Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪,

বিএনপিসহ বেশ কিছু দলের ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক

প্রভাব পড়েনি ঈদ বাজারে

ইমরান খান

ইমরান খান

এপ্রিল ৬, ২০২৪, ০২:৪৩ পিএম


প্রভাব পড়েনি ঈদ বাজারে
  • দেশীয় নানা ব্র্যান্ডের নামের লোগো বসালেও প্রকৃতপক্ষে তা ভারতীয় পোশাক
  • গাউন, লেহেঙ্গা, থ্রিপিস, ঘারারা সারারা ও শাড়ির বাজারে ভারতীয় পোশাকের একচেটিয়া আধিপত্য
  • ভারতীয় পণ্য বিক্রি হচ্ছে পাকিস্তানি, চায়না, থাই পণ্য নামে

ইন্ডিয়ার পণ্য বয়কটের ডাক এটা বিএনপির রাজনৈতিক স্ট্যান্ড সত্যিকার অর্থে ইন্ডিয়ান প্রডাক্ট বয়কটের ইচ্ছা থাকলে দেশীয় প্রডাক্টের প্রমোটের প্রায়োজন 
—নাজির আহমেদ, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, ক্যাব

বিএনপিসহ দেশের বেশ কিছু বিরোধী দল ভারতীয় পণ্য বয়কটের আহ্বান জানায়। একইসঙ্গে দলগুলোর সমর্থকরা বেশ জোরালোভাবে প্রচার-প্রচারণা চালায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এমনকি লিফলেট বিতরণের মাধ্যমেও প্রচার-প্রচারণা চালায় তারা। কিন্তু এতে খুব একটা প্রভাব পড়েনি রাজধানীর ঈদ বাজারে। গতকাল শুক্রবার সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন সুপারশপ, বিপণিবিতান, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর এবং শোরুমগুলোতে খোঁজ নিয়ে এমন ধারণা পাওয়া গেছে।

বিভিন্ন মার্কেট ও শপিংমল ঘুরে দেখা গেছে, ভারতীয় পোশাকের উপস্থিতি রয়েছে আগের মতোই। বেচাকেনাও কম নয়। শিশু থেকে শুরু করে ছেলে-মেয়ে সবার জন্যই ভারতীয় পোশাক রয়েছে বাজারে। আবার বিভিন্ন ভারতীয় পণ্য বিক্রয়ে অভিনব পন্থাও অবলম্বন করছেন বিক্রেতারা। বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, বিক্রি না হওয়ার আশঙ্কায় ভারতীয় পণ্যের ব্র্যান্ডের নাম পরিবর্তন করে অন্য ব্র্যান্ডের নামে চালিয়ে দিচ্ছেন অনেকে। ভারত থেকে আমদানি করা পণ্য মালয়েশিয়া, চায়না, থাইল্যান্ড, পাকিস্তান ইত্যাদি দেশের নামে বিক্রি করছেন তারা। তবে বেশির ভাগ ক্রেতাই খোঁজ করেন ইন্ডিয়ান পণ্যের। আর যারা ইন্ডিয়ান পণ্যর বিকল্প খুঁজেন তাদেরকেও দেয়া হয় নাম পরিবর্তন করা ইন্ডিয়ান পণ্য।

রাজধানীর কয়েকটি বিপণিবিতান ঘুরে দেখা যায়, অনেকের পছন্দের শীর্ষে এখনও ভারতীয় পোশাক। কয়েকজন পোশাক বিক্রেতা দৈনিক আমার সংবাদকে জানান, যারা আগ থেকে ইন্ডিয়ান পোশাক পরে অভ্যস্ত তারা ইন্ডিয়ান পোশাকই খোঁজেন। তবে রাজধানীর নিউ মার্কেটের বিভিন্ন দোকানে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র, ইন্ডিয়ান কাপড়ের তৈরি পোশাকের নাম পরিবর্তন করে চালানো হচ্ছে পাকিস্তানি, আফগানি, করাচি ইত্যাদি নামে। এমন প্রতারণার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে রাজধানীর গাউছিয়া মার্কেটের একজন বিক্রেতা আমার সংবাদকে জানান, ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাকে বিক্রি না হওয়ার আশঙ্কায় এমন অভিনব পন্থা অবলম্বন করছেন তারা। বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভারী নকশাসমৃদ্ধ একটি ভারতীয় থ্রিপিস পাঁচ হাজার টাকার কিছু কমবেশিতে পাওয়া সম্ভব। কিন্তু একই ধরনের ভারী নকশার দেশীয় থ্রিপিসের দাম পড়ছে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। আবার দেশি সেই পোশাকের কাপড় নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। ক্রেতাদের অভিমত, সে তুলনায় ভারতীয় জর্জেট ও অন্যান্য সিনথেটিক কাপড় অনেক বেশি টেকসই ও ঝলমলে। সে কারণেই ঈদে ভারতীয় পোশাকই বেছে নেন অনেক ক্রেতা।

বেইলি রোডের বেশ কয়েকটি পোশাকের দোকানে দেখা গেল ভারত থেকে আসা ছেলেদের জমকালো নকশার অ্যামব্রয়ডারি করা পাঞ্জাবি। দেশীয় নানা ব্র্যান্ডের নামের লোগো বসালেও প্রকৃতপক্ষে এগুলো ভারতীয় পোশাক। বেইলি রোডের একটি মার্কেটে ছেলেদের পোশাকের বেশ নামকরা একটি ব্র্যান্ডের শোরুমে কথা হয় একজন বিক্রয়কর্মীর সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘আমরা বলি দেশে তৈরি। কিন্তু আসে তো ভারত থেকেই। ভারত থেকে পোশাক না এলে আমরা ব্যবসা করব কীভাবে? এসব কাপড় দেশে পাওয়াই যায় না।’ একই চিত্র দেখা যায় অন্যান্য মার্কেটেও। এক হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত পাঞ্জাবি মিলছে নন-ব্র্যান্ড দোকানগুলোতে। 

