Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪,

দাবদাহে হাসপাতালে রোগীর চাপ

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

এপ্রিল ১৯, ২০২৪, ১২:১৭ পিএম


দাবদাহে হাসপাতালে রোগীর চাপ
  • শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে ডায়রিয়ায়, বয়স্করা হিটস্ট্রোকে
  • বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোয় রোগী আসছে বেশি 
  • অপ্রয়োজনে বাইরে ঘোরাঘুরি না করার পরামর্শ

গরমে শরীরে পানির চাহিদা বাড়ে। এ সময় বেশি করে বিশুদ্ধ পানি পান করা প্রয়োজন। অসুস্থ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
—ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ

দেশে চলমান দাবদাহেঅসুস্থ হয়ে রাজধানীসহ সারা দেশের হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোতে রোগীর চাপ বাড়ছে। অসুস্থ রোগীদের বেশির ভাগই শিশু ও বয়স্ক। শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে ডায়রিয়ায়। বয়স্কদের মধ্যে আক্রান্তের বেশির ভাগই হিটস্ট্রোক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তীব্র গরম, অস্বাস্থ্যকর খাবার ও পানি কম পান করার কারণেই ঢাকাসহ সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া, হিটস্ট্রোক, জ্বর, সর্দি, টাইফয়েড আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গরম বাড়লে আরও রোগী বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। রাজধানীর কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, গরমে অসুস্থ হওয়া রোগীর সংখ্যা বেশি। 

ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগের সামনে সিএনজি থেকে অজ্ঞান অবস্থায় একজনকে নামাচ্ছেন কয়েকজন। তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, সবাই একসাথে কারখানায় কাজ করছিলাম। তিনি হঠাৎ করেই হাঁসফাঁস করছিলেন। কিছুক্ষণ পর মাটিতে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যান। কারখানার পাশের একটি ক্লিনিকে নিয়ে গেলে চিকিৎসক বলেছেন তিনি হিটস্ট্রোক করেছেন। চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে আসার পরামর্শ দেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজের বহির্বিভাগে কর্তব্যরত এক চিকিৎসক জানান, স্বাভাবিক রোগীর চেয়ে এখন গরমে বিভিন্ন রোগের উপসর্গ নিয়ে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা বেশি।

ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রে (আইসিডিডিআর,বি) চিকিৎসাধীন সাত বছরের শিশু আবির। তার পাশেই বিমূর্ষ মুখে বসে আছেন আনিস রহমান। তিনি বলেন, চারদিন আগে স্কুল থেকে ফেরার পথে ছেলে রাস্তার পাশে বিক্রি করা বেলের শরবত খেয়েছিল। সেদিন রাত থেকেই পেট ব্যথা শুরু হয়। ফার্মেসি থেকে স্যালাইন এনে খাইয়েছিলাম। কোনোভাবেই পাতলা পায়খানা বন্ধ হচ্ছিল না। গাজীপুর জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক আইসিডিডিআর,বিতে নিয়ে আসার পরামর্শ দেন। তার ছেলে এখানের চিকিৎসা পেয়ে আগের চেয়ে কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠেছে।

আইসিডিডিআর,বির তথ্য বলছে, হাসপাতালটিতে সাধারণত প্রতিদিন গড়ে ৩০০ ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। তবে বর্তমানে সেই সংখ্যা প্রায় ৫০০ জন ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ শিশু এবং বাকি ৩০ শতাংশ প্রাপ্ত বয়স্ক রোগী রয়েছেন। আইসিডিডিআর,বিতে দিনে ৭০০-এর বেশি রোগী ভর্তি হলে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে বলে ধরে নেয়া হয়। গ্রীষ্মের শুরুতে এখনও সে ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তবে রোগীর চাপ বাড়ছে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার প্রস্তুতি রয়েছে বলেও জানানো হয়। অন্যদিকে দেশের সবচেয়ে বড় শিশু হাসপাতাল বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে গড়ে ৭০০ থেকে ৯০০ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের বেশির ভাগই গরমে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত শিশু। 

একইভাবে, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের প্রাইভেট চেম্বারেও বেড়েছে রোগীদের চাপ। এদিকে দেশে চলমান তীব্র তাপপ্রবাহ এপ্রিল মাস জুড়ে থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। চলতি বছর দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৪০.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়াও রাজশাহী, পাবনা, বাগেরহাট, যশোর ও কুষ্টিয়া জেলার উপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং ঢাকা, রংপুর, বরিশাল, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে কোনো কোনো জেলায় তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠতে পারে।

গরমে বিভিন্ন রোগ ও প্রতিকারের বিষয়ে ইমেরিটাস অধ্যাপক ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, দেশে বর্তমানে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। এ তাপমাত্রা শিশু থেকে বয়স্ক সবার জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি বলেন, এখন সুস্থ থাকতে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। অপ্রয়োজনে একদমই বাইরে ঘোরাঘুরি করা যাবে না। যারা কাজের জন্য বাইরে থাকেন, তাদের ছাতা ব্যবহার বা মাথায় কাপড় দিতে হবে। তবে রোদে যারা কাজ করেন, কারো একটানা দীর্ঘক্ষণ কাজ করা যাবে না। এতে করে মাথা ব্যথা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে, যা থেকে হিটস্ট্রোক হয়। আর হিটস্ট্রোক হলে যে কেউ মারাও যেতে পারে। 

তীব্র গরমে শিশু, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, রিকশাচালক, কৃষক ও নির্মাণশ্রমিকদের মতো শ্রমজীবী, যাদের ওজন বেশি এবং শারীরিকভাবে অসুস্থ বিশেষ করে যাদের হূদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ আছে এমন ব্যক্তিরা হিটস্ট্রোকের ঝুঁকিতে আছেন। তাদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। গরমে ডায়রিয়া থেকে বাঁচতে সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে, খাবার খাওয়ার আগে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। বিশেষ করে যারা শিশুদের খাওয়ান, যত্ন নেন, তাদের এ বিষয়ে খুব সতর্ক থাকতে হবে। অসুস্থ হলে নিকটস্থ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
 

Link copied!