ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫
Amar Sangbad

বিপ্লবীদের বিজয়ে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা

আবদুর রহিম

অক্টোবর ৩০, ২০২৪, ১২:৩০ এএম

বিপ্লবীদের বিজয়ে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা
  • শিগগিরই খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়া হবে
  •  দেশনেত্রীর শরীরে বিষ প্রয়োগের সত্যতাও প্রকাশ পাবে
  •  বিদেশ থেকে আনা হচ্ছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স
  •  সঙ্গে যাচ্ছে ১৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল
  •  পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেয়া হয়েছে চিঠি

খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসা দ্বিতীয় স্বাধীনতার সুফল

—মাহিন সরকার

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার কাজ শুরু

—এজেডএম জাহিদ হোসেন বিএনপি স্থায়ী

কমিটির সদস্য

দুর্নীতি মামলার দণ্ড থেকে মুক্ত হওয়ার আড়াই মাস পর অবশেষে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। প্রথমে তিনি যুক্তরাজ্যে যাবেন। তার সঙ্গে ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলও যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ জন্য দেশের বাইরে থেকে আনা হচ্ছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সও। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠিও দেয়া হয়েছে। ৩৬ জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নতুনভাবে দেশ বিজয় লাভ করে। পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছাত্রদের রক্তবিজয়ের পর মুক্তি পান খালেদা জিয়া। এরপর থেকে বিনা বাধায় বিদেশে যাওয়ার সুযোগ থাকলেও রাজনৈতিক নানা সিদ্ধান্তে তাকে বিদেশে নেয়া হয়নি। যদিও দলটির শীর্ষ নেতাদের ভাষ্য ছিল— খালেদা জিয়ার শারীরিক দুর্বলতার কারণে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ বিষয়ে বিপ্লবী শিক্ষার্থীরা বলছেন, আমাদের মৃত্যু প্রতিযোগিতার বিজয়ের পর বিএনপি-জামায়াত থেকে শুরু করে সবাই লাভবান হয়েছে। যে খালেদা জিয়াকে নিয়ে শেখ হাসিনা বারবার কটাক্ষ করেছেন, সেই অসুস্থ খালেদা জিয়া আমাদের আন্দোলনের বিজয়ের পর মুক্তি পেয়েছেন। দলটির যেসব নেতা কারাগারে ছিলেন, তারাও বেরিয়ে মুক্ত বাতাসে। জামায়াতসহ অন্য যেসব দলের নেতারা বছরের পর বছর আত্মগোপনে ছিলেন, এখন তারা প্রকাশ্যে কর্মসূচিতে ফিরেছেন। এটা অবশ্যই ছাত্র-জনতার রক্তস্রোতের বিজয়েরই ফসল।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহিন সরকার আমার সংবাদকে বলেন, বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতিতে একজন নির্যাতিত নারী। তিনি বছরের পর বছর স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের আক্রোশের শিকার হয়ে কারাগারে ছিলেন। তার লিভার নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দেয়া হয়নি। গত ৩৬ জুলাই রক্তবন্যায় বাংলাদেশ নতুনভাবে স্বাধীনতা লাভ করে। এরপর  সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সাজামুক্ত হলেন। শুনতে পাচ্ছি এখন তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাবেন। আমি মনে করি এটা আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতার সুফল। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিদেশ যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ বিজয়েরই সিগনেচার। এটা খালেদা জিয়া যেমন পেয়েছেন, দেশের নির্যাতিত সব নাগরিকও পেয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন থেকে ভালো নেই সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনার আক্রোশের শিকার হয়ে বছরের পর বছর কারাগারে ছিলেন তিনি। তার লিভার প্রায় ডেমেজ হয়ে গেছে। পায়ের বাতের ব্যথা কিছুদিন পরপরই বাড়ে। হার্ট সমস্যায়ও ঝুঁকিতে রয়েছেন। লিভার সমস্যার কারণে ছেড়ে ছেড়ে জ্বর আসে, বমি হয়। শরীরের একাধিক জটিল সমস্যার কারণে সব ধরনের ওষুধও প্রয়োগ করা যাচ্ছে না। বারবার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ক্লোজ মনিটরিংয়ে রেখে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তার শারীরিক জটিলতা অনুযায়ী বাংলাদেশে সব ধরনের চিকিৎসা আর সম্ভব নয়। অ্যাডভান্সড ট্রিটমেন্ট পেতে হলে দেশের বাইরে নেয়া আবশ্যক। অন্যদিকে তার দল বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে খালেদা জিয়ার শরীরে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে। খালেদা জিয়া যে কোনো সময় মৃত্যুঝুঁকিতে পড়তে পারেন। তার শরীরে বিষপ্রয়োগ হয়েছে কি না, সেটা পরীক্ষা করা খুবই প্রয়োজন।