রাজধানীর কয়েকটি মার্কেটের দোকানদাররা আমার সংবাদকে বলেন, বয়কটের কোনো প্রভাব ঈদের মার্কেটে বেচাকেনায় নেই। আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের তুলনায় সব পোশাকের দামই কিছুটা বেশি। এর প্রভাবে বিক্রি কিছুটা কম। মেয়েদের পোশাকের বাজারেও একই চিত্র। উৎসব সামনে রেখে মেয়েদের জন্য তৈরি ভারতীয় পোশাকের বিক্রি আগে থেকেই বেশি। সামপ্রতিক সময়ে পাকিস্তানি পেশাকও জনপ্রিয় হয়েছে। কিন্তু পার্টিতে পরার উপযোগী গাউন, লেহেঙ্গা, থ্রিপিস, ঘারারা, সারারা ও শাড়ির বাজারে বাংলাদেশে ভারতের পোশাকের আধিপত্য একচেটিয়া। অন্যদিকে থ্রি-পিসের জন্য অনেক তরুণীর পছন্দ পাকিস্তানি ব্র?্যান্ড আগা নূরসহ আরও কিছু পোশাক। এগুলোর প্রথম বা দ্বিতীয় রেপ্লিকাতে বাজার সয়লাব। তবে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এসব রেপ্লিকাও অনেক ক্ষেত্রেই ভারতে তৈরি। কসমেটিকস প্রসাধনীর বাজারেও অনেকের পছন্দের মূলে ইন্ডিয়ান পণ্য। রাকিব নামে একজন কসমেটিকস বিক্রেতা আমার সংবাদকে জানান, বাংলাদেশের কসমেটিকস বাজারে ইন্ডিয়ান পণ্যই বেশি। মানুষ চায় তাই আমরাও না রেখে পারি না।

ক্রিম অ্যান্ড লোশন, ফেস ওয়াশ, ফেস প্যাক/পিল-অফ মাস্ক, সোপ ও বডি ওয়াশ, শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, হেয়ার স্টাইলার, হেয়ার ড্রায়ার, লিপস্টিক/লিপ লাইনার, আই মেক-আপ, ফেস মেক-আপ, নেইল পলিশ/স্টাইলার, ইই/ঈঈ ক্রিম, কনসিলার, প্রাইমার, ফাউন্ডেশন, ফেস পাউডার, মেকআপ রিমুভারসহ প্রায় সবকিছুতেই ইন্ডিয়ার পণ্যে আধিপত্য রয়েছে এসব ইন্ডিয়ান পণ্যও অনেক ক্ষেত্রে ভিন্ন পরিচয়ে বিক্রয় হয় বলে জানান এই বিক্রেতা। নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যেও নেই বয়কটের প্রভাব, আদা, রসুন, পিঁয়াজ এমনকি শিশুখাদ্য সবকিছুর বাজার আগের মতোই স্বাভাবিক।

ক্যাব সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নাজির আহমেদ আমার সংবাদকে বলেন, ইন্ডিয়ান পণ্য বয়কটের ডাক এটা বিএনপির রাজনৈতিক স্ট্যান্ড এতে বাজারে কোনো প্রভাব আমরা দেখতে পাচ্ছি না। সত্যিকার অর্থে ইন্ডিয়ান প্রডাক্ট বয়কটের ইচ্ছা থাকলে দেশি প্রডাক্টের প্রমোটের প্রায়োজন। তাছাড়া আমাদের দেশে আলু, পিঁয়াজ, রসুন ইত্যাদি ভারত থেকেই আসে তাই বয়কটের ডাক সফল না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। অনলাইন-অফলাইনে কয়েক সপ্তাহ ধরে আলোচিত ইস্যু ‘বয়কট’। জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকেই ভারতবিরোধী প্রচারণা ‘ইন্ডিয়া আউট’ ও ‘বয়কট ইন্ডিয়ান প্রোডাক্টস’ লক্ষ করা যাচ্ছে ফেসবুক, ইউটিউব ও এক্সে (সাবেক টুইটার)। বাংলাদেশে ভারতের ‘আগ্রাসনে’র প্রতিবাদে ভারত ও ভারতীয় পণ্য বর্জনই এসব প্রচারণার মূল কথা।

‘বয়কট ইন্ডিয়ান প্রোডাক্টস’ ক্যাম্পেইনে নিজেদের যুক্ত করে নিয়েছেন রাজনৈতিক নেতারাও। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী থেকে শুরু করে সব নেতাই ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছেন দেশবাসীর প্রতি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপি নেতাদের এই আহ্বানকে সমালোচনা করেছেন। স্বয়ং আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি নেতাদের স্ত্রীদের আলমারিতে যেসব ভারতীয় শাড়ি রয়েছে সেগুলো বিএনপি নেতারা পুড়িয়ে দেখালে তবেই তিনি বিশ্বাস করবেন যে বিএনপি নেতারা ভারতীয় পণ্য সত্যিকার অর্থে বর্জন করছেন।
 

Link copied!