আমার সংবাদ ডেস্ক
জুন ১৯, ২০২৫, ১২:১৬ এএম
আমার সংবাদ ডেস্ক
জুন ১৯, ২০২৫, ১২:১৬ এএম
চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধ বা শান্তি মেনে নেবে না ইরান : খামেনি
ইরান-ইসরাইল যুদ্ধের ষষ্ঠ দিনে এসে সরাসরি যুদ্ধে জড়াতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। এমনিতেই ইসরাইলের সবচেয়ে বড় সামরিক ও কূটনৈতিক সমর্থনকারী দেশ হিসেবে যুদ্ধে পরোক্ষভাবে সক্রিয় রয়েছে মার্কিন প্রশাসন। তবে, একেবারে সরাসরি প্রকাশ্যে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িয়ে পড়া নিয়ে আলোচনা জোরদার হয়েছে।
গত মঙ্গলবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজ দেশের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ ও ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন। যুদ্ধের সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ গতিপথ এবং তাতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে এই আলোচনা হয় বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ।
ইসরাইলের স্থানীয় সময় রাত ১টায় নেতানিয়াহুর সঙ্গে ট্রাম্পের ফোনালাপ শেষ হয়। নেতানিয়াহু বলেন, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে আমি প্রতিদিনই ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলছি। তার ভাষ্য অনুযায়ী, ইসরাইল একা নয়, যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধে তাদের কৌশলগত সহযোগী হিসেবেই পাশে আছে। মঙ্গলবার ট্রাম্প সাফ জানিয়ে দেন, আমরা এখন ইরানের আকাশপথের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছি। আমি চাই ইরান এখনই নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করুক। তিনি আরও বলেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি কোথায় আছেন তা যুক্তরাষ্ট্র জানে। তবে এখনই তাকে হত্যা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক প্রায় দেড় ঘণ্টা স্থায়ী হয়। তবে বৈঠকে সরাসরি হামলার বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলছে, হামলা ছিল কেবল আলোচনার ‘একটি বিকল্প মাত্র’। ট্রাম্প এখনও আশা করছেন, চাপের মুখে ইরান শান্তিপূর্ণ উপায়ে পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করতে রাজি হবে।
অন্যদিকে, ইরান বা যুক্তরাষ্ট্র কেউই বসে নেই। লোহিত সাগর থেকে পারস্য উপসাগর পর্যন্ত অস্থিরতা বাড়ছে। রয়টার্স ও এপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে অতিরিক্ত যুদ্ধবিমান, রিফুয়েলিং ট্যাংকার ও দুটি বিমানবাহী রণতরী পাঠাচ্ছে। এর মধ্যে একটি হলো ইউএসএস নিমিটজ। এটির ভিয়েতনামে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা বাতিল করে মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপে ৩০টির বেশি রিফুয়েলিং বিমান পাঠিয়েছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত ৪০ হাজার মার্কিন সেনাকে ‘হাই অ্যালার্টে’ অবস্থায় রাখা হয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, ইসরাইলে নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির কারণে জেরুজালেম ও তেল আবিবের মার্কিন কনস্যুলার দপ্তর বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সপ্তাহব্যাপী বন্ধ থাকার ঘোষণা দিয়ে মার্কিন দূতাবাস বলেছে, মার্কিন নাগরিকদের সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে এখনও কোনো পরিকল্পনা নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংসে শুধু ইসরাইলের পক্ষে যথেষ্ট আঘাত ও ক্ষতি করা সম্ভব নয়। বিশেষ করে ফরদো পারমাণবিক স্থাপনায়। কারণ এটি একটি পাহাড়ের নিচে অবস্থিত। সেখানে ইসরাইলি অস্ত্র কার্যকর নাও হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র তাদের বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমান দিয়ে ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের ‘ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনেট্রেটর’ দিয়ে আঘাত হানার কথা ভাবছে।
