। পরে ভারতের হূদরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেবী শেঠির পরামর্শে সিঙ্গাপুরে গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হন কাদের। তখন থেকে সিঙ্গাপুরে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে আসছেন তিনি।
 

Link copied!