Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪,

চবিতে সাংবাদিক হেনস্তা

সাংবাদিকদের কলম বিরতি ও সংবাদ বর্জনের হুঁশিয়ারি

চবি প্রতিনিধি

চবি প্রতিনিধি

ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৩, ০৬:৪৯ পিএম


সাংবাদিকদের কলম বিরতি ও সংবাদ বর্জনের হুঁশিয়ারি

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ছাত্রলীগ কর্মীদের হেনস্তার শিকার হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সদস্য ও দৈনিক সমকাল পত্রিকার প্রতিনিধি মারজান আক্তার। ঘটনার ১৭ দান পেরিয়ে গেলেও দোষী ছাত্রলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়নি।

ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে কলম বিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (চবিসাস)। এসময় সমিতির নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদ বর্জনসহ আরও কঠোর অবস্থানের হুঁশিয়ারি দেন।

রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে এগারোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বঙ্গবন্ধু চত্বরে অবস্থান নেয় সাংবাদিক সমিতির সদস্যরা।

এদিন সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সবধরনের সংবাদ সংগ্রহ ও পরিবেশন থেকে বিরত থাকেন ক্যাম্পাসের সাংবাদিকরা।

একাত্মতা পোষণ করে কর্মসূচিতে অংশ নেয় সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

অবস্থান কর্মসূচিতে সাংবাদিক হেনস্তার ঘটনার সাথে জড়িতদের বিচার আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি করেন উপস্থিত সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ।

এসময় চবিসাসের প্রচার, প্রকাশনা ও দফতর সম্পাদক মোহাম্মদ আজহারের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন চবিসাস সভাপতি মাহবুব এ রহমান, সাধারণ সম্পাদক ইমাম ইমু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইফতেখায়রুল ইসলাম, অর্থ, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি সম্পাদক রোকনুজ্জামান, চবিসাস সদস্য মারজান আক্তার ও যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ফারুক হোসেন।

সাংবাদিক সমিতি সাধারণ সম্পাদক ইমাম ইমু বলেন, এ ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন চাকসুর কার্যক্রম নেই৷ চাকসু না থাকাতে ২৮ হাজার শিক্ষার্থীর মুখপাত্র হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করছে সাংবাদিকরা৷ যখন সাংবাদিকদের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়, তখন মূলত সব শিক্ষার্থীর স্বাধীনতাই কেড়ে নেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, যখন কোনো সাংবাদিক হেনস্তার শিকার হয় তখন অভিযুক্তরা বলে সাংবাদিক জানলে এরকম করতাম না। তার মানে কি সাংবাদিক না হলেই তাকে মারার কিংবা হেনস্তার অধিকার তার আছে? এ থেকে বুঝা যায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের কাছে নিরাপদ না। সাংবাদিক হেনস্তার ঘটনা চবি ক্যাম্পাসে নতুন নয়। কার্যকর শাস্তি না হওয়ায় বারবার ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে৷ আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে এ ঘটনার বিচার দাবি করছি৷ নতুবা পরবর্তীতে প্রশাসনের সব ধরনের সংবাদ বর্জনসহ কঠোর আন্দোলন ডাক দিতে বাধ্য হবে চবিসাস।

সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মাহবুব এ রহমান বলেন,  ঘটরার পর প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কিন্তু, ঘটনার ১৭ দিন পার হলেও বিচার তো দুরের কথা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়নি। বিচারের এমন দীর্ঘসূত্রিতা বিচারহীনতার নামান্তর।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থী কিংবা সাংবাদিকদের নিরাপত্তার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। যারা অভিযুক্ত তাদের সবার পরিচয় স্পষ্ট। প্রশাসন তাদের সবাইকে চিনে৷ তাও এতদিনে বিচার নিশ্চিত করতে না পেরে প্রশাসন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে৷ পূর্বেও এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে৷ প্রশাসন সেসব ঘটনায় কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। যার কারণেই এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।

সাংবাদিক হেনস্তার ঘটনায় প্রশাসনকে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান মাহবুব এ রহমান। তিনি বলেন, এ ঘটনায় দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচার নিশ্চিত না করলে আমরা প্রশাসনিক সবধরনের সংবাদ বর্জনসহ কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।

ছাত্রলীগের হেনস্তার শিকার সাংবাদিক মারজান আক্তার বলেন, ছাত্রলীগের যেসব কর্মী এই ঘটনার সাথে জড়িত তারা যখন ক্যাম্পাসে নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়ায় তখন সেটা আমার জন্য খুব কষ্টকর হয়। এটা প্রশাসনের জন্যেও দুঃখজনক। আমি চাই জড়িত সবার দ্রুত বিচার নিশ্চিত হোক।

অবস্থান কর্মসূচি শেষে চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার ও প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বরাবর স্মারকলিপি দেন চবি সাংবাদিক সমিতির নেতৃবৃন্দ।

প্রসঙ্গত, গত ৯ ফেব্রুয়ারি পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে চবিসাসের সদস্য ও দৈনিক সমকাল পত্রিকার ক্যাম্পাস প্রতিনিধি মারজান আক্তারকে হেনস্তা করে ছাত্রলীগের কর্মীরা। এসময় তার ব্যাগ ও মোবাইল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। মারজানের নিরাপত্তা নিয়ে ছাত্রলীগের কর্মীরা তাকে হুমকি দেয়। ঘটনার তিনদিন পরে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রশাসন। এরপর, কেটে যায় ১৭ দিন। জড়িত ছাত্রলীগ কর্মীদের বিচারের আওতায় আনতে পারেনি খোদ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এ ঘটনার দ্রুত বিচারের দাবিতে গত ১২ এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি চবি সাংবাদিক সমিতি দুই দফায় আল্টিমেটাম দিলেও তদন্ত কমিটি এখন পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদনও জমা দিতে পারেনি।

এ বিষয়ে প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, আমরা সবসময় সাংবাদিকদের বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখি। এ ঘটনার পরদিনই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তদন্ত কমিটি কাজ করছে। প্রতিবেদন হাতে পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেন, এ বিষয়ে আমি আগেও প্রক্টরিয়াল বডিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। এরপরও আমি কথা বলবো প্রক্টরের সঙ্গে। যাতে দ্রুত এর বিচার হয়।

কেএস 

Link copied!