একজন ইসরাইলি সামরিক কর্মকর্তা বলেছেন, ফরদোর জন্য পরিকল্পনা আছে এবং তা বাস্তবায়নের সক্ষমতাও রয়েছে। তবে বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি। তেহরান স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুদ্ধে জড়ালে তারা মধ্যপ্রাচ্যে থাকা মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে আঘাত হানবে। সূত্রের বরাতে নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান এরই মধ্যে তাদের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছে। প্রথম হামলার লক্ষ্য হতে পারে ইরাকে থাকা মার্কিন ঘাঁটিগুলো। পরবর্তীতে বাহরাইন, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে হামলার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। এছাড়া পারস্য উপসাগরে বিস্ফোরক মাইন বসিয়ে মার্কিন নৌবহরের চলাচল বাধাগ্রস্ত করতে পারে ইরান।
এপি জানিয়েছে, মঙ্গলবার তোলা উপগ্রহচিত্রে দেখা গেছে, বাহরাইনে মার্কিন নৌবাহিনীর ৫ম নৌবহরের ঘাঁটিতে আর কোনো জাহাজ নোঙর করা নেই। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি সংকটকালে ব্যবহূত নিরাপত্তা কৌশল। ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহী গোষ্ঠী যুদ্ধে ফের সক্রিয় হতে পারে। মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এক প্রকার সমঝোতায় পৌঁছালেও ইসরাইলে এখনও তারা ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে যাচ্ছে। সিরিয়া ও ইরাকে ইরানপন্থি গোষ্ঠীগুলো মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা করতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধ বা শান্তি মেনে নেবে না ইরান : খামেনি
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন ইরানকে নিঃশর্তে আত্মসমর্পণ করতে বলছেন, তখন পাল্টা হুঁশিয়ারি দিলেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি।
গতকাল বুধবার এক টেলিভিশন ভাষণে তিনি বলেন, চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধের মতো ইরান আরোপিত শান্তিও কখনও মেনে নেবে না। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
তেহরানে দেয়া ভাষণে খামেনি বলেন, ইরানি জাতি কারো চাপের মুখে কখনোই আত্মসমর্পণ করবে না। যারা ইরান ও তার অতীত ইতিহাস জানেন, তাদের জানা যে, এই জাতি কখনও হুমকির সামনে মাথা নত করে না।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রসঙ্গে আয়াতুল্লাহ খামেনি যে কোনো মার্কিন হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সতর্ক করে বলেছেন, আমেরিকানদের বুঝতে হবে, যে কোনো মার্কিন সামরিক আগ্রাসন নিঃসন্দেহে অপরিবর্তনীয় পরিণতি ডেকে আনবে। ইরানের সঙ্গে দখলদার ইসরাইলের যুদ্ধ নিয়ে আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ওই সময় তিনি ইরান-ইসরাইলের মধ্যে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেন।
এছাড়া এই সংঘাতের দ্রুত অবসান চেয়েছেন তিনি। গতকাল আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গে ফোনে পুতিনের কথা হয়। ওই সময় দুই প্রেসিডেন্টই এই সংঘাত নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে এটি বন্ধের’ ব্যাপারে একমত পোষণ করেন বলে জানিয়েছে রুশ বার্তাসংস্থা তাস নিউজ।
তেহরানে ব্যাপক হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল
ইরানের রাজধানী তেহরানে নতুন করে ব্যাপক হামলা চালাচ্ছে দখলদার ইসরাইল। দখলদারদের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছে। তারা বলেছে, তেহরানে সামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালানো হচ্ছে।
বারজান সাদিক নামে একটি এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে বলা হয়েছে, পূর্ব তেহরানে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এর আগে দখলদার ইসরাইল হুমকি দিয়েছিল, তেহরানে তারা আরও হামলা চালাবে। এর মধ্যেই সেখানে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
ইরানের সুপ্রিম নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি গতকাল টেলিভিশনে ভাষণ দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের হুমকিতে আত্মসমর্পণ করবে না। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র যদি ইসরাইলের হয়ে ইরানে হামলা চালায় তাহলে এর কঠোর পরিণতি হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
ইরান-ইসরাইল সংঘাতের দ্রুত অবসানের আহ্বান পুতিনের
ইরানের সঙ্গে দখলদার ইসরাইলের যুদ্ধ নিয়ে আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ওই সময় তিনি ইরান-ইসরাইলের মধ্যে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেন। এছাড়া এই সংঘাতের দ্রুত অবসান চেয়েছেন তিনি।