Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

সিলেটে বন্যার ভয়াল রূপ, বিমানবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা

মো. মাসুম বিল্লাহ

জুন ১৭, ২০২২, ০৩:৫৫ পিএম


সিলেটে বন্যার ভয়াল রূপ,  বিমানবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জেলা সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। অব্যাহত বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পানিতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে সর্বত্র, পানি ঢুকে পড়েছে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে।

শুক্রবার দুপুর ২টা পর্যন্ত ফ্লাইট ওঠানামা করলেও বিকালে পানি প্রবেশ করায় কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

জানা গেছে, পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। কোম্পানিগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, কানাইঘাট ও জৈন্তাপুরসহ সিলেট নগরীর অধিকাংশ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক হাফিজ আহমদ। তিনি আমার সংবাদকে বলেন, বন্যার পানি বিমানবন্দরের রানওয়ের কাছাকাছি চলে এসেছে। এ ছাড়া বিমানবন্দরের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বন্যার পানিতে আক্রান্ত হয়েছে। বিমানবন্দরের বিমান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিষয়টি জানানো হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করায় সিলেটে বানভাসি মানুষকে উদ্ধারে কাজ শুরু করছে সেনাবাহিনী। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আনোয়ার সাদাত। 

বানভাসি মানুষকে উদ্ধারে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সুনামগঞ্জ ও সিলেটে কাজ শুরু করেছেন। বিদ্যুৎকেন্দ্রে পানি ঢুকে পড়ায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকায় সুনামগঞ্জে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সিলেটেও যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে পড়তে পারে বিদ্যুৎ সরবরাহ। এতে ওই অঞ্চলের মানুষের ভোগান্তি আরও বেড়েছে।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) রাত থেকে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা, বিশ্বনাথ, গোলাপগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়ন নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। পানিতে আটকা পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক উপচে পানি তীব্র বেগে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে এ সড়কে ঝুঁকি নিয়ে সীমিত পরিসরে যান চলাচল করছে।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ জানান, শুক্রবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ১ দশমিক ৮ সেন্টিমিটার এবং সিলেট পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সারি নদীর পানি বিপদসীমার ২৩ সেন্টিমিটার উপরে রয়েছে। পানির উচ্চতা বেড়েছে কুশিয়ারা ও লোভা নদীরও। কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপসীমার ৪০ সেন্টিমিটার উপরে বইছে।

এদিকে এক মাসেরও কম সময়ে পুনরায় ভয়াবহ বন্যার মুখে পড়া বানভাসি মানুষের জন্য তেমন কোনো ত্রাণ তৎপরতা এখনও চোখে পড়ছে না। বন্যার্ত মানুষের মধ্যে হাহাকার শুরু হয়েছে। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আবেদন জানাচ্ছেন।

সিলেট জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম জানান, জেলার প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তাদের জন্য ৪৪৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে বলে জানান তিনি। তবে কী পরিমাণ ত্রাণ বরাদ্দ করা হয়েছে সে সম্পর্কে তিনি কিছু জানাতে পারেননি।

বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সিলেট নগরে ৩১টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে জানিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘প্রাথমিক পর্যায়ে সিলেট মহানগরীতে ৩১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এখনও অনেকেই নিজেদের আসবাবপত্র রেখে আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে চাচ্ছেন না। তবে বন্যাকবলিত সবাইকে আমরা নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়ার চেষ্টা করব।’ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান মেয়র।

ইএ্ফ

Link copied!