Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

বাউফলে আ.লীগের ৩ গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত অর্ধশত

বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

মার্চ ১৭, ২০২৩, ০২:০৫ পিএম


বাউফলে আ.লীগের ৩ গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত অর্ধশত

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে আজ শুক্রবার পটুয়াখালীর বাউফলে উপজেলা আওয়ামী লীগের তিনটি পক্ষের একই দিনে একই সময়ে কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ ২০ রাউণ্ড ফাঁকা গুলি ছুড়েছে। বর্তমানে উপজেলা সদরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে উপজেলার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব হাওলাদার, বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল মামুন ও আরও পাঁচ পুলিশ সদস্য, পথচারীসহ কমপক্ষে অর্ধশত মানুষ আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে আবদুল মোতালেবকে গুরুতর আহত অবস্থায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব হাওলাদারের সমর্থকদের মধ্যে বেলা সোয়া ১১ টা থেকে পৌনে ১২ টা পর্যন্ত ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

এর আগে বাউফলে উপজেলা আওয়ামী লীগের তিনটি পক্ষ একই দিনে একই সময়ে কর্মসূচির ডাক দেয়। এর মধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দুটি পক্ষের কর্মসূচি উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে (জনতা ভবন) এবং আরেকটি মেয়র পক্ষের কর্মসূচি বাউফল প্রেসক্লাব সড়কের পাশে উপজেলা আওয়ামী লীগ আরেকাংশের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।

শুক্রবার (১৭ মার্চ) সকাল থেকে দেখা গেছে,আওয়ামী লীগের তিনটি পক্ষের একই দিনে একই সময়ে কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সকাল নয়টা থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে জড়ো হতে দেখা যায়। বাউফল পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. জিয়াউল হক ওরফে জুয়েলের পক্ষের নেতা-কর্মীরা বাউফল সরকারি মাঠে, সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের পক্ষের নেতা-কর্মীরা উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের (জনতা ভবন) সামনে জড়ো হয় ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদারের পক্ষের নেতা-কর্মীরা বাউফল সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে জড়ো হয়।

আবদুল মোতালেবের নেতৃত্বে বেলা ১১ টার দিকে বাউফল সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠ থেকে আনন্দ র‌্যালীটি বের হয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের (জনতা ভবন) দিকে যাচ্ছিলেন। সোয়া ১১ টার দিকে উপজেলা পরিষদের সামনে পৌঁছালে সংঘর্ষ এড়াতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল আমিনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল এতে বাধা দেন। তখন পুলিশ ও আবদুল মোতালেব হাওলাদারের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়। আর অপর পাশেই লাঠিসোঁটা ও বগিদা নিয়ে অবস্থান করছিলেন আ স ম ফিরোজের কর্মী-সমর্থকেরা। আ স ম ফিরোজ একটি গাড়ির মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিলেন। দীর্ঘ সময় ধরে পুলিশের সঙ্গে আবদুল মোতালেবের কথা-কাটাকাটি হয়ি এবং তখন স্লোগান দিতে থাকে তাঁর নেতা-কর্মীরা।

উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেবকে পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলতে শোনা যায় তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে যাবেন এটাই স্বাভাবিক। তখনও দুই পক্ষের কর্মী-সমর্থকেরাই দলীয় ও নিজ নিজ নেতার নামে স্লোগান দিতে থাকে। একপর্যায়ে পুলিশের বাধা উপপেক্ষা করে দলীয় কার্যালয়ের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ লাঠিচার্জ ও কয়েক রাউণ্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা চালায়। ওই সময় আবদুল মোতালেবের ওপর হামলা চালায় সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের ক্যাডার বাহিনী। তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করা হয়। তাঁকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে রাব্বি (৩০), মো. হাসান (২৬), মো. হাসিব (৩২) মো. খোকা মিয়াসহ (৫০) আবদুল মোতালেবের কয়েক কর্মী আহত হন। তখন আবদুল মোতালেবের সমর্থকেরা পুলিশকে লক্ষ করে ইটপাটকেল ছোড়ে। এতে ওসি আল মামুন,উপপরিদর্শক (এসআই) এমএ হাসান,সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. হুমায়ন কবির ও মো. শাহিন এবং কনষ্টেবল মো. আবু রাহাত ও মো. রবিউল,পথচারীসহ কমপক্ষে অর্ধশত মানুষ আহত হয়েছেন।

আধা ঘন্টারও বেশি সময় ধরে চলে ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো শহরে। যানবাহন চলাচল ও দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি থানার মূল ফটকও আটকে দেওয়া হয়। আহত আবদুল মোতালেবকে বরিশাল নিয়ে যাওয়ার পর তাঁর নেতাকর্মীরা চলে যায়। তখনও সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ তাঁর কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে উপজেলা পরিষদের মূল ফটকের পূর্ব পাশে অবস্থান নিয়েছিলেন। তাঁরা র‌্যালী নিয়ে বাউফল সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দিকে যেত চাইলে তাঁদেরকেও বাধা দেয় পুলিশ।

পরে দুপুর ১২ টার দিকে মেয়র জিয়াউলের নেতৃত্বে মিছিল সহকারে একটি বিশাল র‌্যালী নিয়ে উপজেলা চত্বরে ঢোকে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে ফের মিছিল সহকারে চলে যান জিয়াউল ও তাঁর নেতা-কর্মীরা। এরপরে সোয়া ১২ টার দিকে পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের উপস্তিতিতে সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের নেতৃত্বে র‌্যালীটি বাউফল শেখ রাসেল মিনি ষ্টেডিয়ামে গিয়ে শেষ করে।

এ ঘটনায় বাউফল উপজেলা সদরে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

বাউফল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা এএসএম সায়েম বলেন, চেয়ারম্যান সারের (আবদুল মোতালেব) পান হাতের তৃতীয় আঙুলের (রিং ফিঙার) গোড়ালি কেটে চামড়ার সঙ্গে ঝুলে আছে। তাঁর বুকের ডান পাশে ও ডান হাতের কনুইয়ের ওপরের অংশে কোপ রয়েছে। এছাড়াও পা ও মাথায় আঘাত রয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন,‘তিন পক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ১৪৪ ধারা জারি করা উচিৎ ছিল। কিন্তু জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন হওয়ায় তা না করে তাঁরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছেন।’

ওসি আল মামুন বলেন,‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ২০ রাউণ্ড ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়েছে। ইটপাটকেল নিক্ষেপে তিনিসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান সাহেব নিজ দলীয় প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হয়েছেন। বর্তমানে পরিবেশ শান্ত রয়েছে। ’

আরএস

Link copied!