গতকাল মঙ্গলবার এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন জানান, ‘উন্নত চিকিৎসার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেয়ার কাজ শুরু হয়েছে। তাকে প্রথমে লং ডিসটেন্স স্পেশালাইজড এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডন নিয়ে যাওয়া হবে। এরপর সেখানে থেকে তৃতীয় একটি দেশে মাল্টি ডিসিপ্লিনারি মেডিকেল সেন্টারে নেয়া হবে। তিনি আরও জানান, খালেদা জিয়ার শারীরিক সুস্থতার ওপর নির্ভর করে আমরা যাতে অতিদ্রুত তাকে বিদেশে মাল্টি ডিসিপ্লিনারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারি, সেই প্রক্রিয়া শুরু করেছি। তারই অংশ হিসেবে আমরা ‘লং ডিসটেন্স স্পেশালাইজড এয়ার অ্যাম্বুলেন্স’ ভাড়া করার জন্য কাজ শুরু করেছি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। গত সাড়ে চার বছরে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ৪৭৯ দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এ তথ্যও মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসক এজেডএম জাহিদ হোসেন নিশ্চিত করেন।

মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. আল-মামুন গণমাধ্যমকে বলেন, খালেদা জিয়ার জন্য দেশের বাইরে থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আনা হবে। বোর্ডের আরেক সদস্য বলেন, কাতারের কাছ থেকে বিমান আনার চেষ্টা চলছে। এজন্য নানা পর্যায়ে কথাবার্তা চলছে।

বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম আমার সংবাদকে বলেন, ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার একটি প্রক্রিয়া চলমান আছে। সেটি নির্ভর করছে মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তের ওপর। তবে সেই প্রক্রিয়াটা এখন জোরালো হয়েছে। খুব শিগগিরই মেডিকেল বোর্ডের নির্দেশনায় বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য নেয়া হবে।

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের হূদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে। গত জুনে অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ারের করোনারি কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয়। পরে তার হূৎযন্ত্রে বসানো হয় পেসমেকার। এর আগে গত বছরের অক্টোবরে তার লিভার সিরোসিস রোগের চিকিৎসা দিতে ঢাকায় আসেন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত জনস হপকিন্স হাসপাতালের তিন চিকিৎসক। চিকিৎসা শেষে গত ২ জুলাই এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গুলশানের বাসা ফিরোজায় ফেরেন বিএনপি চেয়ারপারসন। সব শেষে গত ৮ জুলাই হঠাৎ প্রেশার ও রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যাওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হন। সেই থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি।

চার বছর আগে সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে মুক্তির পর খালেদা জিয়াকে বিভিন্ন সময় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকতে হয়েছে। গত ছয় বছরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও এভারকেয়ার হাসপাতালে দেড় বছরেরও বেশি সময় ভর্তি থাকতে হয়েছে তাকে। গত তিন বছরে পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে কয়েক দফা অনুমতি চাইলেও শেখ হাসিনা সরকার তা প্রত্যাখ্যান করে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পরদিনই খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করে সরকার।

চিকিৎসকরা জানান, ৭৯ বছর বয়সি খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, হূদরোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, কিডনিসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন। খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে কোকো স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে মালয়েশিয়ায় থাকা অবস্থায় প্রায় এক দশক আগে মারা যান। তারপর থেকে কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সন্তানদের নিয়ে লন্ডনে থাকছেন। সেখানে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সপরিবারে রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন। এর আগে চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি সব শেষ ঢাকায় এসেছিলেন শর্মিলা রহমান সিঁথি। সে সময় তিনি অসুস্থ শাশুড়ির শয্যাপাশে ছিলেন।

এর আগে সরকার খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, ‘বেগম জিয়াকে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে। বিদেশে চিকিৎসার জন্য নেয়া হলে সেটা প্রমাণ হয়ে যাবে। এজন্যই  শেখ হাসিনা সরকার খালেদা জিয়াকে বিদেশে সুচিকিৎসার জন্য যেতে দেয়নি। আজ না হয় কাল এই সত্য (বিষ প্রয়োগের) প্রমাণিত হবেই।’

কারাগারে বন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে আওয়ামী সরকার সুপরিকল্পিতভাবে খাবারের মধ্যে বিষ প্রয়োগের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি একটি কর্মসূচিতে বলেন, জনসমর্থনহীন শাসক গোষ্ঠী প্রতিনিয়ত তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূলের মহাপরিকল্পনায় লিপ্ত। এ ক্ষেত্রে খাবারের মধ্যে বিষ প্রয়োগ থেকে শুরু করে বিচারের নামে প্রহসনের সাজা দেয়া এবং গুম-খুন-গুপ্তহত্যার বিবিধ প্রণালি প্রয়োগ করেছে সরকার। এটা নিশ্চিত যে, বন্দি বেগম খালেদা জিয়াকে আওয়ামী সরকার সুপরিকল্পিতভাবে খাবারের মধ্যে বিষ প্রয়োগের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে দেশবাসী মনে করে।

Link copied!