আমার সংবাদ ডেস্ক
জুন ১৮, ২০২৫, ০৬:০৬ পিএম
আমার সংবাদ ডেস্ক
জুন ১৮, ২০২৫, ০৬:০৬ পিএম
রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বরে প্রকাশ্য দিবালোকে মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীকে গুলি করে ২২ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় অস্ত্রসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ডিবি বলছে, এই পেশাদার চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার ডাকাতি করে আসছিল। সর্বশেষ মিরপুরের ডাকাতির ঘটনায় ব্যবহৃত মাইক্রোবাসের সূত্র ধরে সংঘবদ্ধ এই ডাকাত দলের সন্ধান মেলে। ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে তারা এর আগে গত ২৪ জানুয়ারি রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে ৫৩ ভরি স্বর্ণ ডাকাতির ঘটনায়ও জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- চক্রের হোতা জলিল মোল্লা, মোস্তাফিজ, পলাশ, দিপু, সোহাগ ও জাফর।
বুধবার (১৮ জুন) বিকেলে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে ডিবির যুগ্ম কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, গত ২৭ মে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মাহমুদ মানি এক্সচেঞ্জের মালিক রাসেল ও তার ভগ্নিপতি জাহিদুল হক চৌধুরী মিরপুর-১১ সি-ব্লকের বাসা থেকে ২১ লাখ টাকা ও বিভিন্ন দেশের মুদ্রা নিয়ে পায়ে হেঁটে মিরপুর-১০ নম্বরের অফিসে যাচ্ছিলেন। শেরে বাংলা স্টেডিয়াম ও ফায়ার সার্ভিসের মাঝামাঝি গলির মুখে পৌঁছালে মোটরসাইকেলে ওঁৎ পেতে থাকা ৭ থেকে ৮ জন মুখোশধারী ডাকাত তাদের গতিরোধ করে।
যুগ্ম কমিশনার আরও জানান, ডাকাতদের একজন পিস্তল ঠেকিয়ে টাকা ভর্তি ব্যাগটি ছিনিয়ে নেয়। বাধা দিলে আরেকজন গুলি ছোড়ে এবং একজন ধারালো চাপাতি দিয়ে জাহিদুলের কোমরে আঘাত করে। গুরুতর আহত অবস্থায় জাহিদুল রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। ডাকাতরা চারটি মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়।
ঘটনার ভিডিও একজন পথচারী মোবাইল ফোনে ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে তা দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। এ ঘটনায় আহত জাহিদুল হক চৌধুরী বাদী হয়ে মিরপুর মডেল থানায় একটি ডাকাতি মামলা দায়ের করেন।
মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম বলেন, গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিবি পুলিশ প্রথমে ডাকাতিতে ব্যবহৃত একটি হায়েস মাইক্রোবাস শনাক্ত করে। মাইক্রোবাসের নম্বরের সূত্র ধরে প্রথমে মালিককে খুঁজে বের করা হয়। পরে তিনি জানান, মাইক্রোবাসটি তার এবং এটি ভাড়া করেছিল চালক জাফর। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গাজীপুরের টঙ্গী এলাকা থেকে জাফরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জাফর ডাকাতির ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা স্বীকার করে। তবে সে ডাকাতির সময় গাড়িতেই বসা ছিল। ডাকাতির ঘটনায় সরাসরি জড়িত একজনের ছবি দেখানো হলে সে তার পরিচয় জানায়। সেই সূত্র ধরেই পরবর্তী সময়ে তথ্য বিশ্লেষণ করে একযোগে ঢাকা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ময়মনসিংহ ও যশোরে অভিযান চালিয়ে ডাকাত দলের মূল পরিকল্পনাকারী জলিল মোল্লাসহ চক্রের আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
নাসিরুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের অধিকাংশের বিরুদ্ধেই দেশের বিভিন্ন থানায় ডাকাতি, হত্যা ও অস্ত্র আইনে একাধিক মামলা রয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে ডাকাতির ৫ লাখ ৩ হাজার টাকা, ১০৬টি বিভিন্ন দেশের মুদ্রা, ২ লাখ ১২ হাজার টাকার জাল নোট, একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি গুলি, একটি চাপাতি এবং তিনটি খেলনা পিস্তল উদ্ধার করা হয়।
তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যের বরাতে মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম বলেন, এই ডাকাত চক্র এর আগেও ভয়াবহ কয়েকটি ঘটনায় জড়িত ছিল। গত ২৪ জানুয়ারি কামরাঙ্গীরচর এলাকায় গুলি করে ৫৩ ভরি স্বর্ণ ছিনতাই এবং ২০২৪ সালের ২০ অক্টোবর ধানমন্ডি সাত মসজিদ রোডে গুলি চালিয়ে ৫২ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনাতেও চক্রের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে আসামিরা স্বীকারোক্তি দিয়েছে।
বাকি অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও লুট হওয়া সম্পদ উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে ডিবি।
রেকি করে সময়-সুযোগ নিশ্চিত হয়ে ডাকাতি
এক প্রশ্নের জবাবে যুগ্ম কমিশনার নাসিরুল ইসলাম বলেন, আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে জায়গাটি রেকি করে। যে ব্যক্তিকে ছিনতাই করা হয়েছিল, সেই ব্যক্তির ব্যাগে কখন টাকা বেশি থাকে এবং কখন কম থাকে, সে বিষয়ে তারা নজর রাখত। পরে সুবিধামতো ঘটনার দিন ব্যাগটি ভর্তি দেখে তারা ডাকাতি করে। এছাড়া ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূরে একটি হায়েস মাইক্রোবাস দাঁড়িয়েছিল। সেখান থেকে ৩-৪ জন নামে এবং পরবর্তী সময়ে ঘটনা শেষে ওই মাইক্রোবাসে তারা উঠে চলে যায়। বাকিরা মোটরসাইকেলে আসে। পরবর্তী সময়ে হায়েস গাড়ির সূত্র ধরেই আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়।
আরএস